খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  পাকিস্তানে যাত্রীবাহী গাড়িতে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ৪৫
  মার্কিন শ্রম প্রতিনিধি দল ঢাকা আসছে আজ

কালো টাকা সাদা করলে কর ১৫%, বৈধ আয়ে সর্বোচ্চ ৩০%

গেজেট ডেস্ক

রাজধানীর গুলশান-বনানীসহ অভিজাত এলাকায় ফ্ল্যাট কিনতে গেলে প্রতি বর্গফুটের দাম পড়ছে ২০-২৫ হাজার টাকা। ভবনের অবস্থান ও নান্দনিকতার ওপর ভিত্তি করে এর চেয়েও বেশি দাম দিতে হয়। সেক্ষেত্রে দুই হাজার বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাটের মূল্য গিয়ে দাঁড়াচ্ছে ৪ থেকে ৬ কোটি টাকায়। অথচ নিবন্ধনে অভিজাত এসব ফ্ল্যাটের মূল্য দেখানো হচ্ছে কোটি টাকারও কম। আবার দেশের বিদ্যমান বেতন কাঠামো অনুযায়ী কোনো সরকারি কর্মকর্তারই এসব এলাকায় ফ্ল্যাট কেনার সামর্থ্য থাকার কথা নয়। যদিও বাস্তবতা ভিন্ন। অভিজাত এলাকাগুলোয় প্লট বা ফ্ল্যাটের প্রধান ক্রেতাই এখন সরকারি কর্মকর্তারা।

গুলশানে একদিনেই চারটি ফ্ল্যাট কিনেছিলেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবার। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তথ্য বলছে, বেনজীরের কেনা ৯ হাজার ১৯২ বর্গফুট আয়তনের ফ্ল্যাট চারটির দাম দেখানো হয়েছে মাত্র ২ কোটি ১৯ লাখ টাকা। অথচ অভিজাত ওই ফ্ল্যাটের বাজার মূল্য ২৫ কোটি টাকারও বেশি। আর সেই পুরো টাকাই নগদে পরিশোধ করা হয়েছিল। বেনজীরের মতো পুলিশের আরো অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাই অপ্রদর্শিত অর্থে অভিজাত এলাকায় প্লট-ফ্ল্যাট কিনছেন। সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ীসহ ধনিক শ্রেণীর পরিস্থিতিও একই।

রাজনৈতিক নেতা, সরকারি কর্মকর্তা ছাড়াও দেশের উচ্চবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্ত শ্রেণীর আয়কর রিটার্নে সম্পদের প্রকৃত মূল্যের পাশাপাশি আয়ের তথ্য গোপন করা হচ্ছে। অপ্রদর্শিত বা অবৈধভাবে উপার্জিত কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রেখে আজ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছে সরকার। আগামী অর্থবছর কালো টাকা সাদা করতে সরকারকে কর দিতে হবে মাত্র ১৫ শতাংশ। যদিও প্রদর্শিত বা বৈধ আয়ের ওপর কর পরিশোধ করতে হবে তার দ্বিগুণ। নতুন বাজেটে ব্যক্তি শ্রেণীর সর্বোচ্চ করসীমা ২৫ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশে উন্নীতের প্রস্তাব করা হচ্ছে। অর্থাৎ বৈধ আয়ের ওপর করাঘাত আরো বাড়ল।

দেশে দুই বছরের বেশি সময় ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। টানা ২৪ মাস ধরে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ৯ শতাংশের বেশি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির চাপে পিষ্ট সাধারণ মানুষ। এ অবস্থায় ব্যক্তি শ্রেণীর করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানোর প্রত্যাশা ছিল। যদিও বাজেটে এ ধরনের কোনো ঘোষণা থাকছে না। বিদ্যমান সাড়ে ৩ লাখ টাকাই বহাল রাখা হচ্ছে করমুক্ত আয়ের সীমা। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ব্যক্তি শ্রেণীর আয়কর পরিশোধের ধাপ ছিল ছয়টি। আগামী অর্থবছরে সাতটি ধাপের প্রস্তাব করা হচ্ছে।

