হেফাজতে ইসলামের ডাকা হরতালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। হরতালে আজ সকাল থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দফায় দফায় সংঘর্ষ চলছে। পুলিশের সাথে সংঘর্ষে দুইজন নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিরা হলেন সরাইল উপজেলার সৈয়দটোলার আলামিন এবং খৈয়াসার এলাকার অজ্ঞাত এক ব্যক্তি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক শওকত হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে পুলিশ ও বিজিবির সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ১৩ জন। শনিবার (২৭ মার্চ) সন্ধ্যা ৬টার দিকে সদর উপজেলার নন্দনপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এদিকে, দুপুর ১২টার দিকে হরতাল সমর্থকরা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়, জেলা পরিষদ ভবন ও স্থানীয় প্রেসক্লাবে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। প্রেসক্লাবে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে সাংবাদিকদের অবরুদ্ধ করে রেখেছে।
এ ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন জামি গুরুতর আহত হয়েছেন। তাঁর মাথায় ছয়টি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জাবেদ রহিম বিজন।
হরতালের সমর্থনে সকাল ৮টার দিকে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা শহরে মিছিল বের করেন। মিছিলটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাব চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। এরপর সেখানে অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মাওলানা সাজিদুর রহমান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদরাসার প্রিন্সিপাল মুফতি মুকারকউল্লাহ ও শিক্ষা সচিব শামছুল হক।
সকাল থেকেই হেফাজতকর্মীরা শহরের প্রধান সড়কে (টিএ রোড) বৈদ্যুতিক খুঁটি ফেলে এবং আগুন জ্বালিয়ে যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন। এ ছাড়া হরতালের কারণে শহরের সকল দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। জেলা সদর থেকে দূরপাল্লার কোনো বাসও ছেড়ে যায়নি।
এদিকে আন্তঃনগর সোনারবাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনে হেফাজতের নেতাকর্মীদের ইট-পাটকেল ছোড়ার ঘটনায় ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম ও সিলেটের রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। রোববার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সাময়িক ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এর ফলে বিভিন্ন স্টেশনে ট্রেন আটকা পড়েছে।
আখাউড়া রেলওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল করিম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সকালে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী আন্তঃনগর সোনারবাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনটি তালশহর এলাকায় আসার পর হরতাল সমর্থনকারীরা ইট-পাটকেল ছোড়ে।
এর ফলে নিরাপত্তাজনিত কারণে সাময়িক ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। সোনারবাংলা ট্রেনটি ভৈরব রেলওয়ে জংশন স্টেশনে নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ঢাকাগামী আন্তঃনগর উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেনটি আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশনে আটকা পড়েছে।
এর আগে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে হেফাজতে ইসলাম ও স্থানীয় বাসিন্দারা শনিবার (২৭ মার্চ) বিকেলে সদর উপজেলার নন্দনপুর বাজারে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এ সময় মিছিলকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও বিজিবি সদস্যদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
এক পর্যায়ে মিছিলকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও বিজিবি সদস্যদের সংঘর্ষ বাধে। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাদের উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তিনজনকে মৃত ঘোষণা করে। এর কিছুক্ষণ পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও দুইজনের মৃত্যু হয়।
নিহতদের ব্যাপারে পুলিশের দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা রানা নুরুস শামস ওই পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন বলে সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন।
খুলনা গেজেট/এনএম/ টি আই