খুলনা, বাংলাদেশ | ২১শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৫ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় একজনের মৃত্যু, শনাক্ত ৬
  সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এটিএম শামসুল হুদা মারা গেছেন
  গাজায় আরও ১৩৮ জনকে হত্যা করলো ইসরায়েল

বাজিমাত কে করবেন, নজর গোটা বিশ্বের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

আমেরিকায় ভোটগণনা চড়ছে উত্তেজনা পারদ। আপাতত কোনও ভবিষ্যৎবাণী করতে যাওয়া একেবারেই যুক্তিযুক্ত হবে না। ভোট শতাংশের বিচারে বোঝা গিয়েছিল জো বাইডেন এগিয়ে থাকবেন। সে সমীক্ষায় সম্ভবত ভুল নেই। এই সময়ে এক শতাংশের মত ভোটে এগিয়ে আছেন বাইডেন। কিন্তু যে কোনও নির্বাচনেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হলে ভোট শতাংশ আর আসনের সম্পর্ক একেবারে গুলিয়ে যায়। দেশ জুড়ে ভোট শতাংশে অনেক এগিয়ে থাকলেও লাভ নেই, বরং কম ব্যবধানে এক একটি রাজ্য জিতে নিয়ে সেখানকার সব আসন বগলদাবা করাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

আমেরিকায় বেশ কিছু রাজ্য আছে যেখানে ভোট না হলেও চলে। তারা সব সময়েই হয় রিপাবলিকান অথবা ডেমোক্র্যাটদের দিকে ঝুঁকে আছেন। তাঁদের নিয়ে আলোচনা কম। অন্য দিকে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ সেইসব রাজ্য, যেখানে সামান্য শতাংশের ব্যবধানে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয়। এগুলিই সুইং স্টেট। দোদুল্যমানতার শেষে এঁরা কোন দিকে ঘেঁষবেন তার ওপরই নির্ভর করবে সামগ্রিক ভোটের ফল। মনে রাখতে হবে, বেশি ভোট পেলেই কিন্তু আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়া যায় না। তা হলে গতবার হিলারি ক্লিনটনই কুর্সিতে বসতেন। কিন্তু সিকি কোটির বেশি ভোট পেয়েও (যা নাকি ২ শতাংশের বেশি) তিনি হারেন আসনের হিসেবে। এ বারেও সেই একই কথা। সেই কারণেই সমীক্ষা বলেছিল দু’শতাংশের মত ভোটে বাইডেন এগিয়ে থাকলেও তিনি একেবারেই নিশ্চিন্ত নন। কারণ কম ভোট পেয়েও হিসেব করে কয়েকটি রাজ্যে জিতে গেলেই রিপাবলিকানদের পোয়া বারো। সেই হিসেবে নাকি তিন-চার শতাংশ ভোটে বাইডেন এগিয়ে থাকলেও আসনের হিসেবে লড়াই হাড্ডাহাড্ডি। আর মতদানের হিসেবে ৫ শতাংশের মতো বেশি থাকলে তবেই নিশ্চিত হতে পারতেন বাইডেন। তেমনটা এখনও হচ্ছে না। সেই সঙ্গে খবর পাওয়া যাচ্ছে বেশ কিচ্ছু রাজ্যে ভোট গণনা নিয়ে যথেষ্ট অশান্তি হবে। ভোটের সম্পূর্ণ ফলাফল আসতে কয়েকদিন লেগে যেতে পারে এমন আশঙ্কাও রয়েছে।

বিষয়টা যে বেশ জটিল, সেটা বোঝা যাচ্ছে। কারণ গণনার এই পর্যায়েই মার্কিন দেশের মাঝরাতে বক্তব্য রাখছেন বাইডেন। দাবি করছেন, তিনিই জিতবেন। আবার গভীর রাতে টুইট করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিযোগ, সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও ডেমোক্র্যাট সমর্থকরা ভোট দিচ্ছেন অনেক জায়গায়। একে তিনি বলছেন ‘ভোট চুরি’। পাশাপাশি বেলা একটা নাগাদ ট্রাম্প বলে দিয়েছেন তিনিই জিতছেন। একইসঙ্গে অবশ্য গণনা বন্ধের দাবিতে আদালতে যাওয়ার হুমকিও ফের দিয়েছেন তিনি।