অন্যদিকে কালো টাকা সাদা করার বিধান আবারো সংযোজনের প্রস্তাব করা হচ্ছে। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এ বিষয়ে রাখা বিধানে উল্লেখ রয়েছে, ‘দেশের প্রচলিত আইনে যা-ই থাকুক না কেন, কোনো করদাতা স্থাবর সম্পত্তি যেমন ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট ও ভূমির জন্য নির্দিষ্ট করহার এবং নগদসহ অন্যান্য পরিসম্পদের ওপর ১৫ শতাংশ কর পরিশোধ করলে কোনো কর্তৃপক্ষ কোনো প্রকারের প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারবে না।’

সরকার এ সুযোগ দিলে বৈধ করদাতারা নিরুৎসাহিত হবেন বলে মনে করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ। তিনি বলেন, ‘করদাতারা এতে ক্ষুব্ধ হবেন। কারণ, তারা ৩০ শতাংশ দেবেন আর অপ্রদর্শিত আয়কারীরা দেবেন ১৫ শতাংশ। এটা অন্যায্যতা। এতে করদাতারা নিরুৎসাহিত হবেন। কেননা কর দিলে তাদেরকে অডিটের আওতায় আনা হয়, হাজারো প্রশ্ন করা হয়। অথচ অপ্রদর্শিতদের ক্ষেত্রে কোনো প্রশ্ন থাকবে না! এটি হতে পারে না।’

সমাজে কালো টাকার দৌরাত্ম্য বেড়ে যাওয়ায় অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতির আকারও দ্রুত বড় হচ্ছে। এ কারণে দেশের ব্যাংকগুলো থেকে নগদ টাকা তোলার চাপ বেড়েই চলছে। চাপ সামলাতে প্রতিনিয়ত ইস্যুকৃত নোটের পরিমাণ বাড়িয়ে চলছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত এপ্রিলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ইস্যুকৃত নোটের স্থিতি ছিল ৩ লাখ ৫ হাজার ১৯৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকারও বেশি ব্যাংকের বাইরে চলে গেছে। যদিও উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কথা বলে অর্থবছরের শুরুতে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছিল। ঘোষিত মুদ্রানীতির প্রধান লক্ষ্যই ছিল বাজারে অর্থের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ। কিন্তু ঘুস, অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে উপার্জিত কালো টাকার আধিক্যের কারণে নগদ টাকার চাহিদা দিন দিন আরো তীব্র হচ্ছে।

অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর মনে করেন, কোনো দেশে দুর্নীতি বাড়লে সেখানে নগদ অর্থের প্রয়োজনীয়তাও বাড়ে। বাংলাদেশের সব ক্ষেত্রেই ঘুস-দুর্নীতিসহ কালো টাকার দৌরাত্ম্য বাড়ছে। এ কারণে এখানে নগদ অর্থের চাহিদা কমছে না। সরকারি কর্মচারী, রাজনীতিক, ব্যবসায়ীসহ প্রভাবশালীরা নগদ অর্থ ঘরে স্তূপ করে রাখছেন। তারা নগদ টাকা দিয়েই কোটি কোটি টাকার লেনদেন করছেন। বাজেটে কালো টাকা সাদা করার প্রস্তাব ঘুস-দুর্নীতিকে আরো উৎসাহিত করবে।

উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ডলার সংকট, রিজার্ভের ক্রমাগত ক্ষয়, বিনিময় হারের অস্থিরতাসহ অর্থনীতির প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে নতুন অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উত্থাপন হচ্ছে। জাতীয় সংসদে আজ বেলা ৩টায় অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী তার প্রথম বাজেট উপস্থাপন করবেন। প্রস্তাবিত বাজেটের আকার হতে যাচ্ছে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ১৪ দশমিক ২০ শতাংশ। এতে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হচ্ছে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআরের মাধ্যমে আয় করা হবে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব। এজন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্তের ভিত্তিতে ভ্যাট ও কর ব্যবস্থায় বেশকিছু পরিবর্তন আনা হচ্ছে বলে অর্থ বিভাগ ও এনবিআর সূত্রে জানা গেছে।

পরোক্ষ করের চেয়ে প্রত্যক্ষ কর আহরণে জোর দেয়া হচ্ছে বেশি। বেশকিছু খাত থেকে কর অব্যাহতি তুলে নেয়ার পাশাপাশি সংকুচিত হতে যাচ্ছে করছাড়ের আওতা। আগামী অর্থবছরে কর অব্যাহতির আওতা কমানোর মাধ্যমে ১৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব বাড়ানোর লক্ষ্য রয়েছে। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে পাওয়া ৪০ লাখ টাকার অতিরিক্ত মুনাফায় ‘ক্যাপিটাল গেইন’ কর আরোপের সিদ্ধান্ত আসতে পারে, যার সম্ভাব্য হার ১৫ শতাংশ। করজালের বিস্তার বাড়ানোর পাশাপাশি নতুন অর্থবছরে সম্প্রসারিত হতে যাচ্ছে ভ্যাটের আওতাও।

