খুলনা, বাংলাদেশ | ৩০ কার্তিক, ১৪৩১ | ১৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  খুলনার বড় বাজারের পাটের বস্তার গোডাউনে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিস
  আজারবাইজানে কপ-২৯ জলবায়ু সম্মেলন শেষে দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস

বেক্সিমকোর ব্যবস্থাপনায় ‘রিসিভার’ নিয়োগ

গেজেট ডেস্ক

শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বেক্সিমকো গ্রুপে ‘রিসিভার’ নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই রিসিভারের কাজ হবে গ্রুপের সব প্রতিষ্ঠানের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। হাইকোর্টের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. রুহুল আমিনকে রিসিভার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

গত ৫ সেপ্টেম্বর বেক্সিমকো গ্রুপের সব সম্পত্তি সংযুক্ত করে তা ব্যবস্থাপনায় ছয় মাসের জন্য একজন রিসিভার নিয়োগ দিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান। ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি এখন কারাবন্দী। পোশাক রপ্তানি ও ওষুধ উৎপাদনে শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি বেক্সিমকো।

জানা গেছে, রিসিভার নিয়োগে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেছে বেক্সিমকো গ্রুপ। এ বিষয়ে আজ শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের গতকালের সভায় রিসিভার নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়। এ সভায় বাংলাদেশ থেকে পাচার করা অর্থ উদ্ধার প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক আইনি অথবা অর্থ উদ্ধার প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়। একই সভায় ডাক বিভাগের ডিজিটাল আর্থিক সেবা ‘নগদ’–এর কার্যক্রম খতিয়ে দেখতে ফরেনসিক নিরীক্ষার সিদ্ধান্ত হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা সাংবাদিকদের বলেন, ‘পর্ষদের সিদ্ধান্ত হওয়ায় দ্রুত এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে।’

গত ৫ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের আদেশে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে সালমান এফ রহমানের নেওয়া অর্থ উদ্ধার করতে ও বিদেশে পাঠানো অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দেওয়া হয়। এ বিষয়ে গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে জানাতে চার সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি মুহম্মদ মাহবুব-উল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই আদেশ দেন।

গত ২৫ বছরে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডসহ সংশ্লিষ্ট গ্রুপের অন্য সব ব্যবসার ঋণের বিষয়ে তথ্য সরবরাহ করাসহ কয়েকটি বিষয় নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মাসুদ আর সোবহান আবেদনকারী হয়ে ৪ সেপ্টেম্বর ওই রিট করেন।

এই ক্ষমতার জোরে নামে-বেনামে প্রায় ২০টি ব্যাংক থেকে ঋণের নামে অর্থ তুলে নেন তিনি। বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন একাধিক নিয়ম শিথিল করে সালমান রহমানকে এভাবে অর্থ নিতে সহায়তা করে।

আদালতের আদেশ থেকে জানা যায়, সালমান রহমানের বেক্সিমকো গ্রুপ অব কোম্পানিজের অন্য সব ব্যবসা–সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কী পরিমাণ ঋণ অপরিশোধিত আছে, ঋণের বর্তমান অবস্থা ও পরিশোধের তথ্য দিতে এবং বেক্সিমকো গ্রুপের সব সম্পত্তি সংযুক্ত করে সেসব ব্যবস্থাপনায় রিসিভার নিয়োগ বিষয়ে রুল দেওয়া হয়েছে। চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

সালমান রহমান সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা পদে নিয়োগ পান ২০১৯ সালে। এরপর তিনি হয়ে ওঠেন আর্থিক খাতের প্রধান নিয়ন্ত্রক। আর্থিক খাতের নীতিসিদ্ধান্তে তাঁর মতামতই গুরুত্ব পেত। এই ক্ষমতার জোরে নামে-বেনামে প্রায় ২০টি ব্যাংক থেকে ঋণের নামে অর্থ তুলে নেন তিনি। বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন একাধিক নিয়ম শিথিল করে সালমান রহমানকে এভাবে অর্থ নিতে সহায়তা করে।

প্রথম আলোর সংগ্রহ করা নথিপত্র অনুযায়ী, সরকারি-বেসরকারি আট ব্যাংকে বেক্সিমকো গ্রুপের ঋণের পরিমাণ (নন-ফান্ডেডসহ) দাঁড়িয়েছে ৩৯ হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা। এসব ব্যাংক বেক্সিমকোর একাধিক বন্ডে আরও ২ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে। এর বাইরে অন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও বেক্সিমকোর দেনা রয়েছে বলে জানা গেছে।

