খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ পৌষ, ১৪৩১ | ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

বিশ্ব বরেণ্য চিত্র শিল্পী এস এম সুলতানের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

লোহাগড়া প্রতিনিধি

আজ ১০ অক্টোবর। চিত্রকলা জগতের কিংবদন্তী, নিরাসক্ত, মানবতাবাদী প্রগতিশীল মুক্ত চেতনার অনুপম শিল্প ব্যক্তিত্ব বিশ্ব বরেন্য চিত্র শিল্পী এসএম সুলতানের আজ ২৮তম মৃত্যু বার্ষিকী। সুলতানের পালিত কন্যার অভিযোগ মহান এই শিল্পীর মৃত্যুর দুই দশক পেরিয়ে গেলেও আজো তার কোন স্বপ্নের বাস্তবায়ন হয়নি। তিমিরেই রয়ে গেছে দেশ, জাতি তথা মানবতার কল্যাণে শিল্পীর আজন্ম লালিত সকল ভাবনা, উপলব্ধী। আর শিশু ভক্তদের দাবী তার চিড়িয়াখানা ও নৌকা ভাসানো হোক চিত্রা নদীতে।

মানবিকতার ঘৃণ্য শৃঙ্খলে আবদ্ধ সমাজের শোষিতরাই ছিল শিল্পী সুলতানের ভাবনার কেন্দ্রবিন্দু। যাদের প্রতি গভীর মমত্ববোধের কারণেই যুগে যুগে ব না, অবজ্ঞা, আর শোষণের যাঁতাকলে নিঃস্পেষিত কৃষক-শ্রমিক মেহনতি মানুষগুলোর কঙ্কালসার অবয়বকে কখনোই মেনে নিতে পারেননি তিনি। তাই তো তার কল্পনার সবটুকু জুড়েই ছিল শক্তি সামর্থ্যরে প্রতীক স্থুলপেশী বহুল মানুষ। তার এই প্রতিবাদী চেতনাই জীবন্ত হয়ে উঠেছে ক্যানভাসে। জীবন-জীবিকার যুদ্ধে অবতীর্ণ খেটে খাওয়া মানুষগুলোর স্থুলপেশী বহুল অবয়ব বার বার উঠে এসেছে তার তুলির আঁচড়ে। যা ছিল সুলতানের চিত্রকলার মৌলিকত্ব, যে চিত্র কর্ম দিয়ে তিনি সমাদৃত হয়েছেন বিশ্বব্যাপী জাতির জন্য কুড়িয়ে এনেছেন অফুরন্ত সম্মান।

শিল্পীর সমাধি সৌধ, নৌ বিহারে শিশুদের নিয়ে চিত্রাঙ্কনের জন্য নির্মীত নৌকা, শিল্পীর আজন্ত লালিত স্বপ্ন শিশুসর্গসহ এখানকার পাড়াতে পাড়াতে ছড়িয়ে থাকা শিল্পী সুলতানের নানা স্মৃতি চিহ্ন প্রতিনিয়তই বিমোহিত করছে মানুষকে । সৃষ্টি হয়েছে পর্যটন শিল্পের ব্যাপক সম্ভাবনা। তার চিত্র কর্ম সকলের জন্য উন্মুক্ত করা, চিড়িয়াখানা ফেরত দেওয়া ও সুলতানের সপ্ন ছোট শিশুদের নৌকায় নিয়ে ছবি আকা যেন বাস্তবে হয় তা সকলের দাবী ।

সুলতানের পালিত কন্যা নিহার বালা বলেন, সুলতান যে সপ্ন দেখেছেন সেটা বাস্তবায়িত হয় নাই। সুলতানের সপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তার নামে নড়াইলে একটি শিশু পার্ক ও শিশুদের নিয়ে চিত্রাঙ্কনের জন্য তাঁর নির্মিত নৌকা নদীতে ভাসিয়ে শিশুদের চিত্রাঙ্কনের ব্যবস্থা করার দাবী করেন ।

কালজয়ী এই শিল্পী ১৯৫৩ সালে নড়াইলে ফিরে শিশু-কিশোরদের সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি চারুকলা শিক্ষার ব্যবস্থা করেন। ১৯৬৯ সালের ১০ জুলাই ‘দি ইনস্টিটিউট অব ফাইন আর্ট’ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮৭ সালে স্থাপিত হয় ‘শিশুস্বর্গ’। সুলতান তার সি ত অর্থ দিয়ে ১৯৯২ সালে ৯ লাখ মতান্তরে ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৫ ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট দ্বিতলা নৌকা (ভ্রাম্যমাণ শিশুস্বর্গ) নির্মাণ করিয়েছিলেন। বিশ্ব নন্দীত চিত্র শিল্পী এস এম সুলতান ১৯২৪ সালের ১০আগষ্ট মেসের আলী ও মাজু বিবির ঘরে জন্মগ্রহন করেন। তিনি ১৯৮২ সালে একুশে পদক, ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ সরকারের রেসিডেন্ট আর্টিষ্ট স্বীকৃতি, ১৯৮৬ সালে চারুশিল্পী সংসদ সম্মাননা এবং ১৯৯৩ সালে স্বাধীনতা পদক লাভ করেন। শিল্পী এসএম সুলতান দূরারগ্য নানা ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৯৯৪ সালের ১০অক্টোবর তারিখে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ হাবিবুর রহমান বলেন. নড়াইলের শিক্ষা সাংস্কুতির যে ঐতিহ্য এস এম সুলতান বহু গুনে বাড়িয়ে দিয়েছেন। দিনটি পালন উপলক্ষে নড়াইলের জেলা প্রসাশন ও এসএম সুলতান ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে চিত্রা পাড়ের মাছিমদিয়া গ্রামে সুলতান কমপ্লেক্স আয়োজন করা হয়েছে কোরানখানি ও মিলাদ মাহফিল,শিল্পীর মাজারে পুষ্প মাল্য অর্পন, মাজার জিয়ারত, শিশু চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!