খুলনা, বাংলাদেশ | ২৫ কার্তিক, ১৪৩১ | ১০ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  বাড়ছে উপদেষ্টা পরিষদের পরিধি, সন্ধ্যায় শপথ
  আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সারাদেশে ১৯১ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন

বিএল কলেজ : অপর্যাপ্ত আবাসন, পরিবহনসহ নানা সংকটে শিক্ষার্থীরা

একরামুল হোসেন লিপু

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্ববৃহৎ বিদ্যাপীঠ সরকারি ব্রজলাল কলেজ (বিএল কলেজ)। বৃহত্তর খুলনার উচ্চ শিক্ষার হৃদপিণ্ড। এটি এ অঞ্চলের শতাব্দীর প্রাচীন এবং একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের কলেজ। ৪১ একর জায়গার উপর কলেজটি প্রতিষ্ঠিত। বর্তমানে কলেজটিতে ২৫ সহস্রাধিক ছাত্র-ছাত্রী অধ্যায়নরত। ১৯০২ সালে দৌলতপুর ভৈরব নদীর কূল ঘেঁষে কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১২০ বছরের ঐতিহ্যবাহী এ কলেজটিতে  আবাসিক সমস্যা বিরাজমান। ২৫ সহস্রাধিক ছাত্র-ছাত্রীর জন্য ৮ টি হলে আবাসন সুবিধা রয়েছে মাত্র সাড়ে ৭’ শ ছাত্র- ছাত্রীর। কলেজের অধ্যক্ষ, শিক্ষক কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের জন্য নেই কোন আবাসন ব্যবস্থা। ২৫ সহস্রাধিক ছাত্র-ছাত্রী পরিবহনের জন্য রয়েছে মাত্র ৬ টি বাস। যা প্রয়োজনের তুলনায় পর্যাপ্ত নয় বলে ছাত্র ছাত্রীদের অভিযোগ।

কলেজের একটি সূত্র জানায়, দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে বিভিন্ন কারণে ভর্তি হতে না পারা এ অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় প্রথম থাকে সরকারি বিএল কলেজ।  কলেজটির শিক্ষার গুণগত মান, সামগ্রিক শিক্ষার পরিবেশ ইতিবাচক হওয়ায় ছাত্রী-ছাত্রীদের ভর্তি হওয়ার পছন্দের তালিকায় শীর্ষে থাকে কলেজটি। কলেজটিতে উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক পাস, সম্মান, এবং স্নাতকোত্তর পর্যায় পর্যন্ত পাঠদান করা হয়। বর্তমানে কলেজটিতে উচ্চ মাধ্যমিকসহ ২১ টি বিষয়ে স্নাতক সম্মান এবং ২২ বিষয়ে স্নাতকোত্তর কোর্সে ২৫ হাজার ৬০০ ছাত্র-ছাত্রী অধ্যায়নরত আছে।

১৯০২ সালে ২ টি টিন সেড ঘরে ক্লাস চালুর মধ্য দিয়ে কলেজটির যাত্রা শুরু হয়। ১৯০২ সাল থেকে ২০২৩ সাল। মাঝখানে কেটে গেছে ১২০ বছর। ১২০ বছরের ব্যবধানে কলেজটির একাডেমিক ভবনসহ অবকাঠামো অনেক উন্নয়ন হয়েছে। উন্নয়ন হয়নি শুধু আবাসিক হল। নির্মিত হয়নি নতুন কোন ছাত্রাবাস।

সরজমিনে ঘুরে দেখা যায় কলেজের ৫ টি ছাত্রাবাসের অবস্থা খুবই নাজুক। জরাজীর্ণ, ঝুঁকিপূর্ণ এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ বিরাজমান। শহীদ তিতুমীর, ড.জোহা এবং হাজী মহসীন হলের প্রায় ৩’শ ছাত্র জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে হলে থেকে পড়াশোনা করছে। কবি কাজী নজরুল ইসলাম এবং সুবোধ চন্দ্র হলের ছাত্ররা টিনের চালের গরম সহ্য করে হলে অবস্থান করছে।