আসন্ন বাজেটে তৈরি পোশাক, ক্ষুদ্র ঋণ, রেমিট্যান্স, পোলট্রি ও ফিশারি খাতে করছাড়ের পরিমাণ কমিয়ে আনা হতে পারে। প্রক্রিয়াজাত কয়েকটি খাদ্যপণ্য উৎপাদনে ভ্যাটের হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এছাড়া মোবাইল ফোনে কথা বলা বা ইন্টারনেটের ওপর সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা আসারও সম্ভাবনা রয়েছে।

বাজেটে এনবিআর-বহির্ভূত রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৬১ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হচ্ছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির হার ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য ধরা হচ্ছে। তবে সব ছাপিয়ে এখন আলোচনায় বৈধ করদাতার চেয়ে কম কর দিয়ে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জিতদের সুযোগ দেয়ার বিষয়টি।

অতীতেও বিভিন্ন সময়ে বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়েছিল সরকার। কিন্তু সে সুযোগ তেমন কোনো ফল দেয়নি। এ বিষয়ে গবেষণা ও নীতিসহায়ক সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইএনএম) নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তফা কামাল মুজেরী বলেন, ‘অতীতে বহুবার এ সুযোগ দেয়া হয়েছে। উল্লেখযোগ্য তেমন ফল আসেনি। বরং এতে ইতিবাচকের চেয়ে নেতিবাচক দিকই বেশি। আয় অপ্রদর্শিত রাখার প্রবণতা রয়েই গেছে। সুযোগ না দিয়ে বরং এদের কঠোর হস্তে আইনের মাধ্যমে দমন করা উচিত।’

এবারের বাজেটে মোট ঘাটতির আকার ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। ঘাটতি পূরণের জন্য বিদেশী ঋণের ওপর বহুলাংশে নির্ভর করতে হয় সরকারকে। কিন্তু বর্তমানে প্রত্যাশা অনুযায়ী বিদেশী উৎস থেকে ঋণের সংস্থান করতে পারছে না সরকার। এজন্য বাজেটের ঘাটতি পূরণে বাড়ানো হচ্ছে ব্যাংক খাতনির্ভরতা।

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে বিদেশী উৎস থেকে ১ লাখ ২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকার ঋণ নেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু সংশোধিত বাজেটে সে লক্ষ্য ৭৬ হাজার ২৯৩ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে। বিপরীতে বেড়েছে দেশের ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা। সংশোধিত বাজেটে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্য বাড়িয়ে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। আর ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ হচ্ছে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ঘোষিত বাজেটের আকার ছিল ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। কিন্তু প্রত্যাশা অনুযায়ী রাজস্ব আয়ে ব্যর্থতা ও বিদেশী ঋণ না পাওয়ায় এরই মধ্যে বাজেটের আকার ৪৭ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা কমিয়ে আনা হয়েছে। সংশোধিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ১৪ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা। যদিও সংশোধিত এ বাজেটের বাস্তবায়ন নিয়েও সংশয় রয়েছে।

সংশয় রয়েছে চলতি অর্থবছরে লক্ষ্য অনুযায়ী রাজস্ব আহরণ নিয়েও। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) ২ লাখ ৮৯ হাজার ৩৭৭ কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ করতে পেরেছে এনবিআর। সংশোধিত বাজেটে এনবিআরকে ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য দেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্য অর্জন করতে হলে শুধু মে ও জুনে সংস্থাটিকে ১ লাখ ২০ হাজার ৬২৩ কোটি টাকার রাজস্ব আহরণ করতে হবে। বিরাজমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় এটিকে অনেকটা অবাস্তব বলেই মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

