খুলনা, বাংলাদেশ | ১১ পৌষ, ১৪৩১ | ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ময়মনসিংহে ট্রাক-অটোরিকশার সংঘর্ষে একই পরিবারের ৪ জন নিহত
  নিখোঁজের ৪২ ঘণ্টা পর কাপ্তাইয়ের কর্ণফুলী নদী থেকে দুই পর্যটকের মরদেহ উদ্ধার
  ফায়ার সার্ভিস কর্মীকে চাপা দেওয়া ট্রাকচালক আটক
  সচিবালয়ের আগুন সোয়া ৬ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে এনেছে ফায়ার সার্ভিস

বৃষ্টি ভেজা ক্যাম্পাস

অর্ক মন্ডল, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়

যাব যবে দূর হিম-গিরি শিল, ওগো বাদলের পরী
ব্যথা ক’রে বুক উঠিবে না কভু সেথা কাহারেও স্মরি?
সেথা নাই জল, কঠিন তুষার, নির্মম শুভ্রতা-
কে জানে কী ভাল বিধুর ব্যথা — না মধুর পবিত্রতা!

বর্ষার চিরন্তন রূপ কয়েকটি পঙ্গক্তির মাধ্যমে অকপটে ফুটিয়ে তুলেছেন কাজী নজরুল ইসলাম।

প্রকৃতিতে ঋতুরাণী বর্ষার বিদায়ের করুন সুর ধ্বনিত হচ্ছে। আগমনের বার্তা দিচ্ছে শুভ্র শরৎ। তাই তো ঋতুরাণীর বিদ্যমান অস্তিত্বের উপস্থিতিকে স্মরণ করিয়ে দিতে এখনো শ্রাবণের ধারা অঝোরে ঝরছে। সবে শরতের রেশ পাওয়া বিকালের স্বচ্ছ শুভ্র নীলাভ আকাশ; হঠাৎ দেখা যায় বিষন্ন বর্ষার কুন্তলের ন্যায় কালো মেঘে ছেয়ে গেছে। সাথে আকাশ-বাতাস মাতাল করা মায়াবী হাওয়া। কি অসাধারণ নৈস্বর্গিক প্রকৃতির কলতান! কি অপরূপ দৃশ্য! ইট পাথরের শহরে এই নৈস্বর্গিক প্রাচুর্যের দেখা মিলবে ১০৬ একরে বিস্তৃত ষড়ঋতুর লীলাভূমি খ্যাত খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে।

প্রকৃতির এই অপরুপ শোভা কবির কলমে এই কলিগুলোর মধ্যে ফুটে উঠেছে —

আষাঢ়,কোথা হতে আজ পেলি ছাড়া?
মাঠের শেষে শ্যামল বেশে ক্ষণেক দাঁড়া !
জয়ধ্বজা ওই-যে তোমার গগন জুড়ে।
পুব হতে কোন পশ্চিমেতে যায় রে উড়ে।

অর্ককিরণে অতিষ্ঠ উষ্ণ গ্রীষ্মের রুক্ষতা কাটাতে প্রকৃতির রাণী হয়ে ধরাধামে অবতীর্ণ হয় বর্ষা। গ্রীষ্মের ম্রিয়মান প্রকৃতিকে জীবন্ত ও সজীব করে। অবস্থান করে আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র প্রায় তিন মাস জুড়ে। প্রকৃতিতে রিক্ত হস্তে সঞ্চার করে সারা বছরের প্রাণ। দিয়ে যায় নানান রূপ রং গন্ধের ফুল।বর্ষায় ফুলের এই সৌন্দর্যতাকে ইঙ্গিত করে রবী ঠাকুর লিখেছেন-

এই শ্রাবণ-বেলা বাদল-ঝরা
যূথীবনের গন্ধে ভরা
বাদল-সাঁঝের আঁধার-মাঝে
গান গাবে প্রাণ-পাগল-করা।