২৫ সহস্রাধিক ছাত্র-ছাত্রীর জন্য ৮ টি আবাসিক হলে আবাসন সুবিধার রয়েছে মাত্র সাড়ে ৭ ‘শ ছাত্র-ছাত্রীর। এর মধ্যে ৫ টি ছাত্রাবাসে ৪৩১ জন ছাত্র এবং ৩ টি ছাত্রীনিবাসে ৩১৯ জন ছাত্রী আবাসন সুবিধা পাচ্ছে। যা প্রয়োজনের তুলনা খুবই নগণ্য। ২০২২ সালে সর্বশেষ বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব নামে ১টি ছাত্রীনিবাস তৈরি করা হয়। দক্ষিণাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ঐতিহ্যবাহী এ কলেজটিতে পড়াশুনার আশায় ভর্তি হয়ে আবাসন সুবিধা না পেয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের অনেক বিড়ম্বনা এবং ভোগান্তি পোহাতে হয়।

বাংলা তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে খুলনা গেজেটকে বলেন, কলেজের অভ্যন্তরে আবাসন সুবিধা থাকলে আমরা স্বাচ্ছন্দ, নিরাপদ এবং কম খরচে হলে অবস্থান করতে পারতাম। একই অভিমত ব্যক্ত করেন অর্থনীতিতে অনার্স পড়ুয়া চতুর্থ বর্ষের তিন শিক্ষার্থী।

 

২৫ সহস্রাধিক ছাত্র-ছাত্রী পরিবহনের জন্য বাস রয়েছে মাত্র ৬ টি। প্রতিদিন নওয়াপাড়া থেকে ডুমুরিয়া পর্যন্ত ৬ টি রুট থেকে ছাত্র ছাত্রী আনা নেওয়া করা হয়। প্রতিটি ৭০ সিটের বাসে ১৩০ থেকে ১৪০ জন ছাত্র-ছাত্রী গাদাগাদি করে আনা নেওয়া করা হয় বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাসের একজন চালক জানান। এ ছাড়া কলেজের অধ্যক্ষ, ১৮০ জন শিক্ষক এবং ৪ শতাধিক কর্মকর্তা কর্মচারীর জন্য নেই কোন আবাসিক সুবিধা। প্রকট জনবল সংকট রয়েছে। সরকারি বরাদ্দ দেওয়া কর্মচারী পর্যাপ্ত নয়। আউটসোর্সিংয়ের কর্মচারী দিয়ে চলছে কলেজ পরিচালনা কার্যক্রম।

সমস্যা গুলো নিয়ে নিয়ে মোবাইল ফোনে কথা হয় কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক শরীফ আতিকুজ্জামান সাথে। তিনি খুলনা গেজেটকে বলেন , নতুন হল নির্মাণ, হলগুলোর উন্নয়ন বা সংস্কারের জন্য কলেজের নিজস্ব কোনো ফান্ড নেই। সরকার হলগুলোর উন্নয়ন এবং সংস্কারের জন্য প্রচুর অর্থ বরাদ্দ দিয়ে থাকে। কিন্তু সেটা প্রয়োজনের তুলনায় কিছুটা অপ্রতুল। কলেজে সরকারিভাবে পরিবহনের কোন ব্যবস্থা নেই। আমাদের (নিজস্ব) ছাত্রদের অর্থায়নে ক্রয়কৃত ৬ টি বাস রয়েছে যেগুলোর চালকদের বেতন, জ্বালানি খরচ, রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ প্রতিমাসে কলেজের নিজস্ব অর্থায়ন থেকে ১০ লক্ষ্য টাকা ব্যয় মেটাতে হয়। ছাত্র-ছাত্রী পরিবহন ১টা বাস ক্রয় করতে কমপক্ষে ৪২ লক্ষ টাকা লাগে। এই মুহূর্তে আমাদের সেই সক্ষমতা নেই। চেষ্টা করছি কলেজের জন্য সরকারিভাবে ছাত্র-ছাত্রী পরিবহনের জন্য বাস পাওয়া যায় কিনা।

তিনি বলেন, সরকারিভাবে কলেজ পরিচালনার জন্য যে কর্মচারী বরাদ্দ দেওয়া হয় সেটা দিয়ে কোনক্রমেই কলেজ পরিচালনা করা সম্ভব নয়। কলেজে ১৭৪ জন আউটসোর্সিংয়ের কর্মচারী আছে। যাদের বেতন ভাতা বাবদ প্রতি মাসে কলেজের নিজস্ব ফান্ড থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করতে হয়।

 

খুলনা গেজেট/লিপু




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!