খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩ তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উদযাপিত হয়। দিবসটি উপলক্ষ্যে শুক্রবার সকাল সোয়া ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন সাধারণ মানুষের আস্থা, বিশ্বাস ও ভালোবাসার প্রতীক। পঁচাত্তরের খুনিরা ভেবেছিলো তাঁকে হত্যার পর তাঁর জনপ্রিয়তা কমে যাবে, মানুষ তাঁকে ভুলে যাবে। কিন্তু তা হয়নি, বরং আরও বেশি দৃঢ় হয়ে তিনি আছেন বাঙালির হৃদয়ে। বাঙালির মন থেকে কখনই বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলা যাবে না।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু নামের গভীরতা হয়তো এখনও আমরা বুঝতে পারিনি। তাঁর সারাজীবনের ত্যাগ-সংগ্রাম বিশ্লেষণ করলে আমরা তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের নির্দশনা পাবো। তিনি বৃটিশ, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ- তিনটি শাসনকাল দেখেছেন। তিনি দেশকে স্বপ্নের মতো করে সাজাতে চেয়েছিলেন। তিনি সাধারণ মানুষের মনের কথা বুঝতে পারতেন। তিনি জানতেন মানুষ কি চায়। সেই আস্থা-ভরসার জায়গা থেকে ধীরে ধীরে তিনি বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা হয়ে ওঠেন। তাঁর রাজনৈতিক দর্শন শুধু এই ভূখণ্ডেই নয়; সারাবিশ্বে প্রশংসিত হয়েছিলো। যার কারণে বিভিন্ন সময়ে বিশ্বের মহান ব্যক্তিদের উক্তিতে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে মমস্পর্শী কথা উঠে এসেছে।
উপাচার্য বলেন, শিশুদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসা ছিলো অনন্য। তিনি যখন সময় পেতেন শিশুদের সঙ্গে সময় কাটাতেন। তিনি শিশুদের ভালোবাসতেন। যার কারণে ১৯৯৬ সালে তৎকালীন সরকার বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের এই দিনটিকে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে উদযাপনের ঘোষণা দেয়। পরবর্তীতে ১৯৯৭ সাল থেকে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। শিশু দিবসের তাৎপর্য অনেক। শিশুদের মধ্যে রয়েছে দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ। এই শিশুদের বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের পথে পরিচালিত করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ ও লালন করে তাঁদের গড়ে তুলতে হবে।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫২ বছর পরে আজ আমরা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। শিল্পায়নে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলছি। অথচ দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধু শিল্পায়নে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তিনি পঞ্চাশ বছর পূর্বে যা ভেবেছিলেন, আমরা তা এখন ভাবছি। এটাই ছিলো তাঁর দূরদর্শী চিন্তা-ভাবনা। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে হলে তাঁর দেখানো পথ আমাদের অনুসরণ করতে হবে। এজন্য আমাদের একটি আদর্শের জায়গায় পৌঁছাতে হবে। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন দেখেছেন, তা বাস্তবায়নে সৎ, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক নাগরিক হতে হবে। দেশের চলমান অগ্রযাত্রায় অংশ নিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের সৈনিক হতে হবে।
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোসাম্মাৎ হোসনে আরা ও ট্রেজারার প্রফেসর অমিত রায় চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তিবিদ্যা স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. কামরুল হাসান তালুকদার। সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন কলা ও মানবিক স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. মো. রুবেল আনছার।
আরও বক্তৃতা করেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. লস্কার এরশাদ আলী, অফিসার্স কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক দীপক চন্দ্র মন্ডল এবং সয়েল ওয়াটার এন্ড এনভায়রনমেন্ট ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী গৌরব কুমার পাল। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রিন্টমেকিং ডিসিপ্লিনের প্রভাষক ফারজানা জামান। এসময় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সকাল ৯টায় শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ ভবনের সামনে উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন কর্তৃক জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়। পরে উপাচার্যের নেতৃত্বে একটি শোভাযাত্রা প্রশাসন ভবনের সামনে থেকে শুরু করে হাদী চত্বর ঘুরে কালজয়ী মুজিব প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য, ট্রেজারার, বিভিন্ন স্কুলের ডিন, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত), ডিসিপ্লিন প্রধান, বিভাগীয় প্রধান, ছাত্র বিষয়ক পরিচালক, প্রভোস্টবৃন্দ, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ অংশ নেন।
এরপর বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ‘কালজয়ী মুজিব’ বেদীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে উপাচার্য প্রথম শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য, ট্রেজারার, বিভিন্ন স্কুলের ডিন, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) উপস্থিত ছিলেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল, বিভিন্ন ডিসিপ্লিন, আবাসিক হলসমূহ, শিক্ষক সমিতি, অফিসার্স কল্যাণ পরিষদের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হয়। পরে সকাল ১০টায় আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের দ্বিতীয় তলার করিডোরে শিশু-কিশোরদের চিত্রাংকন প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন উপাচার্য।
এছাড়া দিবসের অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে ছিলো- দিনব্যাপী বঙ্গবন্ধুর জীবনভিত্তিক আলোকচিত্র প্রদর্শনী, বাদ জুম্মা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ ও প্রশাসন ভবন সংলগ্ন মসজিদে দোয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের মন্দিরে প্রার্থনা, বিকাল ৫টায় মুক্তমঞ্চে পুরস্কার বিতরণ, সন্ধ্যা ৬.৩০ মিনিটে প্রদীপ প্রজ্বালন এবং বিকাল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মুক্তমঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এছাড়া দিবসটি উপলক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইনগেট, মেইনগেট থেকে হাদী চত্বর পর্যন্ত রাস্তা, প্রশাসনিক ভবন, ক্যাফেটেরিয়া, হলসমূহ এবং উপাচার্যের বাসভবন আলোকসজ্জা করা হয়।
খুলনা গেজেট/এনএম