গত চার মাস যাবৎ পানিবন্দি হয়ে দুর্বিসহ জীবনযাপন করছে ভবদহ অঞ্চলের ৮টি ইউনিয়নের মানুষ। তারা পানি সরানোর জন্য এখন মরিয়া হয়ে উঠেছে, তাই সরকারের ওপর ভরসা করে নিজেরা হাত গুটিয়ে বসে থাকতে নারাজ তারা। আসন্ন বোরো চাষাবাদের প্রস্তুতির জন্য অনেক কৃষক ইতিমধ্যেই বীজতলা তৈরিতে নেমে পড়েছে। তবে এখানে বীজতলার জমিতে এখনও কোমর পানি রয়েছে। অধিকাংশ কৃষকের ঘরে নেই খোরাকি ধান। তাদের আশঙ্কা সামনের মৌসুমে বোরো চাষ করতে না পারলে হয়ত অনাহারেই কাটাতে হবে আগামীতে।
এছাড়া মাছের ঘের মালিকেরাও পড়েছে মহা বিপাকে। গত বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার দরুন তলিয়ে গেছে অনেক ঘেরের বেড়ী বাঁধ, লাখ লাখ টাকার মাছ বের হয়ে গেছে। গত বছরও তারা ঘের শুকাতে না পারায় অনেকে মাছ ধরতে পারেনি। তার মধ্যে এ বছরের জলাবদ্ধতায় হতাশা ভর করেছে তাদের। ঘের মালিকেরা লাখ লাখ টাকা দেনা হয়ে পড়েছেন। এমনই এক অবস্থার মধ্যে তারা স্বেচ্ছাশ্রমে গত ২৩ নভেম্বর থেকে পানি নিষ্কাশনের জন্য আমডাঙ্গা খাল সংস্কার কাজে নেমে পড়েন। ইতোমধ্যে তারা খালের মধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অপরিকল্পিত ভাবে বসানো ই্ট সিমেন্টর ব্লক অপসারণ করেছে। যার ফলে পানির প্রবাহ বেড়ে গেছে। জলাবদ্ধ এলাকা সুন্দলী ইউপি চেয়ারম্যান বিকাশ রায় কপিল জানান, খাল সংস্কার করার পর পানি কমতে শুরু করেছে। এ ভাবে পানি নেমে গেলে এ বছর বোরো চাষাবাদ করা হয়তো সম্ভাব হবে।
এ দিকে পানি প্রবাহ আরো বাড়ানোর জন্য খালের মধ্যে ভেঙ্গে পড়া মাটি ও আবর্জনা অপসারণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ লক্ষে খাল সংস্কারে নওয়াপাড়া ইনস্টিটিউট কার্যালয়ে জরুরী সভা ডাকা হয়। উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও ভবদহ পানি নিষ্কাশন আন্দোলন কমিটির আহবায়ক এনামুল হক বাবুলের সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের গৃহীত পদক্ষেপের সমালোচনা করে ঘের মালিক আক্তার হোসেন বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড পাম্প লাগিয়ে পানি নিষ্কাশনের চেষ্টা ব্যর্থ হবে। ভবদহের একটি ভেন্ট দিয়ে যে পানি প্রবাহ সৃষ্টি হয় ওই পরিমান প্রবাহ সৃষ্টি করতে অন্তত ৮০টি পাম্প লাগাতে হবে। বিল কপালিয়ার জনগন একটি বিলের পানি নিষ্কশনের জন্য দু’টি পাম্প ও বেশ কয়েটি স্যালো পাম্প বসিয়েছে। কিন্তু এক মাসের মধ্যে তারা এক ফুট পানিও নামাতে পারেনি। আমাদের ২৭টি বিলের পানি পাম্প দিয়ে নিষ্কাশন সম্ভাব হবে না। তার মতে এখন আশু পানি নিষ্কাশনের পথ হলো আমডাঙ্গা খাল প্রশস্ত ও গভীর করা।
সভায় অন্যান্যর মধ্যে বক্তব্য রাখেন, নেহালপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান, কুলটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শেখর চন্দ্র রায়, উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি আব্দুর রউফ মোল্যা, সুন্দলী ইউপি চেয়ারম্যান বিকাশ রায় কপিল, চলিশিয়া ইউপি চেয়ারম্যান নাদির হোসেন মোল্যা, সাবেক চেয়ারম্যান বিকাশ চন্দ্র, উপজেলা আ,লীগ নেতা সানা আব্দুল মান্নান, মুক্তিযোদ্ধা অধির কুমার পাড়ে, শ্রমিকলীগ নেতা নজরুল ইলাম, কাউন্সিলর জাকির হোসেন, বিএনপি নেতা মশিয়ার রহমান মশি, ফিরোজ হোসেন প্রমুখ।
সভায় সিদ্ধান্ত মোতাবেক, আমডাঙ্গা খাল সংস্কার কাজের তদারকি, ভবদহ অঞ্চলে পানি প্রবাহ বাঁধা অপসারণের জন্য তদারকি কমিটি ও সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ তদারকি কমিটি নামে তিনটি উপ-কমিটি গঠন করা হয়। স্বেচ্ছাশ্রমে এবার আমডাঙ্গা খাল সংস্কার কাজ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
খুলনা গেজেট/ এ হোসেন