খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ইসকন নেতা চিন্ময় দাসকে বিমান বন্দরে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি
  কক্সবাজারের টেকনাফ সমুদ্র সৈকতে গোসলে নেমে নিখোঁজ দুই শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার
  সাবেক আইজিপি মামুনের ফের ৩ দিনের রিমান্ড

রহিমা বেগম উদ্ধারের একবছর : সেই অপহরণ মামলা এখন সিআইডিতে

একরামুল হোসেন লিপু

২০২২ সালে দেশের আলোচিত চরিত্র ছিলো রহিমা বেগম ও তার মেয়ে মরিয়ম মান্নান। আত্মগোপনে থাকা রহিমা বেগমকে গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর ফরিদপুরের বোয়ালমারী সৈয়দপুর গ্রাম থেকে সুস্থ ও অক্ষত অস্থায় উদ্ধার করে পিবিআই।  এনিয়ে দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে।  পিবিআই ঘটনার আসল রহস্য উদঘাটন করে চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। কিন্তু সেই মামলার তদন্ত এখনও শেষ হয়নি।

মামলার বাদি রহিমা বেগমের কন্যা আদুরি আক্তার তদন্ত প্রতিবেদনের উপর নারাজি দিলে আদালত মামলাটি সিআইডিকে তদন্তের ভার দেয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি’র পুলিশ পরিদর্শক রবিউল ইসলাম চলতি বছরের ১৭ জুলাই মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে।

রবিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) খুলনা মেট্রো এন্ড জেলার নবাগত সিআইডি’র বিশেষ পুলিশ সুপার শম্পা ইয়াসমীন আলোচিত এ মামলার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করবেন বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে।

জানা যায়, ২০২২ সালের ২৭ আগস্ট রাতে খুলনার দৌলতপুর থানাধীন মহেশ্বরপাশা বনিকপাড়া(খানাবাড়ি) এলাকার নিজ বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন রহিমা বেগম (৫২)। ঐ রাতেই নিখোঁজ রহিমা বেগমের ছেলে রিয়াজ আল সাদী দৌলতপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। নিখোঁজের পরের দিন ২৮ আগস্ট রহিমা বেগমের কন্যা আদুরী আক্তার তাঁর মা অপহৃত হয়েছেন মর্মে বাদী হয়ে স্থানীয় দৌলতপুর থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন।

মামলার এজাহারে সন্দেহভাজন হিসেবে প্রতিবেশী মহিউদ্দিন, তার ছোট ভাই ইঞ্জিনিয়ার গোলাম কিবরিয়া, রফিকুল ইসলাম পলাশ, তার ভাই মোঃ জুয়েল, হেলাল শরীফ এবং কথিত রহিমা বেগমের স্বামী বেল্লাল হোসেনের নাম উল্লেখ করেন। অপহরণ এ মামলার অনেক নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে সন্দেহভাজনদের গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করে পুলিশ। ঘটনাটি তখন দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচিত হয়। ঘটনার আসল রহস্য উদঘাটনে তৎপরতা শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

এক পর্যায়ে ময়মনসিংহের ফুলপুরে অজ্ঞাত এক নারীর অর্ধগলিত মরদেহকে মরিয়ম মান্নান নিজের মা রহিমা বেগম বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। মরিয়ম মান্নান তখন অপহরণের এ ঘটনাটি দেশের মিডিয়াসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা কল্পণাকাহিনী সাঁজিয়ে সাধারণ মানুষের সহানুভূতি আদায়ে সক্ষম হন। ঘটনার কূল কিনারা না পেয়ে বেকায়দায় পড়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

এক পর্যায়ে ২৪ সেপ্টেম্বর ফরিদপুরের বোয়ালমারী সৈয়দপুর গ্রামের জনৈক আব্দুল কুদ্দুসের বাড়ী থেকে সুস্থ ও অক্ষত অস্থায় রহিমা বেগমকে উদ্ধার করে পিবিআই। রহিমা বেগমকে উদ্ধারের পর ঘটনার আসল রহস্য উন্মোচন করে চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারী আলোচিত এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন মহানগর হাকিম আদালতে দাখিল করা হয়। অপহরণের পরিকল্পনাকারী এবং ঘটনার মাস্টারমাইন্ড হিসেবে রহিমা বেগমের কন্যা মরিয়ম মান্নানকে চিহ্নিত করা হয়। পিবিআই’র দাখিলকৃত প্রতিবেদনে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে মরিয়ম মান্নান এ নাটক সাজায় বলে উল্লেখ করা হয়।

খুলনা পিবিআই’র পুলিশ পরিদর্শক মোঃ আব্দুল মান্নান স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, কথিত ভিকটিম রহিমা বেগম নিজের পক্ষের আদুরী আক্তার ও মরিয়ম আক্তারকে নিয়ে বিক্রিত জমি রক্ষায় নতুন অপকৌশলের অংশ হিসেবে ভিকটিম  আত্মগোপনে গিয়ে কথিত অপহরণের নাটক সাঁজায় এবং ঘটনায় জমির ক্রেতাদের সঙ্গে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে অপহরণের যে মামলা দায়ের করে তা ছিলো সাঁজানো।

পিবিআই’র চূড়ান্ত প্রতিবেদনে মামলার এজাহারভুক্ত ৬ আসামিকে অব্যাহতি প্রদান পূর্বক আলোচ্য মামলার বাদি আদুরী আক্তার (২২), তার মা রহিমা আক্তার(৫২) এবং অপহরণ নাটকের মাস্টারমাইন্ড মরিয়ম আক্তার ওরফে মরিয়ম মান্নান (২৪) এর বিরুদ্ধে মিথ্যা ঘটনা সাঁজিয়ে মামলা দায়েরের জন্য আদালতে বিচারার্থে দৌলতপুর থানা পুলিশ চুড়ান্ত প্রতিবেদন (মিথ্যা)নং-১ তারিখ ৮/২/২৩ ইং ধারা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন বিজ্ঞ আদালতে দাখিল করে। আদালতে এ বিষয়ে শুনানিতে বাদী পক্ষ নারাজি দিলে আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য সিআইডি’র নিকট হস্থান্তর করলে মামলাটি সিআইডি তদন্ত শুরু করে।

অপহরণ মামলায় কারাভোগকারী মোঃ মহিউদ্দিন বলেন, রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং দেশবাসীকে ধোঁকা দিয়ে পরিকল্পিতভাবে একটি নাটক মঞ্চস্থ করে মরিয়ম মান্নান গং। বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা গুজব রটিয়ে মানুষের আবেগকে কাজে লাগিয়ে আইন শৃৃংখলা বাহিনীকে চাপে ফেলে আমাদেরকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে জেল খাটিয়েছে। তা ছাড়া বিভিন্ন সময় আইনশৃংখলা বাহিনীর নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে ফায়দা লুটের চেষ্টা করেছে । তিনি বলেন, পিবিআই’র মতো সিআইডিও তাদের প্রতিবেদনে সঠিক তথ্য তুলে ধরবেন এমনটাই আশা করছি।

এ বিষয়ে সিআইডি’র তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক রবিউল ইসলাম জানান, আলোচিত এই মামলার তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। রবিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করবেন খুলনা মেট্রো এন্ড জেলার সিআইডি’র বিশেষ পুলিশ সুপার শম্পা ইয়াসমীন।

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!