খুলনা, বাংলাদেশ | ১১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  মানবতাবিরোধী অপরাধ : চিফ প্রসিকিউটর দেশে না থাকায় ফখরুজ্জামান ও সাত্তারের জামিন শুনানি ২ সপ্তাহ পেছাল আপিল বিভাগ
  আজ থেকে জাতীয় ছাত্র সংহতি সপ্তাহ শুরু
  অ্যান্টিগা টেস্ট: শেষ দিনে বাংলাদেশের দরকার ২২৫ রান, হাতে ৩ উইকেট

`বিদেশি কোচদের বেতন ১২-১৫ লাখ, দেশিরা না খেয়ে মরে’

ক্রীড়া প্রতিবেদক

বাংলাদেশের ক্রিকেটে স্থানীয় কোচদের মূল্যায়ন কম—এই কথা বেশ পুরোনো। দেশের কোচদের গুরুত্ব না দিয়ে সবসময় মোটা টাকায় বিদেশ থেকে কোচ নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু সাকিব-মুস্তাফিজরা যেসব কোচের অধীনে আজকের তারকা ক্রিকেটার হয়ে উঠেছেন তাঁদের বিবেচনা হয় না। এমনকি সহকারী কোচ হওয়ার ভাগ্যও তেমন মেলেনা স্থানীয় কোচদের।

নিজের ফেসবুক পাতায় বিদেশি কোচ নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে নিজের মতামত তুলে ধরেছেন বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা। বিদেশি কোচ নিয়োগে কতটা লাভ হচ্ছে সেসব নিয়েও আলোচনা করেছেন তিনি। একই সঙ্গে স্থানীয় কোচদের প্রসঙ্গ তুলে মাশরাফী লিখেছেন, বিদেশি কোচদের ১২-১৫ লাখ টাকা বেতন দিয়ে আনা হয় অথচ আমাদের স্থানীয় কোচরা না খেয়ে মরেন।

লম্বা স্ট্যাটাসে বিদেশি কোচ নিয়োগের ব্যাপারে লিখেছেন মাশরাফী। সাবেক তারকা অধিনায়কের স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো—‘একটা কোচ যখন নিয়োগ দেওয়া হয় তার প্রসেস আসলে কী থাকে সেটা জানার খুব ইচ্ছা আমার। এ যাবতকালে প্রায় ৯-১০ জন কোচের সঙ্গে কাজ করেছি। আমি যতটুকু দেখেছি প্রত্যেকটা কোচ তার নিজের মতো করে কাজ শুরু করে, যেটা করাটাও স্বাভাবিক। কারণ একেকজনের কাজের ধরন একেকরকম। কিন্তু সবসময় দেখেছি প্রত্যেকটি কোচ তার নিজস্ব একজন বা দুইজন প্রিয় খেলোয়াড় বানিয়ে নেয়। পরে নির্বাচক, অধিনায়ক বা অন্য কেউ তাকে আর কিছুই বোঝাতে পারে না। বরং সম্পর্কগুলো জটিল হতে থাকে আর ঐ পছন্দের জন্য সে আবার দুইজনকে এমন অপছন্দ করা শুরু করে যে তাদের আর দেখতেই পারে না। একপর্যায়ে এমন জেদ শুরু করে যে প্রয়োজনে চাকরি ছেড়ে দিব- এমন কথা প্রকাশ্যেও শুনেছি কয়েকবার কোচের মুখে। আমার পয়েন্টটা হলো যে কোচের পছন্দ নির্দিষ্ট কিছু খেলোয়াড় হতেই পারে। সেটা সব কোচেরই হয়, অন্যান্য দেশেও হয়- এটাই স্বাভাবিক তবে কখন ও সেটা প্রকাশ্যে বুঝতে দেয় না, অনুমান করতে হয়। কারণ দলের সেরা ৩-৪ জন খেলোয়াড়ই শুধু ম্যাচ জেতায় না। আর জেতালেও আপনি একজনের জন্য আরেকজনকে ছোট করতে পারেন না। দর্শক বা সাংবাদিক অনেক কিছু লিখতে পারে, বলতেও পারে যেটা একদম নরম্যাল ব্যাপার। কোচ কে বলা হয়, ফাদার অফ দ্য সাইড। সে সবাইকে দেখে রাখবে, প্রয়োজনে কঠোর হবে আবার দলের স্বার্থে যাকে প্রয়োজন তাকে ব্যবহার করবে। তার সব কিছুই হতে হবে পজিটিভ। কারো প্রতি কঠোর, কারো প্রতি নমনীয়- এটা একরকমের বৈষ্যম্যতে রুপ নেয় আমাদের দেশে। যা গোছানো দলকে অগোছালো করে ফেলে।’

