খুলনা, বাংলাদেশ | ১১ পৌষ, ১৪৩১ | ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  নিখোঁজের ৪২ ঘণ্টা পর কাপ্তাইয়ের কর্ণফুলী নদী থেকে দুই পর্যটকের মরদেহ উদ্ধার
  ফায়ার সার্ভিস কর্মীকে চাপা দেওয়া ট্রাকচালক আটক
  সচিবালয়ের আগুন সোয়া ৬ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে এনেছে ফায়ার সার্ভিস

বাঘ হাবিবই শেষ নয়!

বাগেরহাট প্রতিনিধি

সুন্দরবনে বাঘ হত্যাকারী হাবিব তালুকদার (৫০) ওরফে ‘বাঘ হাবিব’কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুক্রবার গভীর রাতে শরণখোলা উপজেলার সোনাতলা গ্রাম থেকে তাকে গ্রেফতার করে শরণখোলা থানা পুলিশ। পরে শনিবার (২৯ মে) বিকেলে হাবিব তালুকদারকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। বাঘ হাবিবই শেষ নয়, সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ বন্য প্রাণি হত্যা ও পাচারের সাথে জড়িত হাবিবের গড ফাদারদের খুঁজে বের করার দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা।

জানা গেছে, শুক্রবার রাতে বন অপরাধে করা কয়েকটি মামলার আসামী সুন্দরবন সংলগ্ন শরণখোলা উপজেলার সোনাতলা গ্রামের কদম আলী তালুকদারের ছেলে হাবিব তালুকদার (৫০) ওরফে বাঘ হাবিবকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারের পরেই আলোচনায় আসে বাঘ হাবিবের অপরাধ কর্মকান্ড। বন বিভাগ ও থানা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, বাঘ হাবিবেরর নামে ৯টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে বাঘ হত্যার দায়ে তিনটি, হরিণ হত্যার দায়ে ৫টি এবং বন অপরাধে আরও একটি মামলা রয়েছে। এসব মামলার মধ্যে তিনটি মামলায় ওয়ারেন্ট ছিল হাবিবের নামে। হাবিব গ্রেফতার হওয়ার পরেই এলাকায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। আসলে কতটি বাঘ হত্যা করেছে হাবিব এ বিষয়ে কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারেনি।

তবে বন বিভাগের দাবি সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ বন্য প্রাণি হত্যা ও পাচারের সাথে জড়িত হাবিবের গড ফাদারদের খুঁজে বের করতে বন বিভাগের ক্রাইম কন্ট্রোল ইউনিট জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

সেভ দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যোন ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, বাঘ শিকারি হাবিবের নেপথ্যে যারা জড়িত রয়েছে তাদেরকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে হবে। সুন্দরবনের বন্য প্রাণি নিধন ও বনকে সুরক্ষিত রাখতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পাচারকারী চক্রের সাথে জড়িতদের শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। তাহলেই বন্য প্রাণি নিধন কমে আসবে বলে দাবি জানিয়েছেন তিনি।

তিনি বলেন, সুন্দরবন কেন্দ্রিক অপরাধিরা নির্দিষ্ট সময় পর মুক্তি পায়। কিন্তু অপরাধিরা কাদের স্বার্থে দীর্ঘদিন ধরে বাঘ-হরিণসহ বন্য প্রাণি হত্যা করছে তা এখনও অজানা। বাঘের চামড়া, হাড়-গোড়, দাতসহ বিভিন্ন অঙ্গ প্রতঙ্গ চড়া দামে বিক্রি হয়। এগুলো দেশের বাইরে পাঁচার হয়। হাবিব-রা তো সুন্দরবন থেকে বাঘ মেরে-ই শেষ। কিন্তু যাদের মাধ্যমে হাবিব-রা বাঘ হত্যায় উৎসাহ পাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দৃশ্যমান কোন উদ্যোগ রয়েছে বলে আমার জানা নেই। যেকোন মূল্যে এদেরকে খুজে বের করার দাবি জানান তিনি।

