খুলনা, বাংলাদেশ | ২২ আশ্বিন, ১৪৩১ | ৭ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  সাবেক পরিবেশমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব আমিনুল ইসলাম খান গ্রেপ্তার
  দেশে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৪ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১২২৫
  পোল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত হিসেবে খোরশেদ আলমের নিয়োগ বা‌তিল : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
  সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রহমানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

বিল তুলে লাপাত্তা সাবেক এমপি বাবু, কয়রা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কাজ বন্ধ

তরিকুল ইসলাম

জেলা শহর থে‌কে সব‌চে‌য়ে দূরবর্তী ও দুর্গম সুন্দরবন উপকূলীয় উপ‌জেলা খুলনার কয়রা। কয়রা উপ‌জেলা স্বাস্থ‌্য কমপ্লেক্সের ভবন নির্মাণ নি‌য়ে অ‌নিশ্চয়তা দেখা দি‌য়ে‌ছে। দুই দফা মেয়াদ শেষে কা‌জের অগ্রগ‌তি স‌ন্তোষজনক না হওয়ায় কাজ বা‌তি‌লের সুপা‌রিশ ক‌রে‌ছেন নির্বাহী প্রকৌশলী। বড় অং‌কের টাকা উত্তো‌লন ক‌রে কাজ বন্ধ রে‌খে‌ছেন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। ভবন নির্মা‌ণে বিল‌ম্বে চি‌কিৎসা সেবায় চরম বিঘ্নিত হ‌চ্ছে।

স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, খুলনা সূত্রে জানা যায়, কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পুর্ননির্মাণ প্রকল্পের কার্যাদেশ দেয়া হয় ২০২২ সালের ১৬ আগস্ট। ৩১ শয্যা বিশিষ্ট তিনতলা ভবনটি নির্মাণের কার্যাদেশ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স জিয়াউল ট্রেডার্স ও মেসার্স শামীম আহসান ট্রেডার্স। এ কাজ বাস্তবায়নের মেয়াদ ছিলো মাত্র ৯ মাস। কার্যাদেশ পাওয়ার পর দুই বছর পার হলেও মাত্র ১৯ শতাংশ কাজ শেষ হ‌য়ে‌ছে। এই কাজের বিপরীতে ঠিকাদার এখন পর্যন্ত ১ কোটি ৭২ লাখ ৯৯ হাজার টাকা উঠিয়ে নিয়েছে। শত চেষ্টা করেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কাজ আদায় করতে পারছে না স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।

গত ১৯ মার্চ কাজ বাতিলের সুপা‌রিশ ক‌রে‌ পত্র দেন খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী শাহরিয়ার হাসান মহিউদ্দীন।প‌ত্রে তি‌নি উল্লেখ ক‌রে‌ন, নির্মাণ কাজটি অত্যন্ত ধীরগতিতে চলমান ছিল এবং গত চল‌তি বছ‌রের ২৫ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত মাত্র ১০টি পাইল ক‌্যাপ কা‌ষ্টিং করা হয়। কিন্তু তারপর থেকে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে বাকী পাইল ক‌্যাপ দ্রুত কা‌ষ্টিং করার নির্দেশনা প্রদান করা হলেও কার্যতঃ কোন অগ্রগতি অর্জিত হয়নি এবং সাইটে পর্যাপ্ত নির্মাণ সামগ্রীও মজুদ নাই। কার্যাদেশ ও অনুমোদিত সম্প্রসারিত সময়সীমা অনুযায়ী বর্ণিত কাজটি শতভাগ সস্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও বর্তমানে কাজটির ভৌত অগ্রগতি মাত্র ১৮%, যাহা চুক্তিপত্র পরিপন্থী। বর্ণিত কাজটি চুক্তি মোতাবেক যথাযথ অগ্রগতি অর্জনে ব্যর্থ হওয়ায় এবং কোন কোন ক্ষেত্রে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কর্তৃক একটানা দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ থাকায় ঠিকাচুক্তি অনুসারে চুক্তি বাতিলের বিষয়ে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করা হয়। ত‌বে এখনও পর্যন্ত কার্যাদেশ বা‌তিল কিংবা ফের কাজ শুরু‌র বিষ‌য়ে মাথা ব‌্যথা নেই কর্তৃপক্ষের। বা‌তি‌লের সুপা‌রি‌শের প‌রে মাত্র এক শতাংশ কাজ ক‌রে বন্ধ রে‌খে‌ছেন ঠিকাদার।

