খুলনা, বাংলাদেশ | ৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ভারতের সাথে বন্দি বিনিময় চুক্তির ভিত্তিতে সরকার শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে : চিফ প্রসিকিউটর
  জুলাই-আগস্ট গণহত্যার মামলায় আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীসহ ১৩ জনের শুনানি চলছে
  শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গণহত্যা মামলার তদন্ত শেষ করা ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ ট্রাইব্যুনালের

বেতনা-মরিচ্চাপ নদী খনন প্রকল্পে টিআরএম বাস্তবায়নে আইডব্লিউএম’র সুপারিশ উপেক্ষিত

তালা প্রতিনিধি

বেতনা ও মরিচ্চাপ নদীর ভরাট রোধ ও জলাবদ্ধতায় জনদুর্ভোগ কমাতে সরকার ৪ বছর মেয়াদী ৪৭৫ কোটি ২৬ লাখ ১৪ হাজার টাকার নদী খনন প্রকল্প গ্রহণ করেছে। সরকারের নেয়া সাতক্ষীরা জেলার পোল্ডার নং ১, ২, ৬-৮, ৬-৮ (স¤প্রসারণ)-এর নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে তালাসহ সাতক্ষীরা সদর, কলারোয়া, দেবহাটা ও আশাশুনি উপজেলার প্রায় ১৫ লাখ মানুষ জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে মুক্ত হবে। কিন্তু নদী খনন প্রকল্প থেকে টিআরএম প্রস্তাবনা বাতিল করায় প্রকল্প থেকে সরকারের প্রত্যাশা অর্জন এবং নদীর ভবিষ্যত নিয়ে নদী ও পানি বিশেষজ্ঞরা আশংকা প্রকাশ করেছেন। এই প্রকল্পে গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইডব্লিউএম- দু’টি নদীর অববাহিকায় টিআরএম বাস্তবায়নের প্রস্তাব রাখলেও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় টিআরএম প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে।

তালা উপজেলা পানি কমিটির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা এম ময়নুল ইসলাম জানান, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের জলাবদ্ধতা সমস্যাটি প্রায় চার দশক ধরে চলে আসছে। সমস্যাটি সমাধান করার জন্য সরকার বিভিন্ন সময়ে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। বেশিরভাগ সময়ই পলি অপসারণ, বাঁধ নির্মাণ, সুইসগেট স্থাপন, খাল পুনঃখনন প্রকল্প অগ্রাধিকার দিয়ে পরিকল্পনা নেয়া হয়। কিন্তু এসব কার্যক্রমে জলাবদ্ধতার স্থায়ী নিরসন হচ্ছে না বরং এই অঞ্চলের নদীগুলো ধ্বংস হয়েছে। তিনি বলেন, নদীগুলো খনন করার পর স্থায়ীভাবে নাব্যতা ধরে রাখতে হলে টিআরএরম এর বিকল্প নেই।

কেন্দ্রীয় পানি কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ এবিএম শফিকুল ইসলাম বলেন, সাতক্ষীরা সদর, কলারোয়া, আশাশুনি ও তালা উপজেলার নদীগুলো পলি ভরাটের কারণে মৃতপ্রায়। বর্তমানে এসব এলাকায় প্রতিবছর প্রায় ৬ থেকে ৮ মাস জলাবদ্ধতা থাকে। চলতি বছরেও জলাবদ্ধতা চরম আকার ধারণ করেছে। পাশাপাশি পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ায় ইতোমধ্যে জনস্বাস্থ্যের ব্যাপক অবনতি ঘটেছে। খাবার পানির সঙ্কট চলছে। অন্যদিকে, কর্মসংস্থানের অভাবে কাজের সন্ধানে এলাকার মানুষ স্থায়ী-অস্থায়ীভাবে এলাকা ত্যাগ (অভিবাসিত) করছে।

তিনি বলেন, বেতনা ও মরিচ্চাপ নদী দু’টি জোয়ার-ভাটার নদী। সে কারণে জোয়ার-ভাটার নদীর নাব্যতা রক্ষায় টিআরএম গুরুত্বপূর্ণ। বেতনা ও মরিচ্ছাপ নদী খনন প্রকল্পে আইডব্লিউএম’র সমীক্ষায় স্পষ্ট করে বলা হয়, টিআরএম বাস্তবায়ন ছাড়া নদী খনন প্রকল্পটি টেকসই হবে না। কিন্তু আইডব্লিউএম-এর সমীক্ষা ও সুপারিশকে শেষ মুহূর্তে উপেক্ষা করা হয়েছে। এরফলে নদী খনন প্রকল্পের কাংখিত সাফল্য অর্জিত হবেনা।

উল্লেখ্য, বেতনা এবং মরিচ্চাপ নদী অববাহিকায় ইতিপূর্বে ব্লু-গোল্ডের অর্থায়নে বাঁধ-বন্দী ও খাল খনন করা হয়। এতে জলাবদ্ধতা দূর হয়নি বরং নদী বেশি ভরাট হয়েছে। এ কারণে আইডব্লিউএম এর সুপারিশ এবং বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ এর মধ্য অন্তর্ভুক্তি অনুযায়ী বেতনা ও মরিচ্চাপ অববাহিকার চিহ্নিত বিলগুলোর মধ্যে উপযুক্ত বিলে টিআরএম বাস্তবায়ন, ইছামতি নদীর সঙ্গে লাবণ্যবতী ও সাপমারা নদীর পুনঃসংযোগ প্রদান, সামাজিক এবং পরিবেশগত বিষয় যুক্ত করাসহ সংশ্লিষ্ট মহলের সমন্বয়ে টিআরএম নিশ্চিত করার জন্য নদী বিশেষজ্ঞ ও স্থানীয় জনগণ সরকাররে প্রতি জোর দাবি তুলেছেন।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী-২ শুধাংশু কুমার সরকার বলেন, আইডব্লিউএম এর সমীক্ষা রিপোর্টে টিআরএম এর কথা থাকলেও পরিকল্পনা কমিশনে টিআরএম ছাড়াই প্রকল্প অনুমোদন হয়। সেভাবে বেতনা ও মরিচ্চাপ নদী খননে প্রকল্প পাশ হওয়াই টিআএরম বাদেই নদী দু’টি খনন করা হবে।

সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনের সংসদ সদস্য অ্যাড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ বলেন, টিআরএম ছাড়া বেতনা মরিচ্চাপ খনন প্রকল্প টেকসই হবেনা। তিনি বলেন, জোয়ারভাটার কারণে আমাদের এই অঞ্চলের নদীগুলোর যে অবস্থা তাতে টিআরএম জরুরী। টিআরএম বাস্তবায়ন ছাড়া এই প্রকল্প অকার্যকর এবং সরকারী অর্থের অপচয় হবার সম্ভাবনাই বেশি।

খুলনা গেজেট/কেএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!