করোনার কারণে স্বাস্থবিধির কথা চিন্তা করে এ বছর এইচএসসি ও সমমান পর্যায়ে পরীক্ষা ছাড়াই অটোপাশের সরকারি সিদ্ধান্তের পর শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এছাড়া পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বতন্ত্রভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেবে নাকি সমন্বিতভাবে সেটা নিয়েও এখনো কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি সরকারসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান। যদিও শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বিশ্বদ্যিালয়ের ভর্তি পরীক্ষা গুচ্ছ পদ্ধতিতে নেয়ার পরিকল্পনার কথা বলেছেন। তবে এইচএসসি বা সমমান পর্যায়ে মূল্যায়ন ছাড়া এভাবে অটোপাশ এবং পূর্বের রেজাল্ট বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির চিন্তার ব্যাপারে রয়েছে ভিন্নমত। কারণ অনেকেই ভর্তি পরীক্ষার সময় নিজেকে নতুন করে ভেঙ্গে গড়ে। পরীক্ষা ছাড়া মূল্যায়ন হলে তা সম্ভব হবে না।
অনেকেই বলেছেন, বিনা টেষ্টে এভাবে একটি প্রজন্মকে সার্টিফিকেট দিয়ে দেয়া আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। জেএসসি ও এসএসসির সাথে এইচএসসির পড়ালেখার বিস্তর ফারাক। অনেকেই পূর্বের প্রত্যাশিত ফল না পেয়ে এইচএসসিতে ঘুরে দাঁড়াতে অনেক পরিশ্রম করে। তাদের প্রত্যাশা থাকে এইচএসসিতে কাঙ্খিত ফলাফল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। যেকোন মূল্যে যেকোন পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয়া দরকার ছিল।
সরকারি সুন্দরবন কলেজের এইচএসসি শিক্ষার্থী উম্মে হাবিবা বলেন, পরীক্ষা নিলে ভাল হতো। প্রয়োজনে স্বল্পসময়ে কম নাম্বারের পরীক্ষা হতো। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রেও উদ্বিগ্ন এই শিক্ষার্থী।
লায়ন্স স্কুল এন্ড কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান জানান, এসএসসিতে পারিবারিক সমস্যার কারণে ভাল রেজাল্ট করতে পারিনি, এবার প্রস্তুতি খুব ভাল ছিল। কিন্তু পরীক্ষা না হলে সেই প্রস্তুতির কোন মূল্য থাকবেনা।
অভিভাবক আতিকুর রহমান বলেন, আমার মেয়ে সোহরাওয়ার্দী কলেজে পড়ে। করোনার কারণে বাসায় বসে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিয়েছে। জেএসসি ও এসএসসির ফলাফল দিয়ে গড় রেজাল্ট তৈরি করলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ার সম্ভবনা রয়েছে।
হাজি মালেক কলেজের শিক্ষার্থী জয়ন্ত রায়ের বাবা স্বপন রায় বলেন, স্বল্প পরিসরে হলেও পরিক্ষা নেয়া দরকার ছিল। সন্তানের ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ নিয়ে তিনি হতাশা ব্যক্ত করেছেন।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাসুদ রানা বলেন, একজন শিক্ষার্থীর স্বপ্ন থাকে ভাল একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার। কোন কারণে হয়তো সে আগের পরীক্ষায় খারাপ করেছে, এবার হয়তো সে পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েছিল। কিন্তু গড়ের ভিত্তিতে ফলাফল তৈরি করলে সে হয়তো পিছিয়ে যাবে।
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি বিভাগের সহযোগি অধ্যাপক আল মাহমুদ খুলনা গেজেটকে বলেন, এইচএসসিতে পরীক্ষা ছাড়াই পাশ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয়ার নেগেটিভ এবং পজেটিভ দুটো দিকই রয়েছে। তবে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে সামনে এখনো সময় রয়েছে। শিক্ষার্থীদের সুবিধা বিবেচনা করেই যে কোন ধরণের পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে তাঁর প্রত্যাশা। তিনি আরো বলেন, সমন্বিতভাবে ভর্তি পরিক্ষা নেয়া হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মান বিবেচনায় প্রাইয়োরিটি পাবে বলে তাঁর প্রত্যাশা।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের সহকারি অধ্যাপক বায়েজিদ খান বলেন, গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া কঠিন হবে। মেডিকেলের প্রশ্ন ফাঁসের মত ঘটনা ঘটলে পুরো পদ্ধতিই প্রশ্নের মুখে পড়বে। তাছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে কি বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনা করা যাবে। একজন শিক্ষার্থী ১০২ পেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে আবার কেউ ১০১ পেয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাবে। এতে শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে হতাশ হবে। এছাড়া সমন্বিত ভর্তি প্রক্রিয়ায় প্রশ্ন করার ক্ষেত্রেও স্টান্ডার্ড ধরে রাখা কঠিন হবে। তবে নীতি নির্ধারকরা অবশ্যই এসব অসঙ্গতি মাথায় রেখেই পরিকল্পনা করবেন বলে তাঁর প্রত্যাশা।
করোনার প্রকোপ কমে আশায় সবকিছুই স্বাভাবিক ভাবেই চলছে। তাহলে পরীক্ষা নয় কেন ? তিনি স্বাস্থবিধি মেনে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা নেয়ার পক্ষে মত দেন। প্রয়োজনে পরীক্ষার কেন্দ্র সংখ্যা বাড়ানোর কথা বলেন তিনি। কারণ জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার সাথে এইচএসসির তুলনা করা যাবেনা। এইচএসসি লেভেলটা একজন শিক্ষার্থীর বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এসএসসিতে কোন কারণে খারাপ করলেও এইচএসসিতে তার ঘুরে দাঁড়ানের সুযোগ থাকে। কিন্তু পরীক্ষা ছাড়াই মূল্যায়ন করা হলে সেটার সুযোগ থাকবেনা। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মাঝে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
উল্লেখ্য, গত ৮ মার্চ দেশে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয় সরকার। যা এখনও চলমান রয়েছে। এ অবস্থায় এইচএসসি পরীক্ষা না নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাই এ পরীক্ষার মূল্যায়ন তৈরিতে পরামর্শ দেয়ার জন্য একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি করে দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত বুধবার এইচএসসি পরীক্ষার বিষয়ে গণমাধ্যমকে অনলাইনে ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
তিনি আরও বলেন, মহামারীর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরীক্ষাও নেয়া সম্ভব হবে কিনা, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করার কথা ভাবছে সরকার।
খুলনা গেজেট / এমএম