বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে আগের অবস্থানের কথাই জানালেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর করা আবেদনটি ফৌজধারী কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী আগেই নিষ্পত্তি হয়ে যাওয়ায় তাকে বিদেশ যেতে অনুমতি দেয়ার আইনি কোনো সুযোগ নেই।
চলমান সংসদ অধিবেশনের তৃতীয় দিন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা বিষয়ে এ কথা বলেন আইনমন্ত্রী। তার দাবি, দেশেই চিকিৎসার সব সুযোগসুবিধা পাচ্ছেন বিএনপি প্রধান।
আনিসুল হক বলেন, ‘৪০১ ধারায় করা বেগম খালেদা জিয়ার আবেদনের নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। তিনি দেশে চিকিৎসার সার্বিক সুযোগ পাচ্ছেন। ৪০১ ধারায় একটা নিষ্পত্তিকৃত অর্ডার নিয়ে নতুন কোনো অর্ডার দেয়া যায় না।
‘খালেদা জিয়া যদি আবার কারাগারে যায় এবং আবেদন করেন তাহলে আবেদন পুনর্বিবেচনা করা যাবে। তার আগে এটা নিয়ে নতুন করে কোনো অর্ডার দেয়ার আইনি সুযোগ নেই।’
গত শনিবার বিকেলে খালেদা জিয়াকে গুলশানের বাসভবন ফিরোজা থেকে এভারকেয়ারে ভর্তি করানো হয়। শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হওয়ায় রোববার ভোরে তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসা চলছে তার।
খালেদার অবস্থা ভালো নয় জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মানবিক স্বার্থে হলেও দলীয় প্রধানকে বিদেশ নিয়ে যেতে সরকারের অনুমতি চেয়েছেন তিনি।
খালেদার সুস্থতা কামনায় ঢাকায় এক দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে ফখরুল বলেন, ‘তার পরিবার থেকে আবারও আবেদন করা হয়েছে। আমরা সরকারের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি অবিলম্বে তাকে বাইরে চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ দেয়া হোক। তার যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে সমস্ত দায়ভার এই সরকারকে বহন করতে হবে। তাই আমরা বলতে চাই আপনাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক। প্রতিনিয়ত তার শারীরিক অবস্থায় খারাপ হচ্ছে। বর্তমানে তিনি অত্যন্ত অসুস্থ অবস্থায় সিসিইউতে আছেন।’
গত মে মাসেও অসুস্থ খালেদাকে বিদেশ নিয়ে যেতে তার পরিবার ও দল থেকে সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছিল। সেবার আবেদন পর্যালোচনা করে আইনমন্ত্রী জানান, আইন অনুযায়ী বিদেশ যেতে চাইলে খালেদাকে ফের জেলে যেতে হবে।
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘সাজা মওকুফের ক্ষমতা সরকারের আছে। এ নিয়ে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় ছয়টি উপধারা আছে। এর মধ্যে একটিতে আছে সরকারের ক্ষমতা, সরকার কী করতে পারে। একজনের সাজা শর্ত ছাড়া সম্পূর্ণ মওকুফ করতে পারে অথবা শর্ত ছাড়া কিছুটা মওকুফ করতে পারে। আবার শর্ত সাপেক্ষে পুরোটা মওকুফ করতে পারে কিংবা কিছুটা মওকুফ করতে পারে বা সাসপেন্ড করতে পারে।
আনিসুল হক জানান, উপধারা-২ এ বলা আছে, যে কোর্ট সাজা দিয়েছে সেই কোর্ট সাজা মওকুফ করতে পারে, নাও পারে। উপধারাগুলোতে আরও অনেক কথা বলা আছে। এখানে কিন্তু কোথাও বলা নাই, একটা আবেদন যখন নিষ্পত্তি করে ফেলা হয়, সেই আবেদনটিকে আবার পুনরায় রিকনসিডার (পুনবিবেচনা) করতে পারবে। অর্থাৎ নিষ্পত্তিকৃত আবেদনটি পুনবিবেচনা করার কোনো সুযোগ নাই।’
৭৬ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ডিত। দণ্ড নিয়ে তিন বছর আগে তাকে কারাগারে যেতে হয়।
২০০৮ সালের ৮ মার্চ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয় তার। পরে উচ্চ আদালত সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করে। ওই বছরই জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় তাকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনা সংক্রমণ দেখা দেয়ার পর বিএনপি নেত্রীকে দেশের বাইরে না যাওয়া ও বাড়িতে বসে চিকিৎসা নেয়ার শর্তে ছয় মাসের জন্য দণ্ড স্থগিত করিয়ে মুক্তি দেয়া হয়। এরপর দফায় দফায় বাড়ানো হয় দণ্ড স্থগিতের মেয়াদ।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, হাঁটুর জটিলতা ছাড়াও নানা রোগে ভুগছেন বলে তার দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। ২০১৭ সালে যুক্তরাজ্যে তার চোখেও অপারেশন করা হয়।
খুলনা গেজেট/ এস আই