খুলনা, বাংলাদেশ | ১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৬ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  প্রীতি ম্যাচ : মালদ্বীপকে ২-১ গোলে হারাল বাংলাদেশ, সিরিজ শেষ হলো ১-১ সামতায়
  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৮ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৯৯৪
  আগামীর বাংলাদেশ হবে ন্যায়বিচার, মানবাধিকার, বাক স্বাধীনতার : ড. ইউনূস
  জুলাই-আগস্টে নিহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশে সময় লাগবে : উপদেষ্টা আসিফ
সফলতার গল্প

বাস হেলপার থেকে ফ্যাক্টরীর মালিক দুলাল ফরাজী

শহীদুল ইসলাম, বাগেরহাট

সফল হওয়ার পিছনে ইচ্ছা শক্তি কর্মদক্ষতা দুলাল ফরাজীর ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছে। একসময় বাসের হেলপার হিসাবে কাজ করলেও এখন তিনি ফ্যাক্টরী মালিক। ১৯৯৫ সালে মোরেলগঞ্জ শরণখোলা সড়কে বাসের হেলপার হিসেবে ডিউটি করে প্রতিদিন ৬০ থেকে ৮০ টাকা বেতন পেতেন তিনি। কোন মতে সংসার চলত। আশা ছিল ড্রাইভার হওয়ার। ২০০০ সালের দিকে হঠাৎ করে মালিক বাসের ব্যবসা বন্ধ করে দিলে বেকার হয়ে অন্য বাসে কাজ খুজতে থাকে দুলাল। অভাবের তারণায় কাজের সন্ধানে পাড়ি জমান ঢাকায়। এরপর তাকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি।

দুলাল ফরাজি তার জীবনের সফলতার বিষয়ে বলেন, লালবাগের ইসলামবাগ এলাকায় প্লাস্টিক পট তৈরির কারখানায় কাজ নেই। ৫ হাজার টাকা বেতনে চাকুরীর শুরু হলেও ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন পেয়েছি। চাকুরী কালীন সময়ে সংসারে স্বচ্ছলতা আসে। প্লাস্টিকের ফ্যাক্টরীতে চাকুরীর সুবাদে সংশ্লিষ্ট ব্যবসার সাথে জড়িত অনেকের সাথে পরিচয় হয়।

২০১৪ সালে হঠাৎ মা মারা যান। মা মারা যাওয়ার সংবাদে বাড়িতে আসি। সব কাজ শেষে কর্মস্থলে ফিরে যাই। কিন্তু মালিক আর যোগদান করতে দেয়নি। বলল অনেক দেরি হয়ে গেছে এখন আর তোমাকে লাগবে না। আবারও বেকার হয়ে, চিন্তায় পড়ে গেলাম। তারপরে সামান্য পুঁজি দিয়ে একটি হ্যান্ড মেশিন ক্রয় করি। পরে ওই মেশিন দিয়ে মলম, জর্দাসহ বিভিন্ন প্রকার প্লাস্টিকের কৌটা তৈরি করে বিক্রি করতে থাকি। এক পর্যায়ে এসবিআরএম নামের একটি রড ফ্যাক্টরির এক কর্মকর্তা আমার নিজের তৈরি প্লাস্টিকের বিভিন্ন ডিব্বা দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন।

 

 

পরে ওই কর্মকর্তাই রডের মাথায় লাগানোর জন্য ছোট প্লাস্টিকের ক্যাপের অর্ডার দেন। নিজের পুজি না থাকায় তার কাছ থেকে অগ্রীম ৫০ হাজার টাকা নিয়ে অর্ডার নেই এবং কাজ শুরু করি। এক মাসেই দেড় লক্ষ টাকা আয় করি। মায়ের দোয়া আব্দুল্লাহ প্লাস্টিক নামে একটি ট্রেড লাইসেন্স নেই। নিজে ফ্যাক্টরী প্রতিষ্ঠা করি। তারপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

এখন লাগবাগে নিজের ফ্যাক্টরী হয়েছে। বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার উত্তর বাধালের নিজ গ্রামে বাড়ি হয়েছে। ধানের জমি ক্রয় করেছি। সব মিলিয়ে এখন ভালই আছি।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ১০টি রড কোম্পানিতে রডের মাথায় ব্যবহৃত বিভিন্ন সাইজের প্লাস্টিকের ক্যাপ সরবরাহ করছি। ফ্যাক্টরীতে দুটি আধুনিক মেশিন রয়েছে। সেখানে ১৪ জন কর্মচারী কাজ করছেন। প্রতিমাসে এক লক্ষ ৩০ হাজার টাকা বেতন দেই তাদের। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির কারণে মালের সরবরাহ কম। আশাকরি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবারও ভাল অর্ডার পাব। ভাল ব্যবসা করতে পারব।

দুলাল ফরাজীর স্ত্রী শাহিদা বেগম বলেন, বিয়ের পরের দশ বছর অনেক কষ্ট করেছি। বর্তমানে দুই মেয়ে এক ছেলেকে নিয়ে খুব সুখে আছি। আমার স্বামী অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন শুধু আমাদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য। তার পরিশ্রমের ফলে আজ আমাদের এই ফ্যাক্টরী, বাড়ি ও জমি হয়েছে। ছেলে মেয়েদের লেখা পড়া করাতে পারছি। সব মিলিয়ে ভালই আছি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ আছাদুজ্জামান স্বপন বলেন, দুলাল ফরাজীকে আমরা ছোট বেলা থেকেই জানি। ৮ ভাই বোনের ছোট দুলাল মাত্র ৫ বছর বয়সেই তার বাবাকে হারান। তারপরে নানা ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে জীবন কাটিয়েছে। স্থানীয়দের বাড়িতে কিষান দেওয়া, বাসের হেলপারি থেকে শুরু করে অনেক কিছু করেছে সে।

শেষ পর্যন্ত ঢাকায় গিয়ে প্লাস্টিকের কারখানা করার মাধ্যমে তার ভাগ্যের পরিবর্তন আসে। আমরা মনে করি স্বচ্ছল হওয়ার ইচ্ছা শক্তিই দুলাল ফরাজীকে আজকের অবস্থানে এনেছেন।

 

 

খুলনা গেজেট / এনআইআর

 

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!