খুলনা, বাংলাদেশ | ১৬ কার্তিক, ১৪৩১ | ১ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

বিল ডাকাতিয়া ঘের তলিয়ে বিপাকে মৎস্য চাষীরা

একরামুল হোসেন লিপু

এমনিতেই স্থায়ী জলবদ্ধতা। তার উপর কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিপাত। নিচু এলাকা হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে ডাঙ্গার পানি প্রবেশ করে। পানি নিষ্কাশনের খালগুলো নিয়মিত সংস্কার করা হয়না। তারপরও প্রতিবছর বিল ডাকাতিয়ার হাজার হাজার কৃষি এবং মৎস্যজীবী মানুষগুলো বিল ডাকাতিয়াকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে। কিন্তু শেষমেষ তাদের সে স্বপ্ন পানিতে তলিয়ে যায়।

জানা যায়, খুলনার ফুলতলা ও ডুমুরিয়া উপজেলার বিল ডাকাতিয়ায় অবস্থিত পোল্ডারের মোট এলাকা প্রায় ১৯ হাজার ৪৩০ হেক্টর। স্থায়ী জলাবদ্ধতার কারণে এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৯ হাজার হেক্টর বা মোট এলাকার প্রায় ৫০ শতাংশ স্বাভাবিকভাবে পানির নীচে তলিয়ে থাকে। ৮০ ‘র দশকে বিলটিতে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার হেক্টর জমিতে বছরে ৩ টি ফসল উৎপাদন হতো। ১৯৮৪ সালে বন্যায় বিল ডাকাতিয়া অঞ্চল প্লাবিত হয়। এরপর থেকে এ অঞ্চলের মানুষের জন্য বিলডাকাতিয়া অভিশাপ হয়ে দাঁড়ায়। পরবর্তীতে বিলের পানি নিষ্কাশনের জন্য খাল খনন করা হলেও খালগুলি নিয়মিত সংস্কার না করায় প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় কৃষিকাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ও মৎস্য চাষীরা।

গত কয়েকদিনের ভারী বর্ষণের ফলে তেলিগাতী মৌজার বিল ডাকাতিয়ার পাঁচ শতাধিক মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। বিপাকে পড়েছে এ সকল ঘের মালিকরা। তলিয়ে গেছে তেলিগাতী বরুইতলা বাইপাস টু শলুয়া রংপুর সড়কটি। সড়কটি দিয়ে যাতায়াতকারী মানুষের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। প্রতিবছর এ অঞ্চলের কৃষি এবং মৎস্যজীবী মানুষগুলো বিল ডাকাতিয়াকে নিয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখে। কিন্তু বর্ষা মৌসুমী এলেই তাদের সে স্বপ্ন পানিতে তলিয়ে যায়।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এ অঞ্চলের হাজার হাজার কৃষক এবং মৎস্য চাষী এবং ঘের মালিকদের দাবি খালগুলি নিয়মিত খনন করে পানি নিষ্কাশনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।

তেলিগাতী মৌজার বিল ডাকাতিয়ার ঘের মালিক আবজাল ফকির বলেন, প্রতিবছর বিল ডাকাতিয়ায় ৫ হাজার মাছের ঘের তলায় যায়। পানি সরার কোন ব্যবস্থা নেই। নদীতে পানি যাওয়ার খালগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। প্রতি বছর এ রকম তলায়। নদীর পাশে যে গেট আছে সেগুলো কোন কাজ করে না। এজন্য প্রত্যেক বছর আমাদের ঘের তলায় যায়। ১৪/১৫ বছর যাবৎ একইভাবে তলায় যায়। পানি সরে না। ডাঙ্গার পানি এসে বিলের ভিতর জমা থাকে। সরানোর লাইন আছে কিন্তু কেউ ব্যবস্থা করে না।

এ বিলের ঘের মালিক মিজানুর রহমান বলেন, তেলিগাতী মৌজার বিল ডাকাতিয়া প্রায় ৩ হাজার বিঘা জমিতে চাষাবাদ হয়। ঘের মালিক আছে ৫ শতাধিক। কোন বছর মাছ চাষ করে আমরা লাভবান হতি পারি না। প্রচুর পানি হয়। আমার নিজেরও সাড়ে তিন বিঘার মত একটা ঘের আছে। পানিতে তলায় গেছে। ঘেরে পানি ঢোকা বন্ধ করার জন্য দেড় লাখ টাকা খরচ করিছি। তারপরও পানি থেকে রেহাই পায়নি। আমার নিজের সাড়ে তিন লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে এভাবে সবার ক্ষতি হইছে।

ঘের মালিক জাকির ফকির বলেন, বিল ডাকাতিয়ার পানি সরার কোন ব্যবস্থা নেই। আমরা গরীব মানুষ ঘের বেড় করে এদিক সেদিক করে লোন মোন নিয়ে, কিস্তি দিয়ে, তারপর ঘেরে মাছ ছাড়ি। তা প্রতি বছর তলায় যায়। ৪/৫ বছর ধরে ডাকাতিয়া বিল তলায় যায়। গত বছর ডাকাতিয়া বিলে ধান হয়নি। এবছর ঘের ভেঁড়ি সব তলায় গেছে। আমার নিজের দুই বিঘা জমি তলায় গেছে। সকালে আইছি বিকাল ৫ টা এখনও দুপুরে ভাত খাইনি। ঘেরের পাড় বান্দে চান্দে বাড়ির যাতি যাতি সন্ধ্যার ভিতর ৪/৫ ইঞ্চি পানি বাড়ে যায়। পানি তো সরতি পারতিছে না। চারদিকের ডাঙ্গার পানি সরতি পড়তিছে না।

ঘের মালিক আসলাম শেখ বলেন, ডাকাতিয়া বিলে তেলিগাতী মৌজার ভিতর আমার ৪ বিঘার একটা ঘের আছে। পানির নিচে তলায় গেছে এক সপ্তাহ। মাছ সব বেরোই গেছে। যা খরচ হয়েছে সিকি পয়সাও উঠবে না। খালগুলো খনন করে না, যার জন্য প্রতিবছর বাসা মৌসুমে তলায় যায়।

ঘের মালিক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, তেলিগাতী মৌজার বিল ডাকাতিয়ায় তিন হাজার বিঘা জমি আছে। ৫’ শ৷ ‘র উপরে ঘের মালিক আছে। আমরা ঘের বেঁড়িতে মাছ চাষ করি। কিন্তু প্রতিবছর জলাবদ্ধতার জন্য আমরা ঘের মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হই। এই জলাবদ্ধতা থেকে আমরা রেহাই চাই। সরকারের কাছে আমাদের দাবি খালগুলো নিয়মিত সংস্কার করে পানি সড়ানোর ব্যবস্থা করা হোক। তা না হলে বউ ছেলেমেয়ে নিয়ে খায়ে পড়ে আমরা বাঁচবো কিভাবে?

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!