কোভিডের হানায় বাকি বিশ্বের মতই আমেরিকাও নাজেহাল। বেকারত্ব আকাশ ছুঁচ্ছে। কালো মানুষের প্রতি অবিচারে ফুঁসছে বড় অংশের মানুষ। মার্চ এপ্রিলে সাধারণ করদাতাদের কাছে কিছু ডলার পৌঁছলেও, তারপর থেকে কিন্তু খুব বেশি কিছু ভাবতে পারেননি ট্রাম্প সাহেব। ভোটের আগে জনগণের কাছে কোভিড প্রতিষেধক পৌঁছে দিতে পারলে হয়তো অনেকটা ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা ছিল বর্তমান প্রেসিডেন্টের। তেমনটাও ঘটেনি। ফলে সোজা ভাবনায় ট্রাম্পের হেরে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। সমীক্ষাও তাই বলছিল গত দু’মাস ধরে। কিন্তু একেবারে শেষের দিকে কোলাকুলি সেয়ানে সেয়ানে। মনে রাখতে হবে, বিপুল সংখ্যক মানুষ ভোট দিয়েছেন এই নির্বাচনে। যা অনেক সময়েই ক্ষমতা বদলের লক্ষণ। তবে হেরে গেলে নির্বাচনী ফলাফল না মেনে নেওয়ার যে রেওয়াজ, তা সাধারণত পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর। এবার সেই ছোঁয়াচ মার্কিন দেশেও লেগেছে। এতটাই বিভাজনের রাজনীতি ঢুকে পড়েছে সে দেশে যে ট্রাম্প হেরে গেলে নাকি হোয়াইট হাউস না ছেড়ে আইনি লড়াইতে নামবেন। বাইডেনও তেমনটাই বলছেন। যাই হোক, সে সব রাজনীতির ভবিষ্যৎ। আপাতত খেলা শুধু সংখ্যার।

যে সুইং স্টেটগুলোর কথা এইসময় মনে করিয়ে দেওয়া দরকার, তার মধ্যে শুরুতেই থাকবে ফ্লরিডা। এখানে গত বার এক শতাংশের সামান্য বেশি ভোটে জিতেছিলেন ট্রাম্প। এ বারে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত প্রায় তিন শতাংশ ভোটে এগিয়ে আছেন তিনি। মোটের ওপর গত নির্বাচনে যে ক’টা রাজ্যে সামান্য ভোটে জিতেছিলেন ট্রাম্প, সেগুলিতে কিন্তু খুব খারাপ ফল করছেন না তিনি। এর মধ্যে জর্জিয়া, মিশিগান, ওহাইও, নর্থ ক্যারোলিনা উল্লেখযোগ্য। এই মুহূর্তে পেনসিলভেনিয়াতেও বিপুল ভাবে এগিয়ে আছেন ট্রাম্প। তবে এখানে কয়েকটা গন্ডগোল আছে। মিশিগানে এই সময় ট্রাম্প এগিয়ে থাকলেও সেখানে ভোট গোণা অনেকটা বাকি। তার মধ্যে আবার প্রচুর ভোট আগে দেওয়া। সেখানে নাকি ডেমোক্র্যাটদের বেশি ভোট পাওয়ার সম্ভাবনা। পেনসিলভেনিয়াতেও একই ছবি। ফলে ট্রাম্পের এগিয়ে থাকা সম্পর্কে এখনও বেশ সন্দেহ আছে। অন্য দিকে ট্রাম্পের কাছ থেকে অ্যারিজোনা ছিনিয়ে নিতে চলেছেন বাইডেন। এখানে আছে ১১টি আসন। গত বারের ব্যবধান এখানেই বাইশটি কমে যাবে। এক জনের ১১ কমে অন্যের ১১ বাড়লে তেমনটাই হয়। বেলা ১২টায় এর বেশি কিছু বলা যাচ্ছে না।

দিন কয়েক আগেই বিভিন্ন সমীক্ষায় বাইডেনের পক্ষে দেশজোড়া জনমত ট্রাম্পের থেকে ৯ শতাংশ বেশি থাকলেও শেষ দিকে হাওয়া ঘুরেছে চটজলদি। সেপ্টেম্বর থেকে ক্রমাগত পিছোতে থাকলেও একেবারে শেষ মুহূর্তে ট্রাম্প লড়াইয়ের ময়দানে ফিরেছেন দারুণ ভাবে। তবে আমেরিকার নির্বাচন যে অবিশ্বাসের অগাধ জলে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ট্রাম্প সত্যিই কি জিতবেন? যে দাবি তিনি মাঝরাতে করছেন? নাকি চিন বা রাশিয়ার রাষ্ট্রনায়কদের মতোই হার-জিত ভুলে বসে থাকবেন ক্ষমতা আঁকড়ে? অন্য দেশে নির্বাচন পদ্ধতি পর্যবেক্ষণ করতে গম্ভীর মুখে পাড়ি দেন আমেরিকার প্রতিনিধিরা। এ বার দেখা যাক নিজের দেশে গণতন্ত্র বাঁচানোর ক্ষমতা তাঁদের কতটুকু! খবর আনন্দবাজার পত্রিকা।

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!