খুলনা, বাংলাদেশ | ১২ শ্রাবণ, ১৪৩১ | ২৭ জুলাই, ২০২৪

Breaking News

  সাম্প্রতিক সহিংসতায় আহতদের দেখতে রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে প্রধানমন্ত্রী

বান্দরবানে ব্যাংকে ডাকাতি, ভল্টের টাকাসহ ১৪ অস্ত্র লুট ম্যানেজার অপহরণ

গেজেট ডেস্ক

বান্দরবানের রুমা উপজেলায় সোনালী ব্যাংকের ভল্ট ভেঙে প্রায় ২ কোটি টাকা লুট করেছে অস্ত্রধারীরা। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় নিরাপত্তাকর্মীদের অন্তত ১৪টি অস্ত্রও লুট করে সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনার পর থেকে ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক মো. নিজাম উদ্দিনের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।

স্থানীয় ও ইউএনও দিদারুল আলমের ধারণা, এ ঘটনার নেপথ্যে পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) সদস্যরা জড়িত। ঘটনার পর থেকে ব্যাংকটি সেনাবাহিনী ও পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আছে। তবে ব্যাংক এবং উপজেলা কমপ্লেক্স ভবনে থাকা সিসিটিভি ফুটেজের বিষয়ে পুলিশসহ সংশ্লিষ্টরা কেউ এখনও কিছু জানাননি।

এ ঘটনার সঙ্গে সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) জড়িত থাকতে পারে বলে সন্দেহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের। ঘটনার পর থেকে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ওই এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার রেখেছে।

সোনালী ব্যাংকের ওই শাখাটি বান্দরবানের রুমা উপজেলা সদর বাজারে উপজেলা প্রশাসন কমপ্লেক্স ভবনে অবস্থিত। ডাকাতরা ঠিক কী পরিমাণ টাকা লুট করেছে, তা এখনও নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি ব্যাংক কর্মকর্তারা। তবে সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্যাংকের ভল্টে আনুমানিক ২ কোটি টাকা ছিল। অস্ত্রধারীরা পুরো টাকাই লুট করে নিয়ে গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার ইফতারের কিছুক্ষণ পরে নামাজ পড়তে যান সোনালী ব্যাংকের রুমা উপজেলা শাখার কর্মচারীরা। এ সময় আনসারের ৪ সদস্য ব্যাংকের পাহারায় ছিলেন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে প্রায় ৬০-৭০ জন অস্ত্রধারী ব্যাংকে আক্রমণ করে। প্রথমে তারা ব্যাংকের পাহারায় থাকা আনসার সদস্যদের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে বেঁধে রাখে। এরপর তারা ব্যাংকের ভেতরে ঢুকে লকার ভেঙে টাকা লুট করে। ব্যাংক থেকে টাকা লুট করার সময় অস্ত্রধারীদের ৪০-৫০ জন বাইরে পাহারায় ছিল বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। ব্যাংক লুট করতে অস্ত্রধারীরা প্রায় আধা ঘণ্টা সময় নেয় বলেও জানা গেছে।

সোনালী ব্যাংকের বান্দরবান অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক মো. ওসমান গণি জানান, তাদের রুমা শাখার ম্যানেজার নিজাম উদ্দিনকে ডাকাতরা নিয়ে গেছে বলে তিনি শুনেছেন। তাঁর বাড়ি কক্সবাজারের চকরিয়ায়।

তিনি আরও জানান, ব্যাংকের রুমা শাখায় ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা থাকার কথা। ডাকাতরা সেগুলো ভল্ট ভেঙে নিয়ে গেছে। এ ঘটনার পর বান্দরবান অঞ্চলের ব্যাংকের সব শাখায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।

রুমা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শৈবং মারমা জানান, লুটের সময় ৬০-৭০ জনের অস্ত্রধারী একটি দল ছিল। ঈদ ও পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে ব্যাংকে প্রায় ২ কোটি টাকার মতো ছিল বলে শুনেছি।

তার দাবি, এ ঘটনার সঙ্গে কেএনএফ সন্ত্রাসীরা জড়িত থাকতে পারে। এ ছাড়া বাজারের মধ্যখানে ব্যাংকের টাকা লুট করার সাহস অন্য কারও নেই।

রুমা উপজেলার অতিরিক্ত নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত এসিল্যান্ড মো. দিদারুল আলম জানান, রাত ৮টার দিকে ৬০ থেকে ৭০ জন অস্ত্রধারী উপজেলা প্রশাসন কমপ্লেক্স ভবনে সোনালী ব্যাংকে হামলা চালায়। তাদের একটি গ্রুপ কমপ্লেক্স ভবনের মসজিদে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। সে সময় মসজিদে ব্যাংকের অনেক কর্মকর্তা ও অন্য মুসল্লিরা তারাবির নামাজ পড়ছিলেন। সন্ত্রাসীরা সবাইকে বন্দি করে তাদের মোবাইল ফোন নিয়ে নেয়। এ সময় কয়েকজনকে সন্ত্রাসীরা প্রচণ্ড মারধরও করে।

তিনি জানান, সন্ত্রাসীদের আরেকটি গ্রুপ উপজেলা কমপ্লেক্স ভবন এবং ব্যাংকের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ ও আনসার সদস্যদের বেঁধে ফেলে তাদের অস্ত্র কেড়ে নেয়। পরে ব্যাংকের ভেতরে ঢুকে ম্যানেজার নিজামুদ্দিনকে অস্ত্রের মুখে ভল্ট খুলতে বাধ্য করে সব টাকা লুটে নেয়। এ সময় ডাকাতদের আরেকটি গ্রুপ অস্ত্র নিয়ে বাইরে পাহারায় ছিল। তবে ঘটনার সময় তিনি উপজেলা কমপ্লেক্স ভবনে ছিলেন না।

ইউএনও আরও জানান, ডাকাতরা বম ভাষায় কথা বলছিল। তাদের অনেকের গায়ে ছিল কেএনএফের পোশাক। তারা ব্যাংকের চার আনসার সদস্যদের ৪টি শটগান, ৩৫ রাউন্ড গুলি এবং উপজেলা কমপ্লেক্সের নিরাপত্তায় থাকা পুলিশের দুটি এসএমজি ও ৬০ রাউন্ড গুলি, ৮টি চীনা রাইফেল ও ৩২০ রাউন্ড গুলি নিয়ে গেছে।

রুমা থানার ওসি মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, কারা এই হামলা করেছে, তা আমরা যাচাই করছি। ডাকাতরা কত টাকা নিয়ে গেছে, তা ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা এলে বলা যাবে। ব্যাংকের ম্যানেজারের খোঁজ চলছে।

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!