আজ ২ আগষ্ট বিশ্ব বরেণ্য বিজ্ঞানী স্যার আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র ( পিসি) রায় এর ১৬৩ তম জন্মবার্ষিকী। তিনি ১৮৬১ সালের আজকের দিনে খুলনার পাইকগাছা উপজেলার রাড়–লীতে জন্মগ্রহন করেন। দিবসটি পালনে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে তাঁর জন্মভিটা রাড়–লীতে নানা কর্মসূচী পালিত হচ্ছে।
দিবসটি পালনে কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে শুক্রবার (২ আগস্ট) সকালে জন্মভিটা রাড়ুলীতে বিজ্ঞানীর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।
উপজেলা প্রশাসন জানায়, অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন, খুলনা-৬ আসনের এমপি মোঃ রশীদুজ্জামান।
খুলনা জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসিন আরেফিন এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় সভায় জনপ্রতিনিধি, সরকারী পদস্থ কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ উপস্থিত থাকবেন।
প্রফুল্ল চন্দ্র রায় ১৮৬১ সালের ২ আগস্ট পাইকগাছা উপজেলার কপোতাক্ষ নদের তীরে রাডুলী গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। তার পিতা জমিদার হরিশচন্দ্র রায় ও মাতার নাম ভুবনমোহিনী দেবী। তিনি ছিলেন একাধারে প্রখ্যাত বাঙালি রসায়নবিদ, বিজ্ঞান শিক্ষক, দার্শনিক, দেশীয় শিল্পোদ্যোক্তা, কবি, রাজনীতিবিদ, সমাজ সংস্কারক ও সমবায় আন্দোলনের পূরোধা।
প্রফুল্ল চন্দ্র রায় (পিসি রায়) ১৮৭৮ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। এরপর ভর্তি হন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রতিষ্ঠিত মেট্রোপলিটন কলেজ (বর্তমান বিদ্যাসাগর কলেজ)। ১৮৮১ সালে সেখান থেকে এফএ পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে পাশ করে ভর্তি হন প্রেসিডেন্সি কলেজে বিএ ক্লাসে। সেখান থেকে গিলক্রিস্ট বৃত্তি নিয়ে তিনি স্কটল্যান্ডের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি বিএসসি পাশ করেন।
এরপর ক্রমান্বয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ঘুরে ১৮৮৮ সালে প্রফুল্ল চন্দ্র রায় স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন।
দেশে ফিরে প্রেসিডেন্সি কলেজে প্রায় ২৭ বছর অধ্যাপনা করেছিলেন। অধ্যাপনাকালে তাঁর প্রিয় বিষয় রসায়ন নিয়ে নিত্য নতুন অনেক গবেষণাও চালিয়ে যান। মাত্র ৮ শত টাকা পূঁজি নিয়ে পিসি রায় বেঙ্গল কেমিক্যালের প্রতিষ্ঠাতা করেন। বেঙ্গল কেমিক্যাল ১৯০১ সালে কলকাতার মানিকতলায় ৪৫ একর জমিতে স্থানান্তরিত হয়। তখন এর নতুন নাম রাখা হয় বেঙ্গল কেমিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কস লিমিটেড। ১৮৯৫ সালে মাত্র ৩৪ বছর বয়সে মারকিউরাস নাইট্রাইট আবিষ্কার করেন। তাঁর ওই আবিষ্কার বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হয়। তিনি মোট ১২টি যৌগিক লবণ এবং ৫টি থায়োএস্টার আবিষ্কার করেন। ১৯৩০ সালে বৃিটিশ সরকার তাকে’ নাইট’ উপাধিতে ভূষিত করেন। একই বছর লন্ডনের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৪৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ভারতের মহীশুর ও বেনারস বিশ্ববিদ্যালয় সম্মান সূচক ডক্টরেট ড্রিগ্রী প্রদান করেন।
পিসি রায় ১৯০৯ সালে জন্মভূমি রাড়ুলীতে একটি কো-অপারেটিভ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দে শিক্ষা বিস্তারে পিতার নামে আর,কে, বি, কে, হরিশ্চন্দ্র স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তী এ প্রতিষ্ঠানটি স্কুল এ্যাড কলেজে রুপান্তরিত হয়েছে। দেশে প্রথম তিনি নারী শিক্ষা বিস্তারে রাড়ুলীতে মায়ের নামে ভূবন মোহনী বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। বাগেরহাটে ১৯১৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন পি সি রায় কলেজ। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠা করে খ্যাতি অর্জন করেন।
চির কুমার বিজ্ঞানী তার সারা জীবনের অর্জিত সম্পদ মানব কল্যানে দান করে গেছেন। তিনি ১৯৪৪ সালের ১৬ জুন ৮৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।
খুলনা গেজেট/এনএম