ভয়াল সিরিজ বোমা হামলার কলঙ্কময় দিন আজ। এইদিনে দেশব্যাপী একযোগে সিরিজ বোমা হামলা চালানো হয়। এদিনে জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) একযোগে ৬৩ জেলার ৪৩৪ স্থানে বোমার বিম্ফোরণ ঘটায়। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট মুন্সিগঞ্জ জেলা ছাড়া দেশের ৬৩ জেলায় ৪৩৪টি স্থানে বোমার বিষ্ফোরণ ঘটায়। ওইদিনের ঘটনায় দু’জন নিহত এবং অর্ধশত আহত হন। দেশে এরপর শুরু হয় জেএমবির আত্মঘাতি বোমা হামলা।
এদিকে, দিবসটি পালনে খুলনা মহানগর ও জেলা আ’লীগ সীমিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সোমবার (১৭ আগস্ট) বিকাল ৫টায় দলীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য সকল নেতাকর্মীকে যথাসময়ে উপস্থিত থাকার জন্য বিশেষ আহবান জানিয়েছেন নগর আ’লীগের সভাপতি সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, জেলা আ’লীগ সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশীদ, নগর আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক এমডিএ বাবুল রানা, জেলার সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. সুজিত কুমার অধিকারী।
সূত্রমতে, খুলনায় বোমা বিস্ফোরণ ঘটনার স্থানগুলোর মধ্যে ছিল- খুলনা মুখ্য মহানগর হাকিমের এজলাসের সামনে, এজি পেনশন অফিসের পেছনে, ডাকবাংলো জামে মসজিদের পাশে, রূপসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে, দৌলতপুরের বিএল কলেজের পূর্ব পাশে ও সরকারি শিশু সদন এলাকায়, সোনাডাঙ্গা কেডিএ নিউ মার্কেটের সিঁড়িঘরে ও লতিফ ফিলিং স্টেশনের পাশে, বটিয়াঘাটা উপজেলার খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পাশে এবং বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রাবাসের পাশে। এ ১০টি স্থানে একযোগে পরিকল্পিতভাবে বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এঘটনায় দুই শিশুসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে বোমার স্প্রিন্টার জেএমবি’র লিফলেট উদ্ধার করে। এসব ঘটনায় খুলনায় ছয়টি মামলা হয়েছিল। এরমধ্যে সদর থানায় দু’টি, দৌলতপুর থানায় দু’টি, খানজাহান আলী থানায় একটি ও বটিয়াঘাটা থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।
খুলনা সদর থানায় দায়েরকৃত মামলার আসামীরা শায়খ আব্দুর রহমান, সিদ্দিকুর রহমান ওরফে বাংলাভাই, শহীদুল্লাহ ওরফে লোকমান, মাহবুবুর রহমান ওরফে লিটন ওরফে পলাশ, আসাদুল ইসলাম ওরফে আসাদুল ওরফে আরিফ ওরফে আসাদ, মেহেদী হাসান ওরফে তানভীর, খালিদ হাসান ওরফে মন্টু, হাফেজ মাহমুদ ওরফে হাসান ওরফে সুমন, সাইফুল ইসলাম। এদের মধ্যে শায়খ আব্দুর রহমান ও সিদ্দিকুর রহমান ওরফে বাংলা ভাইকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়।
অন্যদিকে, পরবর্তী সময়ে কয়েকটি ধারাবাহিক বোমা হামলায় বিচারক ও আইনজীবীসহ ৩০জন নিহত হন। আহত হন চার শতাধিক। ওইবছরের ৩ অক্টোবরে চট্টগ্রাম, চাঁদপুর এবং লক্ষীপুরের আদালতে জঙ্গিরা বোমা হামলা চালায়। এতে তিনজন নিহত এবং বিচারকসহ কমপক্ষে ৫০ জন আহত হন।
এর কয়েকদিন পর সিলেটে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক বিপ্লব গোস্বামীর ওপর বোমা হামলার ঘটনায় তিনি এবং তার গাড়িচালক আহত হন। ১৪ নভেম্বর ঝালকাঠিতে বিচারক বহনকারী গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালায় আত্মঘাতি জঙ্গিরা। এতে নিহত হন ঝালকাঠি জেলা জজ আদালতের বিচারক জগন্নাথ পাড়ে এবং সোহেল আহম্মদ। এই হামলায় আহত হন অনেক মানুষ।
সবচেয়ে বড় জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে ২৯ নভেম্বর গাজীপুর বার সমিতির লাইব্রেরি এবং চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে। গাজীপুর বার লাইব্রেরিতে আইনজীবীর পোশাকে প্রবেশ করে আত্মঘাতি এক জঙ্গী বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এই হামলায় আইজনজীবীসহ ১০জন নিহত হন। নিহত হয় আত্মঘাতি হামলাকারী জঙ্গীও।
একইদিন চট্টগ্রাম আদালত চত্বরে জেএমবি’র আত্মঘাতি জঙ্গীরা বিষ্ফোরণ ঘটায়। সেখানে রাজিব বড়ুয়া নামের এক পুলিশ কনস্টেবল এবং একজন সাধারণ মানুষ নিহত হন। পুলিশসহ আহত হন প্রায় অর্ধশত। ১ ডিসেম্বর গাজীপুর ডিসি অফিসের গেটে আবারো বোমা বিষ্ফোরণের ঘটনা ঘটে। সেখানে নিহত হন গাজীপুরের কৃষি কর্মকর্তা আবুল কাশেম। এই ঘটনায় কমপক্ষে ৪০জন আহত হয়। ৮ ডিসেম্বর নেত্রকোনায় ভয়াবহ বিষ্ফোরণের ঘটনা ঘটে। নেত্রকোনা শহরের বড়পুকুর পাড় উদীচী শিল্প গোষ্ঠীর অফিসের সামনে বোমার বিষ্ফোরণ ঘটায় আত্মঘাতি জঙ্গি দল। সেখানে স্থানীয় উদীচীর দু’নেতাসহ ৮জন নিহত হন। আহত হন শতাধিক।
১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় ঢাকা মহানগর ছাড়া সারাদেশে দায়ের করা হয় ১৩৮টি মামলা। হামলার ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে এক হাজার ৪০০জন গ্রেপ্তার হয়। পরবর্তীতে যাচাই-বাছাই করে ৯৮১জনকে বিভিন্ন মামলায় আসামী করা হয়। এছাড়া, রাজধানীর ৩৩টি স্পটে বোমা হামলার ঘটনায় ১৮টি মামলা দায়ের হয়। এই ১৮টি মামলার মধ্যে ৫টি মামলার বোমার বাহককে এখনও খুঁজে পায়নি পুলিশ।
খুলনা গেজেট/এআইএন/এমএম