খুলনা, বাংলাদেশ | ২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৭ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  দেশ টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক গ্রেপ্তার

ইলিশের চালান যাওয়ার দিনেই পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করল ভারত!

নিজস্ব প্রতিবেদক ও শার্শা প্রতিনিধি

ভারতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শারদীয়া দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিশেষ শুভেচ্ছা স্বরূপ ১ হাজার ৪৫০ মেট্রিক টন ইলিশের প্রথম চালান বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে প্রবেশের দিনই পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই বেনাপোল বন্দর দিয়ে বন্ধ হয়ে গেল পেঁয়াজের আমদানি। সোমবার বিকেলে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয় ভারত। ফলে বেনাপোলের ওপারের পেট্রাপোলে আটকা পড়ে আছে পেঁয়াজ ভর্তি প্রায় ১৫০ ট্রাক। একই অবস্থা ভোমরা বন্দরেও।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১২ সালে বাংলাদেশ থেকে ভারতে ইলিশ মাছ রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এরপরও বাংলাদেশ সরকার একাধিকবার ভারত সরকারকে শুভেচ্ছা উপহার স্বরূপ ইলিশ মাছ দিয়েছে। গতবছরও শারদীয়া দূর্গাপুজার সময় দেওয়া হয়েছিল ৫০০ মেট্রিক টন ইলিশ মাছ। পদ্মার ইলিশ পেয়ে ওপারের অনেকে বেশ খুশি।

সোমবার দুপুরে ইলিশের চালান বেনাপোল বন্দর এলাকায় এসে পৌছায়। এরপর কাস্টমসের আনুষ্ঠানিকতা শেষে সন্ধ্যা ৬ টার সময় যশোর-ট ১১-১১৭৭ ও যশোর-ট ১১-১১১২ নম্বরের দুটি ট্রাকে ৬ মেট্রিক টন করে মোট ১২ মেট্রিক টন ইলিশ মাছ ভারতে প্রবেশ করে। ইলিশ রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান হলো খুলনার জাহানাবাদ সি ফুড লিঃ। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ভারতের জে, কে এন্টারপ্রাইজ। এর সিএন্ডএফ এজেন্ট বেনাপোলের নীলা এন্টারপ্রাইজ। প্রতি কেজি ইলিশ মাছ মার্কিন ১০ ডলারে রফতানি করা হলো। যা বাংলাদেশী টাকায় ৮শ’ ৫০ টাকা।

বেনাপোল মৎস্য অফিসের কর্মকর্তা আবুল হাসান জানান, ১ হাজার ৪৫০ মেট্রিক টনের মধ্যে সোমবার ইলিশের প্রথম চালান ১২ মেট্রিক টন ভারতে প্রবেশ করেছে। পর্যায়ক্রমে বাকী ইলিশ মাছ রফতানি হবে ভারতে।

ভারতে বাংলাদেশের ইলিশ রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ইলিশ যাওয়া কিন্তু বন্ধ হয়নি। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একাধিক সীমান্ত এলাকা দিয়ে বিশেষ করে সাতক্ষীরার ভোমরা বন্দর এলাকা, বেনাপোল বন্দর এলাকা তথা শার্শা উপজেলার পুটখালী, ঘিবা, কাশিপুরসহ এমনকি ঝিনেইদাহ জেলার মহেশপুরের পুড়োপাড়া, শ্যামপুর তথা যশোর এর চৌগাছা এলাকা দিয়েও চোরাইপথে বাংলাদেশের ইলিশ পাচার হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের বাজারে। বর্ডারগার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর হাতে দু’একটি চালান আটকও হয়েছে। বাংলাদেশের একটি চোরাচালানি চক্র ইলিশের চালান ভারতের চোরাচালানীদের হাতে তুলে দিচ্ছে।

এদিকে পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই বেনাপোল বন্দর দিয়ে বন্ধ হয়ে গেল পেঁয়াজের আমদানি। সোমবার বিকালে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয় ভারত। ফলে বেনাপোলের ওপারের পেট্রাপোলে আটকা পড়ে আছে পেঁয়াজ ভর্তি প্রায় ১৫০টি ট্রাক। একই অবস্থা ভোমরা বন্দরেও। সোমবার সকাল থেকে ভোমরা বন্দর দিয়ে কোনো পেঁয়াজের গাড়ি বাংলাদেশে প্রবেশ করেনি।

ভারতের একটি সূত্র জানায়, দেশের সব বন্দর দিয়ে বাংলাদেশে পেঁয়াজের আমদানি বন্ধ রয়েছে। বেনাপোল বন্দর দিয়ে সকালের দিকে ৫০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ ঢোকার পরপরই দেশের সবগুলো বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয় ভারতের পেঁয়াজ রফতানিকারকদের সংগঠন।

বেনাপোলের ওপারে পেট্রাপোল রফতানিকারক সমিতির পক্ষে ব্যবসায়ী কার্তিক ঘোষ বলেন, পেঁয়াজ রফতানিকারক সমিতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে ৭৫০ ডলারের নিচে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি করবে না। সে কারণে অনেকগুলো গাড়ি বর্ডারে দাঁড়িয়ে আছে।

বেনাপোলের পেঁয়াজ আমদানিকারক রফিকুল ইসলাম রয়েল জানান, ভারতের সঙ্গে আমদানি বাণিজ্য শুরুর পর থেকে ২৫০ মার্কিন ডলারে পেঁয়াজ আমদানি হয়ে আসছে। ভারতের নাসিকে বন্যার কারণে সেখানে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। এতে রফতানিকারকরা স্থানীয় বাজার দর হিসাবে ৭৫০ ডলারের নিচে বাংলাদেশে পেঁয়াজের রফতানি করবে না। এ কারণে তারা পেঁয়াজের রফতানি সাময়িক বন্ধ করে দিয়েছে।

ভারতের বনগাঁ এলাকার পেঁয়াজ ব্যবসায়ী অনিল মজুমদার টেলিফোনে জানান, বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি করতে তাদের আপত্তি নেই। বাজার দরে এলসি পেলে তারা পুনরায় রফতানি শুরু করবে। সে ক্ষেত্রে পুরানো যে সব এলসি দেয়া আছে সেগুলো ২৫০ ডলার সংশোধন করে ৭৫০ ডলার করা হলে পেঁয়াজের আমদানি প্রক্রিয়া স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

বেনাপোল কাস্টমস হাউজের কমিশনার আজিজুর রহমান বলেন, ভারত কোনো ঘোষণা ছাড়াই মূল্য বৃদ্ধির দাবিতে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে। পারস্পারিক বাণিজ্যে সমঝোতার বিকল্প নেই। তারা রফতানি বন্ধ না করে পেঁয়াজের আমদানিকারকদের সময় বেঁধে দিতে পারতেন। হঠাৎ করে এমন সিদ্ধান্তটা নেয়া ঠিক হয়নি।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!