নতুন ভবন নির্মাণের অনুমোদন হয়েছে, টেন্ডার হয়নি। এর আগেই ভেঙ্গে ফেলা হয় বিদ্যালয়ের পুরাতন টিনশেডের ক্লাসরুমের কক্ষগুলি।
ভোগান্তিতে পড়ে বিদ্যালয়ের কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রী এবং শিক্ষক শিক্ষিকা। ৩০ হাজার টাকা দিয়ে ক্রয় করা টিনশেডের একটি কক্ষে বসে শিক্ষকরা চালাচ্ছেন কার্যক্রম । এটি দৌলতপুর থানাধীন সেনপাড়া জহির উদ্দিন গণবিদ্যাপীঠ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
টিনের একচালা কক্ষে বসে এ বিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত কোমলমতি শিশুদের হাতেখড়ি দিতে হচ্ছে। বৃষ্টিতে ভিজতে হচ্ছে। সহ্য করতে হচ্ছে প্রচন্ড তাপদাহ। গত এক বছর ধরে চলছে কোমলমতি শিশুদের এমন ভোগান্তি। এ অবস্থায় গত এক বছরে বিদ্যালয় ছেড়েছে ৪০ জন ছাত্র-ছাত্রী। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে অধ্যায়নরত ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ১২০ জন। বিদ্যালয়ের দূরাবস্থার কারণে পিতা মাতার অনিহা সৃষ্টি হচ্ছে ছেলে মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে। বৃষ্টি শুরু হলে শিক্ষকদেরও মাথায় ছাতা দিয়ে পাঠদান করাতে হচ্ছে।
জানা যায়, নগরীর ফুলবাড়ী বি.কে ক্লাস্টারের আওতায় ১৯৯১ সালে দৌলতপুর থানাধীন সেনপাড়াসহ পার্শবর্তী এলাকার শিশুদের হাতে খড়ি দিতে জহীরউদ্দীন গণ বিদ্যাপীঠটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি সরকাারি হয়। ২০২০ সালের ২৯ অক্টোবর চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসুচি (পিইডিপি-৪) আওতায় বিদ্যালয়টিতে নতুন ভবন/অতিরিক্ত শ্রেনীকক্ষ এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ওয়াশব্লক নির্মাণের জন্য তালিকাভুক্ত হয়। কিন্তু নতুন ভবন নির্মাণের আগেই পুরাতন সেমিপাকা টিনশেডের শ্রেণীকক্ষগুলি ভেঙ্গে ফেলতে আহবান করা হয় টেন্ডার বিজ্ঞপ্তিতে। গত বছরের মার্চে বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবনটি সম্পুন্ন ভেঙ্গে নিয়ে যায় ঠিকাদার।
শ্রেণী পাঠদান উপযোগী ক্লাস রুম না করে পুরাতন ভবন ভেঙ্গে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে শুরু হয় কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের দুর্ভোগ আর ভোগান্তি। অস্থায়ী ভিত্তিতে একচালা টিনের ছাপড়া দিয়ে চলছে বিদ্যালয় শিক্ষা কার্যাক্রম।
গত ২০ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয়টিতে গিয়ে দেখা যায়, বাঁশ এবং টিন দিয়ে ছাউনী দেওয়া ৪০/৪৫ ফুট লম্বা এবং ১২/১৫ ফুটট প্রশস্ত একচালা টিনশেটের ছাপড়ার মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেনী মোট ৬টি ক্লাসের ১২০ জন ছাত্র ছাত্রীর শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। হঠাৎ বৃষ্টি নামলে দেখা যায় একচালা খোলামেলা টিন দিয়ে পানি পড়ছে ছাত্র-ছাত্রীদের গায়ে। ছাতা মাথায় শ্রেনী কক্ষে পাঠদান করাচ্ছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাসলিমা খাতুন। সামান্য বৃষ্টি হলেই কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের বই-খাতা ভিজে যাচ্ছে। পায়ের নীচে পানি জমে যাচ্ছে।
পঞ্চম শ্রেনীর ছাত্র রুবেল ও আব্দুল্লাহ জানায়, বৃষ্টি হলে বইখাতা আর জামাকাপুড় ভিজে বাড়ী যেতে হয়। আর রোদের সময় গরমে অসুস্থ হয়ে পড়তে হয়। এ জন্য আমাদের পিতা-মাতা স্কুলে আসতে দিতে চায়না।
বিষয়টি ফুলবাড়ী বি.কে ক্লাস্টার থানা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ মঞ্জুরুল আলমকে অবহিত করলে তিনি তাৎক্ষনিক বিদ্যালয়ে ছুটে এসে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেন। এ সময় তিনি জানান, সম্প্রতি আমি ফুলবাড়ী বিকে ক্লাস্টারে জয়েন্ট করেছি। বিদ্যালয়ের শ্রেনী কক্ষ সংকটের বিষয়টি অবহিত হয়ে ইতোমধ্যে আমি উর্ধতন কর্মকর্তা থানা শিক্ষা অফিসার মোঃ শাহাজাহান স্যারের সাথে আলোচনা করেছি। তিনি আমাকে জানিয়েছেন বিদ্যালয়টির ভবনের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যে তালিকা প্রেরণ করেছি সেই তালিকায় এক নম্বরে আছে এটি। ভবন নির্মাণের স্যাংশন হলে আগে এই বিদ্যালয়ের কাজ হবে।
সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মঞ্জুরুল আলম শিক্ষার্থীদের দুরবস্থার চিত্র দেখে দ্রুত সময়ে নতুন ভবন নির্মাণ করা না হলে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে জরুরী তহবিল থেকে অস্থায়ী সুরক্ষিত শ্রেণী কক্ষ দেওয়ার চেষ্টা করবো।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাসলিমা খাতুন জানালেন, এক বছর পুর্বে পুরাতন ভবনটি ভেঙ্গে নিয়ে যাওয়ার সময় ঠিকাদারের কাছ থেকে ১২ ফিট বাই ১০ফিটের একটি টিনের কক্ষ ৩০ হাজার টাকা দিয়ে কিনে নিয়ে বিদ্যালয়ের বই-খাতা, কাগজপত্র এবং শিক্ষকদের কোনরকম একটু বসার জায়গা করি। বিদ্যালয়ের অবকাঠামো না থাকায় শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম চরম ভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। ফলে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদেরকে বিদ্যালয়ে পাঠাতে অপরাগত প্রকাশ করছে। চলতি বছরে প্রায় ৪০ জন শিক্ষার্থী বিদ্যালয় ত্যাগ করেছে।