‘একপর্যায়ে তারা আবার নিজেদের দেশে না হলে আইপিএল বা আরো ভালো কোনো অফার পেয়ে চলে যাবে। কারণ এতো দিনে সে আমাদের দেশের ক্রিকেটকে নিয়ে অনেক এক্সপেরিমেন্ট করে নিজের অভিজ্ঞতা বাড়িয়েছে নিজের প্রোফাইল ও ভারী করেছে মাঝখান দিয়ে। আর বেতন তো নিয়েছে মাসে ১২-১৫ লাখ টাকা আর আমাদের কোচগুলো না খেয়ে মরে। গালিও দেখি আমাদের কোচরাই হজম করে। আর পরে ওনারা চলে গেলে আমরা পড়ি বিপদে। আবার নতুন কোচ, নতুন পরীক্ষা, নতুন দাবি মেটানো। এভাবেই চলছে বাংলাদেশে কোচদের যাওয়া আসা।’

‘এবার আবার আসি আমার প্রথম লাইনটায়, কোচ নিয়োগের সময় যে নতুন কোচের ইন্টারভিউ নেওয়া হয় সেখানে আসলে তাকে কী প্রশ্ন করা হয়? বা আদৌ কী করা হয় কোনো প্রশ্ন? নাকি শুধু জানতে চাওয়া হয় তোমার কী করার ইচ্ছা- হয়তো তখন সে কিছু পয়েন্ট তুলে ধরে ওখান থেকে নতুনত্ব কিছু পেলে চিন্তা করে দারুণ কোচ, কী সুন্দর প্ল্যান, এর মতো কোচই হয় না। আমার তো মনে হয় ভুল ওখানেই হয়ে যায় কারণ আমরা মানুষকে বোঝাতে সব সময় হাই প্রোফাইল কোচ খুঁজি, যা পরে আর কোনো কাজে আসে না। আমাদের প্রয়োজন আমাদের ক্রিকেট যে ফলো করে বা আমাদের ম্যাক্সিম্যাম খেলোয়াড়দের নিয়ে স্টাডি করে এসে ইন্টারভিউ দিচ্ছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে নুন্যতম ধারণা নিয়ে আসা। সেটা না হলে- ও তো বুঝবেই না একজন সাকিব, তামিম, মুশফিক, রিয়াদ তৈরি করতে কতো দিন লেগেছে বা অতীতে তাদের অবদান কী। একজন মুস্তাফিজ কীভাবে উঠে এসেছে। বারবার বলেছি, আবারও বলছি দলের আগে কখনোই কোন খেলোয়াড় হতে পারে না। ভালো না করলে বাদ পড়তেই হবে।’

‘অফ ফর্ম সব খেলোয়াড়ের জীবনেই যায়, বাদও পড়ে। কিন্তু ম্যানেজমেন্ট থেকে অপমানিত শুধু আমাদের দেশেই বেশি হয়। পারর্ফম না করলে বাদ দেবেন স্বাভাবিক, আবার তাকে তো সহযোগিতা করতে হবে কীভাবে তাকে ফর্মে আনা যায় বা তাকে মেন্টালি কীভাবে সাপোর্ট করা যায় কোনোভাবেই আপনি বুঝতে দিতে পারেন না যে আপনি তাকে আর আপনার সময়কালে দেখতে চান না। এটার কারণ একটাই কোন কোচই আমাদের দেশে কাজ করার আগে আমাদের দেশের ক্রিকেট ফলোয়ার না। চাকরির জন্য আসে শেষ হলে চলে যায়। তাই আমার মনে হয়- হাই প্রোফাইল নয় আমাদের প্রয়োজন, আমাদের কোচ, বাংলাদেশের কোচ।’

এই স্ট্যাটাসের শেষে মাশরাফী লিখে দিয়েছেন, ‘একদম নিজস্ব মতামত আপনাকে মানতে হবে তা বলিনি।’

খুৃলনা গেজেট/ টি আই

 




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!