সোনাতলা গ্রামের ইউপি সদস্য ডালিম হোসেন বলেন, গেল দশ বছর আমি ইউপি সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। আমার জানামতে হাবি একজন সুন্দরবনের বন্য প্রাণি শিকারি। দীর্ঘদিন ধরে হরিণ শিকার করে এলাকার প্রভাবশালীদের কাছে বিক্রি করে আসছে। তার ছেলে হাসান হাওলাদার ও মেয়ের জামাতা মিরাজ ঘরামী এই শিকারের সাথে জড়িত। তবে দুই এক বছর ধরে শুনেছি হাবিব বাঘও হত্যা করেছে। তবে কতটি বাঘ হত্যা করেছে তা স্পষ্ট করে বলতে পারি না। পুলিশ তাকে ধরার জন্য আমার সহযোগিতাও চেয়েছে। অনেকদিন ধরে হাবিব এলাকা ছাড়া ছিল।

সুন্দরবন সুরক্ষায় নিয়োজিত কমিউনিটি পেট্রোলিং গ্রুপের (সিপিজি) ভোলা টহল ফাঁড়ি ইউনিটের দলনেতা মো. খলিল জমাদ্দার জানান, গেল দুই বছর আগে সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের লাঠিমারা এলাকায় বনের মধ্যে একটি বঘাকে মৃত ভেবে কাছে গেলে আক্রমনের শিকার হন হাবিব। ভাগ্যক্রমে বাঘের আক্রমন থেকে বেঁচে যায় হাবিব। এর পর থেকে এলাকার মানুষ তাকে বাঘ হাবিব বলে ডাকে।

তিনি আরও বলেন, হাবিব একটু হাবাগোবা ধরণের মানুষ। ও আমার প্রতিবেশী। লোভে পড়ে সে কিছু বন্য প্রাণি শিকার করেছে। কিন্তু আসলে সে কি পরিমান বাঘ ও হরিণ শিকার করেছে তা বলা যায় না। আসলে বনের মধ্য থেকে বাঘ হত্যা খুবই কঠিন কাজ। হাবিব একদিন আমাকে বলেছে সে ৩২টি বাঘ হত্যা করেছে। এরমধ্যে ১৯টি মহিলা। কিন্তু এসব বাঘ হত্যা করে কি করেছে তা কিছু বলেনি হাবিব।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহাম্মাদ বেলায়েত হোসেন, হাবিব আসলে কতটি বাঘ হত্যা করেছে তা আমাদের জানা নেই। হাবিবের নামে তিনটি বাঘ হত্যার মামলা রয়েছে। মামলার পরেই সুন্দরবনে হাবিবের প্রবেশ নিষেদ্ধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল। হাবিবের মত যারা সুন্দরবনের বন্য প্রাণি হত্যার সাথে জড়িত রয়েছে তাদেরকে আইনের আওতায় আনার জন্য আমাদের জোর প্রচেষ্টা চলছে।

তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে বাঘের প্রত্যেকটি অঙ্গ প্রতঙ্গের উচ্চ মূল্য রয়েছে। যার ফলে একটি আন্তর্জাতিক চক্র বাঘের চামড়াসহ বিভিন্ন অঙ্গ পাচার ও ক্রয় বিক্রয়ের সাথে জড়িত রয়েছে। কয়েকটি হাত বদল হয়ে এসব অঙ্গ প্রতঙ্গ যায় বিদেশে। এই চক্রটি স্থানীয় প্রভাবশালীদের মাধ্যমে বাসিন্দা ও সুন্দরবনের জেলেদের ব্যবহার করে থাকে। এজন্য মূল হোতাদের শনাক্ত করা অনেক দূরহ ব্যপার। তারপরও বন বিভাগের ক্রাইম কন্ট্রোল ইউনিটের মাধ্যমে অপরাধীদের খুজে বের করার চেষ্টা করছি।

শরণখোলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইদুর রহমান বলেন, বাঘ হাবিবের নামে শরণখোলা থানায় তিন ওয়ারেন্ট মুলতবি ছিল। তাকে দীর্ঘদিন ধরে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে সোর্সের মাধ্যমে তার অবস্থান শনাক্ত করে আটক করে শনিবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!