খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  গাজীপুরের শ্রীপুরে পিকনিকের বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে ৩ শিক্ষার্থী নিহত
  ঝিনাইদহে ২ ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ট্রাক চালকের মৃত্যু

‘বিভীষিকাময় অর্থনৈতিক নৈরাজ্য ও অস্থিতিশীলতার জন্য সরকারই দায়ী’

গেজেট ডেস্ক

বৈদেশিক মুদ্রা মজুদ, আমদানি ব্যয় বৃদ্ধিসহ দেশের অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক নিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেছেন, ‘বিএনপি মনে করে বর্তমান বিভীষিকাময় অর্থনৈতিক নৈরাজ্য ও অস্থিতিশীলতার জন্য জবাবদিহিহীন এই অবৈধ সরকারই দায়ী।’

আজ বুধবার বিকেলে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে গিয়ে সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই মন্তব্য করেন।

গত ১৬ মে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা পর্যালোচনা করা হয়। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে বৈঠকে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। আজ গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সেসব উদ্বেগের কথা তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এক ধরনের অস্থিতিশীলতা ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি, রপ্তানি এবং রেমিট্যান্স আয়ে ঘাটতির কারণে বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যে বড় ধরনের সমস্যা হচ্ছে। টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলারের দাম বৃদ্ধিসহ নানা কারণে অসহনীয় হয়ে উঠেছে জিনিসপত্রের দাম। মনে হচ্ছে আগামী দিনে পরিস্থিতি বেসামাল হয়ে উঠবে।’

তিনি বলেন, ‘রিজার্ভ নিয়ে আত্মতুষ্টির কিছু নেই। এটি দ্রুত কমে আসছে। গত আট মাসে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার থেকে ৪২ বিলিয়ন ডলারে নেমে গেছে। পরের দুই মাসে এটা আরও ৪ বিলিয়ন ডলার কমে যাবে। এভাবে যদি রপ্তানির তুলনায় আমদানি বাড়তে থাকে এবং সেটা রেমিট্যান্স দিয়ে পূরণ করা না গেলে অতি দ্রুত বাংলাদেশ ব্যাংকে রিজার্ভ শেষ হয়ে যাবে। রিজার্ভ শেষ হওয়ায় কি ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে শ্রীলঙ্কার চলমান পরিস্থিতি তার নিকৃষ্টতম উদাহরণ।’

বিএনপি মহাসচিব আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমদানি যে হারে বেড়েছে, রপ্তানি সে হারে বাড়েনি। আবার প্রবাসী আয়ও কমে গেছে। ফলে প্রতি মাসে ঘাটতি তৈরি হচ্ছে।’

অদূর ভবিষ্যতে দেশ শ্রীলঙ্কার মতো বিপদে পড়তে পারে বলেও তিনি শঙ্কা প্রকাশ করেন।

বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আইএমএফের সুপারিশ মোতাবেক সঠিক নিয়মে হিসাব করলে বর্তমানে বাংলাদেশের রিজার্ভ দাঁড়ায় ৩৫ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফের নিয়মে রিজার্ভ হিসাব করা হলে বাংলাদেশের হাতে আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো বৈদেশিক মুদ্রা আছে মাত্র সাড়ে তিন মাসের। যা একেবারেই অশনিসংকেত।’

‘এই মুহূর্তে সর্বজনীন ঐক্যের মাধ্যমে রাজপথে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলে অনতিবিলম্বে এই সরকারকে হটানোর বিকল্প নেই।’

‘টাকার দাম কমছে’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ডলারের দাম ১০০ টাকা ছাড়িয়েছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে। সরকার ৬ দশমিক ২২ শতাংশ মূল্যস্ফীতির কথা বলছে। কিন্তু এটি বাস্তবতার সঙ্গে আদৌ সংগতিপূর্ণ নয়। শহরের চেয়ে গ্রামে মূল্যস্ফীতি বেশি। খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের চেয়ে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি বেশি।’

‘অর্থনীতিবিদদের মতে, বর্তমানে মূল্যস্ফীতির হার ১২ শতাংশ। রিজার্ভ বিপজ্জনক পর্যায়ে চলে আসার কারণে টাকার দামও কমছে। সব কিছুর দাম বেড়ে যাচ্ছে। ক্রেতা সাধারণের ত্রাহি অবস্থা। তার উপরে সরকারের দলীয় সিন্ডিকেটের তাণ্ডবে ইতোমধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য বিশেষ করে পাম ও সয়াবিন তেলের দাম অনেক বেড়ে গেছে। গত তিন দিনে চালের দামও বেড়ে গেছে।’

‘মেগা প্রকল্প বন্ধের দাবি’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকার তাদের ব্যক্তিগত অর্থের ঝোলা ভর্তি করতে অনেকগুলো অপ্রয়োজনীয় মেগা প্রকল্প করছে। মেগা প্রকল্প মানেই মেগা দুর্নীতি। দেশের প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদরা এসব প্রকল্পকে সাদা হাতি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।’

‘এর মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, ঢাকা থেকে পদ্মাসেতু হয়ে যশোর ও পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প, চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারি হয়ে কক্সবাজার ও ঘুমধুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প অন্যতম। রাশিয়ার কাছ থেকে ১২ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়ে ১ লক্ষ ১৩ হাজার কোটি টাকা খরচ করে মাত্র ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের জন্য রূপপুর প্রকল্পটি কার স্বার্থে বাস্তবায়ন হচ্ছে তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন জোরালো হয়েছে।’

ঢাকা-যশোর-পায়রা পর্যন্ত নির্মাণাধীন রেলপথ এবং চট্টগ্রাম-দোহাজারি-কক্সবাজার, ঘুমধুম রেলপথ প্রকল্প দুইটি অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক না হওয়ায় প্রকল্প দুটি অনতিবিলম্বে বন্ধের দাবি জানান ফখরুল।

এর পাশাপাশি ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার বুলেট ট্রেন, দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, পূর্বাচলে ১১০ তলা বিশিষ্ট বঙ্গবন্ধু বহুতল ভবন কমপ্লেক্স, শরীয়তপুরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া দ্বিতীয় পদ্মা সেতু, নোয়াখালী বিমানবন্দর, দ্বিতীয় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রকল্প এবং ঢাকার বাইরে রাজধানী স্থানান্তরের প্রকল্প বন্ধের দাবি জানিয়েছে বিএনপির স্থায়ী কমিটি।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই মুহূর্তের বাস্তবতায় এই প্রকল্পগুলো বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য বিবেচিত হতে পারে না তা বোঝার জন্য অর্থনীতিবিদ হবার দরকার নাই। অনতিবিলম্বে এসব প্রকল্প মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলা হোক। তা না হলে শ্রীলঙ্কার ভাগ্য বরণের কোনো বিকল্প থাকবে না।’

মেগা প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচার এবং দেশকে বিদেশি ঋণ নির্ভর করে ফেলা হয়েছে বলেও দলের স্থায়ী কমিটি মনে করেন বলে জানান বিএনপি মহাসচিব।

খুলনা গেজেট/ টি আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!