অসহায় আত্মসমর্পন যাকে বলে, মিরপুরে আজ তেমন কিছুরই সাক্ষী থাকল হাজারো দর্শক। বোলারদের ধারহীন বোলিংয়ের পর সিরিজ বাঁচানোর ম্যাচে জিততে হলে রেকর্ড ৩২৭ রান তাড়া করতে হতো বাংলাদেশকে। তবে বড় টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে সবকটি উইকেট হারিয়ে সর্বসাকুল্যে রান এলো ১৯৪। অন্যদিকে, ১৩২ রানের বিশাল জয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ নিশ্চিত করল বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড।
ব্যাটারদের ব্যর্থতায় ঘরের মাঠে ‘ইংলিশ’ পরীক্ষায় আবারও ফেল বাংলাদেশ। ২০১৬ সালের পর আবারও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের সিরিজ হার। তা ছাড়া প্রায় সাড়ে ৬ বছর পর ঘরের মাঠে সিরিজ হারের স্বাদ পেল বাংলাদেশ।
৩২৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশের জন্য দুই স্লিপ রেখে বোলিংয়ে আসেন কারান। সিঙ্গেল নিয়ে লিটনকে স্ট্রাইক দিলে চতুর্থ বলে আসে ইংল্যান্ডের প্রথম ব্রেক-থ্রু। ড্রাইভ করতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে রয়ের হাতে বল তুলে দেন লিটন। ০ রানে তিনি ফিরলে পরের বলে শান্তকেও বোকা বানান কারান।
দারুণ এক আউটসুইংগারে এই ব্যাটারকে উইকেটের পেছনে বাটলারের তালুবন্দি করেন এই অলরাউন্ডার। হ্যাটট্রিক বলে মুশফিক ক্রিজে এসে ৩ রান নিলেও পরের ওভারে এসে মুশফিককেও বাটলারের হাতে তালুবন্দি করান কারান।
৯ রানে ৩ ব্যাটারকে হারিয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়ে বাংলাদেশ। তামিমকে সঙ্গ দিতে নামা সাকিব দেখে শুনে খেলতে শুরু করেন। দুজন মিলে দলের হাল ধরেন ও স্কোরবোর্ডে এনে দেন ৫০ রান। কিন্তু ইংলিশদের নিয়ন্ত্রিত বোলিং চাপে ফেলে তামিমকে। ২৪ বলে ৩৫ রানে থাকা বাংলাদেশ দলপতি চাপের মাঝে খেলেন একাধিক ডট বল।
জয়ের জন্য রান রেট উঠে যায় ৮ রান প্রতি ওভার। তখন দলকে চাপমুক্ত করার চেষ্টায় হাত খুলতে শুরু করেন সাকিব। তামিমও এই পথে হাঁটা দিয়ে হন ব্যর্থ। মঈনকে ইনসাইড আউট শট মারতে গিয়ে ভিন্সের তালুবন্দি হন তিনি, ৬৫ বলে ৩৫ রানে ফেরেন প্যাভিলিয়নে।
তাদের মধ্যে জুটি ছিল ১১২ বলে ৭৯ রানের। সঙ্গী হারিয়ে সাকিবও উইকেটে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ৫৯ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিলেও দলীয় রান ১০০ পার হওয়ার পরই রশিদের বলে মঈনের হাতে ধরা পড়েন। ৬৯ বলে ৫৮ রানে থামে সাকিবের ইনিংস। এরপর আফিফ ও মাহমুদউল্লাহ মিলে চেষ্টা চালিয়ে দলকে নেন দেড়শো’র ঘরে।
তাতে অবশ্য বেশি লাভ হয়নি বাংলাদেশের। রশিদেকে বাউন্ডারি হাঁকানোর পরের বলেই ফ্লাইটেড ডেলিভারিতে বাটলারের হাতে ধরা পড়েন আফিফ। ৩৩ বলে ২৩ রানে তিনি ফিরলে রশিদের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মাহমুদউল্লাহও। ৪৯ বলে ৩২ রানে থাকাকালীন স্লিপে ক্যাচ আউট হন এই ব্যাটার।
মাহমুদউল্লাহ’র বিদায়ে নিশ্চিত হয়ে যায় বাংলাদেশের পরাজয়। তবে নীচের দিকে মেহেদি হাসান মিরাজ, তাসকিন-তাইজুলরা ছোট ছোট পুঁজি নিয়ে শুধু পরাজয়ের ব্যবধানই কমিয়েছেন। ৪৫তম ওভারে কারানের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ইংল্যান্ডের জয় নিশ্চিত করেন মুস্তাফিজ। ২৯ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন কারান, ৪টি উইকেট নেন রশিদও। ১৩২ রানে জিতে সিরিজ নিশ্চিত করে ইংল্যান্ড।
এর আগে জেসন রয়ের সেঞ্চুরি ও জস বাটলারের ফিফটিতে ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ৩২৬ রান করে ইংল্যান্ড। বাংলাদেশের মাটিতে এটিই তাদের দলীয় সর্বোচ্চ। ১২৪ বলে ১৩২ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন জেসন রয়। বাটলারের ব্যাট থেকে আসে ৬৪ বলে ৭৬ রানের ঝকঝকে ইনিংস। মঈন আলী ৩৫ বলে ৪২ এবং স্যাম কারেন ১৯ বলে ৩৩ রান করেন।
বাংলাদেশের সব বোলারই ছিলেন খরুচে। তাইজুল ও সাকিব ১০ ওভার হাত ঘুরিয়ে যথাক্রমে ৫৮ ও ৬৪ রান দিয়ে একটি করে উইকেট নিয়েছেন। মিরাজ ১০ ওভারে ৭৩ রান দিয়ে নিয়েছেন দুই উইকেট। মুস্তাফিজ তার ১০ ওভারে ৬৩ রান দিয়ে উইকেট শূন্য থাকেন। সেরা বোলিং করেছেন তাসকিন। তার ১০ ওভারে ৬৬ রান আসলেও তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট নিয়েছেন তিনি।