ক্যাম্পাসে এখন অহরহ দেখা যাচ্ছে ঋতুরাণীর আগমনী বার্তাবাহক কদম কেয়া, বৃষ্টিতে নুয়ে পড়া হলুদ সোনালু, থৈ থৈ করা লেকগুলোর পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে লাল নীল শাপলা ও পদ্ম। এছাড়াও রয়েছে অলকানন্দের হলুদ আভা, কামিনীর কামাবেষ্ঠিত শুভ্রতা, হাসনাহেনার সৌরভ। ক্যাম্পাসের কৃষ্ণচূড়া ফুলগুলোর সাথে বৃষ্টি যেন রাধার মতো নৃত্য করে। বর্ষাকে প্রতিনিয়ত স্বাগত জানায় বেলি, টগর, নাগকেশর, রঙ্গন, গন্ধরাজ, কাঞ্চন, চন্দ্রমল্লিকা, বাগানবিলাস, মোরগফুলসহ নানান ফুল। ক্যাম্পাসের কুচকুচে কালো পিচ ঢালায় দেওয়া রাস্তায় যখন বৃষ্টির পর প্রেমিক যুগল হাঁটতে বের হয় তখন পরিবেশের শীতল ঠান্ডা বাতাস এবং ওয়াকওয়ের ধার দিয়ে লাগানো বকুলের বাকরুদ্ধ করা সুঘ্রাণ বিমোহিত করবেই।

বর্ষাপ্রেমী এক শিক্ষার্থী বলেন, “বর্ষাকালে কদম ফুল যদি দেয় দৃশ্যের আনন্দ, কেয়া ফুল তবে দেয় সৌরভের গৌরব। এখানে সেটায় দৃশ্যমান। বৃষ্টির পর ক্যাম্পাসে হাঁটাহাঁটি করতে ভালোই লাগে। বুক ভরে বিশুদ্ধ বাতাস নেওয়া যায়। আলাদা স্ফূর্তি কাজ করে মনে। সাথে বিভিন্ন ফুলের গন্ধে বিভোর হয়ে উঠি।”

বর্ষার সাথে প্রেমের গভীর সম্পর্ক। কবিরা বিভিন্নভাবে ঋতুরাণীর সাথে ভালোবাসাকে বেঁধেছেন। কখনো বিচ্ছেদ বা অপূর্ণতাকে বর্ষার বিষন্নতা ও গম্ভীরতার সাথে তুলনা করেছেন। আবার কখনো বৃষ্টির চপল নাচনকে প্রেমিক মনের অস্থিরতা বা চঞ্চলতার সাথে চিত্রায়িত করছেন। বৃষ্টির হলেই ক্যাম্পাসে এমন যুগল চোখে পড়ে। খালি পায়ে হাত ধরে হাঁটা, অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা, কানে ফুল গুঁজে দেওয়া আরো কত কি। মনের চঞ্চলতা সাথে বৃষ্টির চপলতাকে রেখে কবি গুরু লিখেছেন-

পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে
পাগল আমার মন জেগে ওঠে ॥
চেনাশোনার কোন্ বাইরে
যেখানে পথ নাই নাই রে
সেখানে অকারণে যায় ছুটে ॥

এমনই এক যুগল ইব্রাহিম , মিথি। তারা খুলনা গেজেটকে বলেন,”বর্ষার প্রতিটা ফোঁটা যেন আমাদের হৃদয়ের ভাষা, যা কোন কথা না বলেই সবকিছু প্রকাশ করে দেয়। যখন বৃষ্টি নামে, আমাদের সম্পর্কের সমস্ত অপ্রকাশিত কথা যেন সেই ফোঁটাগুলোর সাথে মিশে যায়। খোলা আকাশের নিচে একসাথে ভিজতে ভিজতে আমরা আমাদের ভালোবাসাকে নতুন করে অনুভব করি।”

ক্রিড়াপ্রেমীদের সকাল-বিকাল দেখা মিলছে বৃষ্টি মাখা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মাঠে(খাজার মাঠ)। আগামী ফুটবল টুর্নামেন্টকে লক্ষ্য ব্যস্ত সময় যাচ্ছে তাদের। আর ফুটবল সাথে বৃষ্টি মানেই শৈশবে ফিরে যাওয়া। বর্ষায় বৃষ্টির পানিতে মাঠে ফুটবল খেলার মজাই আলাদা। এ যেন শৈশবের আনন্দকে দ্বিগুণ করে দেয়।

ক্রিড়াপ্রেমী সুফিয়ান,”বৃষ্টি নামলেই ফুটবল প্রেমীদের মনে নামে আনন্দ। কে ভালো খেলে আর কে খারাপ খেলে তা দেখার সুযোগ নেই। খেলায় অংশগ্রহণ করাটাই বড়। সবাই হৈ-হুল্লোড় করে বৃষ্টিতে মাঠে নেমে পড়ে। এটার মজাই আলাদা।”

খুলনা গেজেট/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!