লাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ ১ সেপ্টেম্বর। দেশের অন্যতম বৃহত্তম এই দলটি পা রাখবে ৪৫ বছরে। ১৯৭৮ সালের এই দিনে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ও ইসলামী মূল্যবোধ সামনে রেখে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এই দল গঠন করেন।
টানা তিন দফায় ১৫ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির নেতাকর্মীরা অনেক আগে থেকেই কোণঠাসা। ওয়ান-ইলেভেনের পর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না বিএনপি। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যানের পর বড় আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি দলটি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বড় আন্দোলন গড়ে তুলে দাবি আদায়ের চেষ্টা করছে তারা। তবে, এখন কর্মসূচি চূড়ান্ত করতে পারেনি দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে বিএনপি রাজপথে থাকার চেষ্টা করছে। দীর্ঘ দিন ক্ষমতার বাইরে থাকায় নানা সংকটের মুখে দলটি। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত দলটির নেতাকর্মীরা বিভিন্ন মামলায় বিপর্যস্ত। চলমান পরিস্থিতিতে কোনোভাবেই ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না তারা। ফলে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত এ দলটিকে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান প্রথমে ১৯৭৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল বা ‘জাগদল’ নামে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন। একই বছরের ১ মে সমমনা দল ও রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে গঠন করেন জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট। ১৯৭৮ সালের ২৮ আগস্ট ‘জাগদল’ বিলুপ্তির ঘোষণা দেন।
তিন দিন পর ১ সেপ্টেম্বর ঢাকার রমনা রেস্তোরাঁ প্রাঙ্গণে সংবাদ সম্মেলন করে জিয়াউর রহমান নতুন দল হিসেবে বিএনপির গঠনতন্ত্র ও কর্মসূচি ঘোষণা করেন। প্রতিষ্ঠার ছয় মাসের মাথায় ১৯৭৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ২০০টি আসন লাভ করে।
বিএনপির গঠনতন্ত্র তৈরির প্রক্রিয়ার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন নয়জন। তাঁদের মধ্যে জিয়াউর রহমান ছাড়া যুক্ত ছিলেন বিচারপতি আবদুস সাত্তার, ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী।
এর আগে উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর জোর দিয়ে ১৯৭৭ সালের ২২শে মে ‘আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে’ জেনারেল জিয়া ১৯ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এর মাধ্যমে পথচলা শুরু করে বিএনপি। ১৯৭৮ সালের ২৮ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণা করা হয়। জুন মাসে অনুষ্ঠিত সে নির্বাচনে জিয়াউর রহমান ৭৬ দশমিক ৩৩ ভাগ ভোট পেয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।
এদিকে, দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ভার্চুয়াল আলোচনাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি।
কর্মসূচি : আজ দুপুর ১২টায় শহীদ জিয়াউর রহমানের সমাধি প্রাঙ্গণে বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ফাতেহা পাঠ ও পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ অনুষ্ঠান। এরপর বেলা ৩টায় নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শোভাযাত্র শুরু হবে। কর্মসূচি সফল করতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা উপস্থিত থাকবে।
খুলনার কর্মসূচি : বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষির্কী উদযাপনে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে দলটির খুলনা মহানগর ও জেলা শাখা।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, সুর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে খুলনা নগরীর কেডি ঘোষ রোডের দলীয় কার্যালয়ে দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন, বিকেল সাড়ে ৩টায় দলীয় কার্যালয়ের সামনে জমায়েত এবং সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে নগরীতে র্যালি। খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপি যৌথভাবে এসব সকল কর্মসূচি পালন করবে। তবে এবারই প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজনে বেলুন বা ফেস্টুন উড়নো হবে না। তার পরিবর্তে সারা দেশে শাসক দলের নেতাকমীদের হামলা ও পুলিশের গুলিতে নিহত ও আহতদের ছবি সম্বলিত ব্যানার ফেস্টুন ও প্লাকার্ড নিয়ে মিছিল করবেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।
খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা জানান, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন স্মরণকালের বৃহত্তম গণজমায়েত সৃষ্টি করে রাজপথে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল হবে। বিএনপি এবং সকল অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের অন্তত ১৫ হাজার নেতাকর্মী এই সমাবেশে যোগ দেবে। তাদের হাতে থাকবে হামলা-নির্যাতনে আহত রক্তাক্ত নেতাকর্মীদের ছবি। ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগকৃত দলীয় কার্যালয়ের চিত্র। এটাই সরকারের দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ।
খুলনা গেজেট /এমএম