খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  মার্কিন শ্রম প্রতিনিধি দল ঢাকা আসছে আজ

বাড়িতেই তৈরি করুন এক চিলতে রঙিন প্রকৃতি

লাইফ স্টাইল ডেস্ক

আসছে শীত। ফুটবে নানা রকম ফুল। কিন্তু জায়গা আর জমির বড়ই অভাব। কারণ, ছোট্ট বাড়ি কিংবা ফ্ল্যাট। তাই এক টুকরো জমির জন্য আর সাধের বাগানের জন্য ভরসা বারান্দা কিংবা ছাদ। তাই কীভাবে তৈরি হবে সেই শখের বাগান। আর ফ্ল্যাটের বারান্দা সাজবে মরশুমি ফুলে। চলুন জেনে নিই-

বাঞ্ছারামের সেই বাগানের কথা মনে আছে নিশ্চয়ই – সেই রকম একটা বাগানে শখ কার না হয়! আজকের দিনে বাধ সাধে জায়গায়। শহরতলির ফ্ল্যাট বা বাড়ির পরিসরে বারান্দার জন্য বরাদ্দ জায়গাটুকু সত্যিই কম। কিন্তু তাতে কী? তার জন্য ইচ্ছে পূরণে খামতি থাকবে কেন? হোক না একচিলতে বারান্দা, কিছু প্ল্যানিং এই হতে পারে আপনার সাধ ও সাথে মেলবন্ধন-বারান্দায় বাগান।

যা করণীয়-
সকালের চা থেকে অফিস ফেরত ক্লান্তি – অবসরযাপনের প্রিয় সঙ্গী বারান্দা। যদিও পৃথিবীটা ছোট হতে হতে বারান্দা এখন ব্যালকনির রূপ নিয়েছে। একটু ম্যানেজমেন্ট এর সাহায্যে এখানেই বানিয়ে ফেলুন সাধের বাগান। আপনার ব্যালকনির জায়গা অনুযায়ী কিনে ফেলুন কিছু সুন্দর টব। এখন বাজারে বেশ সুন্দর টব পাওয়া যায় – দেখতে একদম অন্যরকম। হস্তশিল্প মেলাতেও এই ধরনের টব পেয়ে যাবেন। স্পেস ম্যানেজমেন্ট করতে হ্যাঙ্গিং টবও নিতে পারেন – যা আপনার ব্যালকনির রেলিঙে ঝুলিয়ে দিতে পারেন।

এছাড়া অনলাইনে প্লাস্টিকের কালারফুল, ফ্যান্সি সুন্দর টবও পেয়ে যাবেন। ছোট ব্যালকনির কার্নিশে আয়রনের পট হোল্ডার রেখে তাতেও টব বসাতে পারেন। সারাদিনে অন্তত দু’ঘণ্টা রোদ যাতে গাছ পায় সেদিকে খেয়াল রাখবেন। না হলে টব সরিয়ে কমপক্ষে এক দিন অন্তর গাছ রোদে দিন। মনে রাখবেন, যে কোনও গাছের প্রাথমিক শর্ত হল রোদ ও জল। মাঝে মাঝে সার দেওয়ার সাথে সাথে টবের মাটি আলগা করে দিন। সেক্ষেত্রে কেমিক্যাল ফার্টিলাইজার এর কথা না ভেবে ন্যাচারাল শাক সবজির খোসাকেও বেছে নিতে পারেন। মাঝে মাঝে গাছের পাতা ও ডাল প্রয়োজন অনুযায়ী ট্রিম করে নেবেন। তবে ট্রিমিং এর সঠিক সময় বসন্তকাল। এতে গাছ উচ্চতায় কম বেড়ে ঘন হবে।

অনলাইনে কিনে নিতে পারেন বাহারি প্ল্যান্ট ট্রিমার। ডাল ট্রিম করার সাথে সাথে পোকায় খাওয়া পাতা ও ডাল অবশ্যই কেটে ফেলবেন – না হলে তা অন্য গাছে ছড়িয়ে পড়বে। পাতা ফ্রেশ রাখার জন্য জলের সাথে এপসম সল্ট মিশিয়ে স্প্রে করুন। লতানে কিছু পাতাবাহার গাছ লাগাতে পারেন। জায়গাও লাগে কম, দেখতেও খুব সুন্দর।

