মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে কথা হয় খুলনার বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মো. জাফর ইমাম সঙ্গে। তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলনের সময়ে আমি জিলা স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ছিলাম। রাষ্ট্রভাষার জন্য আন্দোলন শুরু হলো। এই আন্দোলনে খুলনায় নেতৃত্বে ছিলেন বিএল কলেজের ছাত্ররা। বিএল কলেজ থেকে ছাত্ররা শাটল ট্রেনে করে খুলনায় চলে আসতো। স্কুলে এসে তারা ছাত্রদেরকে আহ্বান জানাতো যোগদানের জন্য। আমিও যোগদান করেছি। রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই এই স্লোগান দিয়েছি।
তিনি বলেন, আমি ও আমার বড় ভাই মঞ্জুরুল ইমাম একসঙ্গে পড়তাম জিলা স্কুলে। তখন আমরা এইটুকু বুঝতে পেরেছি যে রাষ্ট্রভাষা বাংলা আমাদের প্রাণের দাবি। বাংলা ভাষায় কথা বলবো, বাংলা ভাষায় পরিচয় দিব, রাষ্ট্রীয় কাজে বাংলা ভাষার প্রয়োগ করবো। এটা আমাদের সকলের কামনা। খুলনার কিছু ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল। নুরুল ইসলাম, কেএম হাসান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। তারা ঢাকা থেকে এসে আন্দোলনকে বেগবান করতেন। এম নুরুল ইসলাম দাদু ভাই আন্দোলন করেছেন। তখন মেয়েদের মধ্যেও কিন্তু একটা জাগরণ ছিল। রাজ্জাক আলীর স্ত্রী মাজেদা আপা তখন গার্লস কলেজের ছাত্রী ছিলেন। আন্দোলনটা প্রবীণরা যতোটা গ্রহণ করেছিল, তার থেকে অনেক বেশি নবীনরাই গ্রহণ করেছিল, নেতৃত্ব দিয়েছিল এবং ছাত্ররাই এই আন্দোলনের সাথে ছিলেন।
ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় গোলাগুলি হরো, তখন খবরের কাগজ সাথে সাথে আসতো না, সেই সময় টেলিভিশনও ছিল না। রেডিওতে কিছুটা ছিল, সেটাও সরকার নিয়ন্ত্রিত। যার ফলে প্রকৃত খবর আমরা পাচ্ছিলাম না। এই টুকু শোনা যাচ্ছিল যে ঢাকার রাজপথ রক্তে লাল হয়ে গেছে। তখন একদিন দেখি যে একটি প্লেন খুলনার আকাশ দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর পোস্টার ছাড়ছে। পোস্টার আকাশ থেকে ভেসে ভেসে নিচে আসলে আমাদের আগে পাওয়ার একটা ঝোঁক ছিল। তখন আমরা ওর পেছনে দৌড়াতাম, সংগ্রহ করে পড়তাম। ওখানে দাবি করা ছিল যে সেরকম মারাত্মক কিছু না, সরকারের প্রচার এটি আরকি। প্রকৃতপক্ষে জিনিসটাকে আমরা মারাত্মকভাবে কিছু না মনে করি সেরকম একটা প্রচার সরকারের পক্ষ থেকে ছিল।`