বাজেটে বিত্তশালী ব্যক্তি করদাতাদের নিট সম্পদের ভিত্তিতে প্রদেয় আয়করের শতকরা হারে সারচার্জের বিধান রাখা হয়েছে। বর্তমানে নিট পরিসম্পদের মূল্যমান ৪ কোটি টাকা পর্যন্ত প্রদেয় সারচার্জের হার শূন্য। নিট পরিসম্পদের মূল্যমান ৪ কোটি টাকা অতিক্রম করলে ১০ শতাংশ এবং নিট পরিসম্পদের মূল্যমানের সর্বোচ্চ সীমা ৫০ কোটি টাকা অতিক্রম করলে সারচার্জের পরিমাণ ৩৫ শতাংশ। সারচার্জের বিদ্যমান কাঠামোও অপরিবর্তিত থাকছে।

উন্নত বিশ্বে প্রচলিত জনসাধারণের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর খাতে করভার আরোপের ধারণা এবং দেশের পরিবেশ দূষণ হ্রাস করার উদ্যোগ হিসেবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে একাধিক গাড়ির ক্ষেত্রে বিভিন্ন সিসি বা কিলোওয়াটভিত্তিক পরিবেশ সারচার্জ আরোপ করা হয়েছিল। এবারও পরিবেশ সারচার্জের বিদ্যমান কাঠামো বহাল থাকছে।

কোম্পানি করদাতার জন্য খাতভিত্তিক অনেকগুলো করহার কার্যকর রয়েছে। আয়কর আইনে সংজ্ঞায়িত কোম্পানিগুলোর মধ্যে যারা পাবলিকলি ট্রেডেড নয় এসব কোম্পানির ক্ষেত্রে করহার শর্তসাপেক্ষে ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশ করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে, সব ধরনের আয় ও প্রাপ্তি এবং প্রত্যেক একক লেনদেনে ৫ লাখ টাকার অধিক ও বার্ষিক সর্বমোট ৩৬ লাখ টাকার ঊর্ধ্বে সব ধরনের ব্যয় ও বিনিয়োগ ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে।

বাজেটে নন-লিস্টেড কোম্পানিগুলোর মতোই শর্ত পরিপালন সাপেক্ষে এক ব্যক্তি কোম্পানির করহার ২২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ করা হচ্ছে। পরিশোধিত মূলধনের নির্দিষ্ট পরিমাণের অধিক শেয়ার আইপিওর মাধ্যমে হস্তান্তর হলে তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য করহার শর্তসাপেক্ষে ২২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ করা হচ্ছে। কর-জিডিপি হার বৃদ্ধির প্রচেষ্টা হিসেবে সার্বিক বিবেচনায় সমবায় সমিতির জন্য করহার ১৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে বৃদ্ধি করে অন্যান্য করহারের বিদ্যমান কাঠামোটি বহাল রাখা হচ্ছে।

এনবিআর বলছে, অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতির প্রভাব ক্রমাগত হ্রাস করে দেশে আনুষ্ঠানিক অর্থনীতিকে বিকাশের ক্ষেত্রে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, অর্থনীতির আনুষ্ঠানিকীকরণ, করনেট সম্প্রসারণ এবং কর পরিপালন বৃদ্ধি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। বর্তমান সরকারের অনুসৃত কর নীতি হচ্ছে কর ভিত্তি সম্প্রসারণের পাশাপাশি করহার ক্রমাগত যৌক্তিকীকরণ। এ নীতির পরিপালন হিসেবে রাজস্ব আয়ের নতুন ক্ষেত্র প্রস্তুত এবং ব্যবসায় সমতামূলক প্রতিযোগিতা আনতে বিছু প্রস্তাব থাকছে।

বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়াকে অবশ্য অসাংবিধানিক বলে মনে করেন দুদকের সাবেক মহাপরিচালক (লিগ্যাল অ্যান্ড প্রসিকিউশন) মঈদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণভাবে অনৈতিক ও অসাংবিধানিক। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২০-এ বলা হয়েছে, অনুপার্জিত আয় কেউ ভোগ করতে পারবে না। এটা করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সফল হওয়া যাবে না। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স বলে আবার দুর্নীতির সম্পদে ১৫ শতাংশ করে দিলে হালাল! এটা তো দ্বিমুখী নীতি। এতে অবৈধ আয় করাকে উৎসাহিত করা হবে। অবৈধ আয় যারা করে তাদেরকে সুরক্ষা দেয়া হবে। আর সরকার ১৫ শতাংশ কর নিলে নিক, কিন্তু প্রশ্ন কেন করা যাবে না? উৎস তো জানতে হবে।’

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!