কা‌জের অনি‌শ্চয়তার পাশাপা‌শি এত কিছুর মধ্যেও বড় অং‌কের টাকা উঠিয়ে নেওয়ায় জনগ‌ণে নানা কৌতুহল দেখা দিয়েছে।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স জিয়াউল ট্রেডার্সের স্বত্তাধিকারী খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ২৮ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। তি‌নি বলেন, আমার লাইসে‌ন্সে হ‌লেও কাজ‌টি নেয় তৎকালীন এম‌পি বাবু। কা‌জের অগ্রগ‌তির বিষ‌য়ে তি‌নি (বাবু) ভা‌লো জা‌নেন। তি‌নি এ প্রতি‌বেদক‌কে সা‌বেক সংসদ সদস‌্য বাবুর সা‌থে কথা বল‌তে ব‌লেন।

আপনার লাইসে‌ন্সে কিভা‌বে অন‌্যজন কাজ কর‌ছে এ বিষ‌য়ে জান‌তে চাইলে জিয়া ব‌লেন, এ বিষ‌য়ে কর্তৃপক্ষ অবগত, আর তারাই কাজ‌টি এম‌পি বাবু‌কে দি‌য়ে‌ছেন।

এ বিষ‌য়ে সা‌বেক সংসদ সদস‌্য মোঃ আক্তারুজ্জামান বাবু’র মন্তব‌্য নেয়া সম্ভব হয়‌নি। তার ব‌্যবহৃত মোবাইল নম্ব‌র বন্ধ র‌য়ে‌ছে। তি‌নি আত্ম‌গোপ‌নে র‌য়ে‌ছে ব‌লে জানা যায়।

বাংলা‌দেশ মানবা‌ধিকার ব‌্যু‌রোর কয়রা শাখার সদস‌্য স‌চিব মোঃ কামাল‌ হো‌সেন ব‌লেন, একজন ঠিকা‌দা‌রের লাইসে‌ন্সে অন‌্য কা‌রো কাজ করার বৈধতা নেই। এছাড়া স্থানীয় সংসদ সদস‌্য তার নিজ এলাকায়‌ ঠিকাদারী কর‌লে কাজ কখনও ভা‌লো হয় না। অন‌্য ঠিকাদা‌রের লাইসে‌ন্সে এম‌পি থাকাকালীন আক্তারুজ্জামান বাবু কাজ‌টি করার সু‌যোগ কিভা‌বে পেল এটা বুঝলাম না। তি‌নি ক্ষমতার অপব‌্যবহার ক‌রে নামমাত্র কা‌জের মাধ‌্যমে বড় অং‌কের টাকা উত্তোলন ক‌রে‌ছেন। এটার তদন্ত হওয়া জরুরী। সময়মত ভবন‌টি নির্মাণ না হওয়ায় উপকূ‌লের অব‌হে‌লিত মানু‌ষরা তা‌দের মৌ‌লিক অ‌ধিকার স্বাস্থ‌্য সেবা থে‌কে বঞ্চিত হ‌চ্ছে। রাজ‌নৈ‌তিক লেজুরবৃত্ত না হ‌য়ে প্রকৃত ঠিকাদার দি‌য়ে দ্রুত কাজ করা‌নোর ব‌্যবস্থা করা উচিত।আর য‌দি বর্তমান ঠিকা‌দা‌র কাজ কর‌তে সক্ষম না হয় তাহ‌লে কার্যা‌দেশ বা‌তিল ক‌রে দ্রুত পুনরায় টেন্ডা‌রের ব‌্যবস্থার পাশাপা‌শি এ অবস্থার জন‌্য দায়ী‌দের বিরু‌দ্ধে আইনুরাগ ব‌্যবস্থা নেওয়ার দা‌বি জানান।

কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম বলেন, হাসপাতা‌লের ৩১ শয্যার ভবন‌টি ভে‌ঙে ফেলার প‌র থে‌কে চরম শয‌্য সংকট চল‌ছে। নতুন ভবন নির্মাণ অ‌তিব জরুরী। ক‌ক্ষের অভা‌বে চিকিৎসা সেবায় চরম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

স্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তর, খুলনার এক কর্মকর্তা ব‌লেন, য‌দিও আমরা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠা‌নের সা‌থে কাজ সম্প‌র্কে যাবতীয় যোগা‌যোগ ক‌রি, তারপ‌রেও আওয়ামী লীগ নেতা সা‌বেক এম‌পি বাবু ভাই কাজ‌টির দা‌য়ি‌ত্বে থাকায় আমা‌দের তদার‌কি বাঁধাগ্রস্ত হয়।

স্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তর খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী শাহরিয়ার হাসান মহিউদ্দিন বলেন, কাজে ধীরগ‌তির জন‌্য ইতোম‌ধ্যে কার্যা‌দেশ বাতিলের সুপা‌রিশ করা হ‌য়ে‌ছে। কাজটি অন্য কেউ কর‌লেও আমরা মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করি ও তাগিদ দিই।

এক প্রশ্নের জবা‌বে তিনি বলেন, যে পরিমাণ কাজ হয়, সেই পরিমাণ টাকা একজন ঠিকাদার নিতে পারে। ত‌বে কার্যা‌দেশ বা‌তিল হ‌লে অবশ‌্যই ক্ষ‌তি অনুযা‌য়ি জ‌রিমানা হ‌বে।

উল্লেখ‌্য, ৩১ শয্যাবিশিষ্ট কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ১৯৬৪ সালে স্থাপিত হয়। সেখানে ২০১১ সালে ১৯ শয্যার একটি ভবন নির্মাণ করা হয় এবং ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ করা হয়। পরে ৩১ শয্যাবিশিষ্ট পুরনো ভবন ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে ২০২২ সালে তা অপসারণ করা হয়।
একই বছ‌রের ১৬ আগস্ট ৩১ শয্যার তিনতলা ভবন নির্মাণে কার্যা‌দেশ দেয়া হয়। ২০২৩ সালের ১২ জুন প‌র্যন্ত কা‌জের মেয়াদ ছিল। ছয়তলা ফাউন্ডেশনের তিনতলা ভবন নির্মাণকাজের ব্যয় ধরা হয় ৯ কোটি ৭৬ লাখ ৭৬ হাজার ৫৮০ টাকা। কাজের মেয়াদ শেষে মাত্র ১১ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়। কাজের সন্তোষজনক অগ্রগতি না হওয়ায় গতি বাড়াতে বারবার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেয় খুলনা স্বাস্থ্য প্রকৌশলী দপ্তর। একপর্যায়ে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কাজের মেয়াদ বর্ধিত করা হয়।

কাজ‌টি টেন্ডা‌রের সময় খুলনা জেলা আওয়ামী লী‌গ নেতা মোঃ আক্তারুজ্জামান বাবু কয়রা-পাইকগাছার সংসদ সদস‌্য ছি‌লেন। ২০২৪ সা‌লের জাতীয় সংসদ নির্বাচ‌নে তি‌নি নৌকা প্রতিক না পাওয়ায় অংশগ্রহণ ক‌রেন নি।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!