ঘাসের আগায়
নীল আকাশের নিচে বিস্তৃত সবুজ ঘাস যেন একটা অনুভূতি। এখন এই অনুভূতি ও হতে পারে চিরন্তন, আপনারই বাড়ির বারান্দায়। স্বল্প কিছু ব্যবস্থাপনায় বানিয়ে ফেলুন লন। আপনার প্রয়োজন মতো সঠিক মাপে গ্যালভানাইজড কন্টেনারে হাফ থেকে এক ইঞ্চি উঁচু করে বিছিয়ে দিন নুড়ি পাথর, এতে জল ড্রেনেজ এর সুবিধা হবে। এর ওপর দুই থেকে চার ইঞ্চি সার মেশানো মাটি বিছিয়ে দিন। এর ওপর ভেজা মাটিতে ছড়িয়ে দিন ইচ্ছেমতো ঘাসের বীজ। সেগুলো হাত দিয়ে খানিকটা চেপে দিন। প্রথম দিকে এতে জল দিতে হবে প্রতিদিন এবং অবশ্যই সারাদিনে কমপক্ষে দু’ঘণ্টা রোদ ভীষণ জরুরি। বারান্দায় যদি পর্যাপ্ত রোদ না আসে অন্য জায়গায় কন্টেনার রোদে বসিয়ে দিন। মোটামুটি এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যেই চারা বেরিয়ে আসবে। ইচ্ছেমতো সপ্তাহে একবার করে গ্রাস কাটার সিজার দিয়ে ট্রিম করে নিন আর উপভোগ করুন সবুজ ঘাসের সতেজতা।

যে গাছ লাগাতে পারেন
সাধারণত এমন কিছু গাছ লাগান যার মেইনটেন্যান্স কম এবং খুব কম পরিশ্রমেই বেড়ে উঠতে পারে। এক্ষেত্রে সবার আগে উঠে আসে গাঁদার কথা। খুব পরিচিত হলেও এর সৌন্দর্য কিন্তু এড়িয়ে যাওয়ার নয়। খুব ছোট টবের মধ্যে সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠে বেগোনিয়া। এর অতিরিক্ত রোদ ও জলের প্রয়োজন নেই। প্যানসিও ছোট টবে সুন্দর বেড়ে ওঠে। তবে অতিরিক্ত রোদ না হলেও অতিরিক্ত জল কিন্তু এর প্রয়োজন। পাতাবাহার এর মধ্যে স্নেক প্ল্যান্ট ও অ্যালোভেরা, মানিপ্লান্ট, সিঙ্গোনিয়াম, স্পাইডার প্ল্যান্ট আপনার বাগানকে সমৃদ্ধ করে তুলবে। এছাড়া রংবেরঙের পিটুনিয়া, ক্রিপিং রোজও লাগাতে পারেন।

প্রয়োজনীয় টিপস
১. গাছের যত্ন করতে গিয়ে দেখা যায় প্রায়ই বিভিন্ন পোকামাকড় এর জন্য গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। হাফ লিটার জলে সাধারণ কোনও হ্যান্ডওয়াশ কয়েক ফোঁটা গুলে গাছের পাতা ও ডাল ভাল করে ধুয়ে দিন। একদিনেই উপকার পাবেন।

২. গাছের যত্নে সার ভীষণ প্রয়োজন। বাজার চলতি রাসায়নিক সার না কিনে তৈরি করে নিন প্রাকৃতিক সার। প্রতিদিনের ফেলে দেওয়া মরশুমি সবজির খোসা, সাথে কলার খোসা মিক্সিতে জল দিয়ে পেস্ট করে নিন। জলের সাথে এই পেস্ট ১০:১ অনুপাতে মিশিয়ে দশ দিন অন্তর গাছের গোড়ায় দিন। উপকার পাবেন।

প্রয়োজনীয় তথ্য তো পেলেন, যেটা বাকি থাকল সেটা আপনার পরিশ্রম আর সময়। আর সামনে যখন শীত, তখন এখন থেকেই প্ল্যানিং শুরু করে দিন বাগানের। দেখবেন সামান্য পরিচর্যায় আপনার বারান্দায় রোদ্দুর… থুড়ি বাগান।

এছাড়া সুযোগ থাকলে বাড়ির ছাদেও কিন্তু সবজি আর ফলের চাষ করা যায় সহজেই। ব্যালকনিতে যেমন জায়গার অভাব, পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের চলাচল না থাকা ইত্যাদি সমস্যা থাকে, ছাদে তা নয়। উপযুক্ত মাটি আর যত্ন পেলেই গাছ বেড়ে উঠবে তড়তড়িয়ে। এখন ভেজালের ভিড়ে খাঁটি জিনিস খুঁজে পাওয়াই মুশকিল। সেক্ষেত্রে নিজের হাতে লাগানো গাছের ফল বা সবজি হলে সেই চিন্তা আর থাকবে না। প্রতিদিন ভেজালমুক্ত খাবারই পাতে তুলতে পারবেন।

