বার্সেলোনার চ্যাম্পিয়নস লিগ স্মৃতি সবশেষ দুটো নাম বায়ার্ন মিউনিখের। ইউরোপসেরার মঞ্চে সবশেষ ম্যাচে এই বায়ার্নের কাছে দুই সপ্তাহ আগেই ৩-০ গোলে হেরেছে বার্সা। আর এস্তাদিও দে লুজে সবশেষ ম্যাচটা তো কাতালান দলটির ইতিহাসের সবচেয়ে জঘন্য হারই হয়ে আছে।
সেই কুখ্যাত ৮-২ ব্যবধানে দুমড়ে মুচড়ে যাওয়ার মাঠটাতেই আজ রাতে আবার ফিরেছিল বার্সা। ফলটা তেমন কুখ্যাত না হয়নি৷ তবে এ ম্যাচটার স্মৃতিও নিশ্চয়ই বার্সা-ভক্তরা ভুলেই যেতে চাইবেন। এবার যে বেনফিকার কাছে ৩-০ গোলে হেরেছে কোচ রোনাল্ড কোম্যানের দল! তাতে প্রতিযোগিতা থেকেই ছিটকে যাওয়ার উপক্রম হলো দলের।
বেনফিকার মাঠে ধাতস্থ হয়ে ওঠার আগেই ব্লাউগ্রানারা হজম করে বসে এক গোল। এরপর দলটা হয়ে গেল এলোমেলো। স্বাগতিক বেনফিকা ফায়দা তুললো সেটারই। যারই ফল আরও এই ‘লিসবন-লজ্জায়’ পেল বার্সা।
লিসবনে বার্সার রাতটা যে একটুও ভালো কাটেনি, সেটা স্কোরলাইন দেখেই বুঝে যাওয়া চলে। এক ৬০ শতাংশ সময় বলের দখল বাদে যে বার্সার পক্ষে যায়নি কোনো কিছুই!
৩-৫-২ ছকে কোচ কোম্যান খেলছিলেন আদতে পাঁচ ডিফেন্ডার নিয়ে। তিন সেন্টারব্যাক এরিক গার্সিয়া, জেরার্ড পিকে, আর রোনাল্ড আরাউহো, সঙ্গে দুই উইংব্যাক হিসেবে ছিলেন সার্জি রবার্তো আর সার্জিনিও ডেস্ট। মাঝমাঠে কোম্যানের চির আস্থার ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ং, সার্জিও বুসকেটস, আর পেদ্রি গনজালেস। আক্রমণে দুই ডাচ মেমফিস ডিপাই, আর লুক ডি ইয়ং।
পাঁচ ডিফেন্ডার নিয়েও বার্সা গোলটা হজম করল ম্যাচের তৃতীয় মিনিটে। ডারউইন নুনিয়েজ বক্সে বল নিয়ে ঢুকতেই সহজে শম্বুকগতির এরিক গার্সিয়াকে ছিটকে দিলেন, এরপর মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগানের কাছের পোস্ট দিয়ে বলটা জড়ালেন বার্সার জালে। দুঃস্বপ্নের মাঠে দুঃস্বপ্নের মতো এক শুরু পায় কোম্যানের দল। এর কিছু পরেই বার্সার আরেকটা রক্ষণাত্মক ভুলে গোল পেয়েই গিয়েছিল বেনফিকা, ভাগ্যিস রোমান ইয়ারেমচুকের শটটা ঠেকিয়ে দিয়েছিলেন স্টেগান, নাহয় যে ব্যবধানটা আরও বড়ই হতো!
এরপর বার্সা পায়ের তলায় মাটি খুঁজে পায় মাঝমাঠ দখল নিয়ে। দুটো সুযোগও পেয়েছিল, কিন্তু দুটোই লুক ডি ইয়ং করেছেন নষ্ট। প্রথমার্ধে আর গোলের খাতায় লেখা হয়নি কারো নাম।
বিরতির পরই যেন আবার স্বাগতিকদের আধিপত্য ফেরে ম্যাচে। ৬৯ মিনিটে বেনফিকা তাতে পেয়ে গেল অনিশ্চয়তা মুছে দেওয়া গোলটাও। জোয়াও মারিওর শট ব্লক হলেও রাফা সিলভা ঠিকই খুঁজে পান জালের ঠিকানা।
মিনিট দশেক পর প্রতিপক্ষের ক্রসে হাত ছুঁইয়ে বেনফিকাকে পেনাল্টি উপহার দেন ডেস্ট, এরপর স্পটকিক থেকে গোল নুনিয়েজের৷ শেষ সময়ে বার্সা ডিফেন্ডার গার্সিয়া দেখেন লাল কার্ড।
এরপর থেকে বার্সার লক্ষ্যটা ছিল এর বেশি ক্ষতি যেন না হয়, সেখানে। সেটা করেও ছিল দলটি। কিন্তু শেষ সময়ে গার্সিয়া দেখে বসেন লাল কার্ড। তাতে বার্সার বিস্মরণযোগ্য দিনটা আরও একটু ভুলে যাওয়ার মতোই হলো বৈকি।
তিন চার গোল হজমের পর ক্ষতি কমানোর লক্ষ্যে রক্ষণ করতে কেবল ছোট দলগুলোয়ই দেখা যেত আগে। আজকের ম্যাচে বেনফিকার বিপক্ষে যা দেখিয়েছে বার্সা। রাতে কোচ কোম্যান ম্যাচের আগেও বলেছিলেন, বার্সার পক্ষে বড় দলকে টেক্কা দেওয়ার উপায় নেই আর৷ চ্যাম্পিয়নস লিগ নকআউটের পথটা কঠিন হয়ে পড়ার পর বেনফিকাকেও কি এবার সেই বড় দল হিসেবেই দেখবেন বার্সা কোচ?
খুলনা গেজেট/ টি আই