নথিপত্রে দেখা গেছে, ২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর আর্থিক খাতে বেপরোয়া ঋণ নিতে শুরু করেন সালমান। করোনার টিকা সরবরাহের কাজ পাওয়ার পর তাঁর ঋণ নেওয়ার গতি আরও বেড়ে যায়। ২০২০ সাল পর্যন্ত জনতা ব্যাংকে গ্রুপটির ঋণ ছিল প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা, তা এখন বেড়ে হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। ২০১৫ সাল থেকে তিনি ছিলেন আইএফআইসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান। এই ব্যাংকে গ্রুপটির দেনা প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, বেক্সিমকো গ্রুপ উৎপাদন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে শীর্ষে থাকা গ্রুপগুলোর একটি। এসব কার্যক্রমে যাতে কোনোভাবে ব্যাঘাত না ঘটে, সে দায়িত্ব পালন করবেন রিসিভার। পাশাপাশি ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে যেসব টাকা নেওয়া হয়েছে, তা কীভাবে শোধ করা যায়, তা–ও দেখভাল করা হবে।

নথিপত্র অনুযায়ী, সরকারি-বেসরকারি আট ব্যাংকে বেক্সিমকো গ্রুপের ঋণের পরিমাণ (নন-ফান্ডেডসহ) দাঁড়িয়েছে ৩৯ হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা। এসব ব্যাংক বেক্সিমকোর একাধিক বন্ডে আরও ২ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে।

জানা গেছে, ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করেছে। শিগগিরই এমন একাধিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করতে পারে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট।

নগদের মালিকানার সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে যুক্ত হয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। ফলে সাবেক সরকারের সময়ে কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থাই এটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি।

ফরেনসিক নিরীক্ষা হবে নগদে

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ক্ষমতার অপব্যবহার করে শুরু হয় নগদের কার্যক্রম। এরপর গ্রাহক ধরতে প্রতিষ্ঠানটি একচেটিয়া সুবিধা ভোগ করে। বিদায়ী সরকার সব সরকারি ভাতা বিতরণের জন্য নগদকে বেছে নেয়। ফলে সরকারি ভাতাভোগীদের বাধ্য হয়ে নগদের গ্রাহক হতে হয়। এসব ভাতা বিতরণে স্বচ্ছতা নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। পুরো ডিজিটাল আর্থিক সেবার বাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

নগদকে ডাক বিভাগের সেবা বলা হলেও বাস্তবে এতে সরকারি বিভাগটির কোনো মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ নেই। প্রতিষ্ঠানটি অবশ্য শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে মোবাইলে আর্থিক সেবা (এমএফএস) কার্যক্রম পরিচালনার চূড়ান্ত লাইসেন্স পায়নি। নগদের মালিকানার সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে যুক্ত হয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। ফলে সাবেক সরকারের সময়ে কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থাই এটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি।

নগদের মালিকানার সঙ্গে বিভিন্ন সময় যুক্ত ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপ–প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকনের স্ত্রী রেজওয়ানা নূর, সাবেক সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক ও রাজী মোহাম্মদ ফখরুল।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ২১ আগস্ট ‘নগদ’কে পরিচালনা করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক প্রশাসক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়। পরদিন প্রশাসক নিয়োগ করা হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালক মুহম্মদ বদিউজ্জামান দিদারকে। পাশাপাশি ছয়জন কর্মকর্তাকে ‘সহায়ক কর্মকর্তা’ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরদিন বাংলাদেশ ব্যাংক ও ডাক বিভাগের কর্মকর্তারা নগদের কার্যালয়ে গিয়ে পুরো প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নেন।

নগদ এখন আগের মতোই স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাচ্ছে। ইতিমধ্যে নগদের নানা অনিয়ম-বিচ্যুতি ধরা পড়েছে। এ জন্য পূর্ণাঙ্গ তথ্য ও সুবিধাভোগী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে নগদের সার্বিক কার্যক্রমের ওপর ফরেনসিক নিরীক্ষা করার জন্য ডাক অধিদপ্তরকে চিঠি দিয়েছিলেন প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসক। এ জন্য নগদের কার্যক্রম খতিয়ে দেখতে ফরেনসিক নিরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

 

খুলনা গেজেট/এইচ

 




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!