সাধারণ মাটিতে আর বাড়ির ছাদে গাছ লাগানো কিন্তু একই কথা নয়। ছাদে গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে নিতে হয় বাড়তি কিছু যত্ন। আপনি কী গাছ লাগাতে চাইছেন তার ওপর নির্ভর করছে কতটুকু জায়গায় কিভাবে লাগাবেন। বড় গাছ হলে গাছ লাগানোর পাত্রটিও বড় হতে হবে।

টবে গাছ লাগানোর সুবিধা হল খুব সহজে এগুলো স্থানান্তারিত করা যায়। সাধারণত যে আকারের টব বাসাবাড়িতে থাকে, তার থেকে বড় মাপের টবে গাছ লাগান। তাহলে ফলন ভালো হবে। এক্ষেত্রে সিমেন্টের তৈরি টব ব্যবহার করতে পারেন। ব্যবহার করতে হবে পর্যাপ্ত জৈব সার। ১৬-১৮ ইঞ্চি মাপের একটি টবের জন্য জৈব সারের পাশাপাশি ১০০ গ্রাম টিএসপি এবং ৫০ গ্রাম এমওপি সার ভালোভাবে মিশিয়ে ১০-১২ দিন রেখে দিতে হবে। এর আগে কিন্তু টব ভরাট করা যাবে না।

ছাদে গাছ লাগানোর জনপ্রিয় একটি পদ্ধতি হল হাফড্রাম। এক্ষেত্রে হাফড্রামের নিচে ছিদ্র করে সেখানে এক ইঞ্চি পরিমাণ উচ্চতায় ইটের টুকরো বসাতে হয়। তার উপরে এক ইঞ্চি পরিমাণ জৈব সার বা পচা গোবর দিতে হবে। ফলে গাছের গোড়ায় অতিরিক্ত পানি জমে থাকবে না কখনই। জৈব সারের পাশাপাশি প্রতিটি ড্রামে ২০০ গ্রাম টিএসপি, ১০০ গ্রাম এমওপি ব্যবহার করতে পারেন। শাক-সবজি বা ফুলের ক্ষেত্রে ছোট বা মাঝারি টব হলেও চলে তবে ফলের গাছ হলে পাত্র বড় হলেই সুবিধা বেশি।

ছাদের চারদিকে ২ ফুট প্রস্থের দুই পাশে ১.৫ ফুট উঁচু দেয়াল ৩ ইঞ্চি গাঁথুনির নেট ফিনিশিং ঢালাই দিয়ে তৈরি করে তার মাঝের জায়গায় প্রথমে এক ইঞ্চি ইটের সুড়কি বা খোয়া, পরের এক ইঞ্চি গোবর সার দেয়ার পর বাকি অংশ দুই ভাগ মাটি ও এক ভাগ গোবরের মিশ্রণ দিয়ে ভরাট করে স্থায়ী বেড তৈরি করা হয়। এখানে মোটামুটি বড় আকারের ফলের গাছ থেকে শুরু করে সবরকম গাছই লাগানো যায়।

খুব বেশি বড় আকারের গাছ ছাদে লাগাবেন না। গাছ থেকে বেশি ফল পেতে হাইব্রিড জাতের ফলদ গাছ লাগাতে পারেন। আম্রপালি ও মলি­কা জাতের আম, পেয়ারা, আপেল কুল, আতা, আমড়া, লেবু, ডালিম, পেঁপে, জলপাই, করমচা, শরিফা ইত্যাদি গাছ লাগাতে পারেন। ভালো মানের গাছ না হলে কিন্তু ফলও ভালো হবে না। তাই গাছ কেনার আগে দেখেশুনে তবেই কিনতে হবে। বিভিন্ন ফলের গুটি কলম, চোখ কলম ও জোড়া কলম পাওয়া যায় নার্সারিতে। ছাদে লাগানোর জন্য এরকম কলমের চারা সংগ্রহ করতে পারেন। সবজি ও ফুলের ক্ষেত্রে যা কিছু পছন্দ, তাই চাষ করতে পারেন।

ছাদে গাছ লাগানোর পরে নিয়মিত যত্নও নেয়া চাই। কারণ গাছে সঠিকভাবে পুষ্টি না পৌঁছালে ফলন ভালো হবে না। এমনকি গাছ মরেও যেতে পারে। জানতে হবে সার দেয়ার সঠিক সময় ও পরিমাণ। পানি নিষ্কাশনের পথও রাখতে হবে। নয়তো গোড়ায় পানি জমে গাছ মরে যেতে পারে। নিয়মিত গাছ পরিষ্কারও করতে হবে। আপনি যতটা যত্ন নেবেন, গাছও ততটাই সুন্দর হয়ে উঠবে। চোখের ও মনের প্রশান্তির জন্য এতটুকু আপনি করতেই পারেন।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!