খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ পৌষ, ১৪৩১ | ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  কুমিল্লায় মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে ধাক্কা, নিহত ৩

বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙচুরে মামলা, যুবলীগ নেতা আটক

গেজেট ডেস্ক

কুষ্টিয়ায় ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের বিপ্লবী নেতা যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় মামলা হয়েছে। বাঘা যতীন ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ হারুনর রশিদ বাদী হয়ে শুক্রবার ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেছেন। কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের কয়া গ্রামে বৃহস্পতিবার গভীর রাতের এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চারজনকে থানায় নেওয়া হয়েছে।

এরা হলেন, বাঘা যতীন ডিগ্রি কলেজের সভাপতি নিজামুল হক চুন্নু, অধ্যক্ষ হারুনর রশিদ, নৈশ প্রহরী খলিলুর রহমান ও কয়া ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি আনিচুর রহমান। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন কুমারখালী থানার ওসি মজিবুর রহমান।

ওসি মজিবুর রহমান বলেন, স্থানীয়দের কাছে খবর পেয়ে পুলিশ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। এই ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ইতিমধ্যে চারজনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থাসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তর তদন্ত কাজ শুরু করেছে। যারাই জড়িত থাক তাদের খুব দ্রুত আটক করে আইনের আওতায় আনা হবে।

কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার এস এম তানভির আরাফাত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেন, এই মাসের শুরুর দিকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাংচুরের পর সংসদ সদস্যদের উপস্থিতিতে জেলা প্রশাসন, পুলিশসহ প্রতিনিধিত্বশীল ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে সিদ্ধান্ত হয়েছে যেখানেই ভাস্কর্য আছে তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সিসি ক্যামেরা স্থাপনসহ সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হবে। “কিন্তু এখানে বাঘা যতীনের আবক্ষ ভাস্কর্যটি আছে সেটা আমাদের জানানো হয়নি। সে কারণে কলেজ কর্তৃপক্ষ দায় এড়াতে পারে না। আটক চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।”

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন বলেন, মাত্র কয়েকদিন আগে বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীণ ভাস্কর্য ভাংচুরের ঘটনার রেশ থাকতেই বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের বিপ্লবী নেতা বাঘা যতীনের আবক্ষ ভাস্কর্যটি রাতের আঁধারে দূর্বৃত্তরা ভাঙল; এটা খুবই দুঃখজনক। বিষয়টি খুব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করে দোষীদের চিহ্নিত করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু করেছে বলে জানান তিনি।

কুমারখালীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিবুল ইসলাম খান বলেন, কয়া গ্রামের বাঘা যতীন কলেজ চত্বরে ২০১৬ সালের ৬ ডিসেম্বর বিপ্লবী বাঘা যতীনের এই আবক্ষ মূর্তিটি স্থাপন করা হয়। “কে বা কারা রাতের আঁধারে ভাস্কর্যটির মুখের ডানপাশ এবং নাকের উপর আঘাত করে ভেঙে দিয়েছে। শুক্রবার সকালে স্থানীয়রা দেখার পর বিষয়টি জানাজানি হয়।”

নিন্দা প্রতিবাদ

এদিকে বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাংচুরের ঘটনায় বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের নেতারা প্রতিবাদ করেছেন। কুষ্টিয়ার সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের নেতা কারশেদ আলম বলেন, এখানে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাংচুরে দেশব্যাপী প্রতিবাদের মধ্যেই বিপ্লবী বাঘা যতীনের ভাস্কর্যটি ভাঙা হলো। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সরকারি দলের নেতাদেরও আটক করেছে পুলিশ।

“এতে বোঝা যায় রাজনীতির মধ্যে ভেজাল আছে। রাজনৈতিক ভেজালের মধ্যেই ঢুকে পড়েছে মৌলবাদী শক্তি, তারাই ছত্রছায়ায় থেকে এই আক্রমনগুলি করছে এবং দেশে বিশৃংখলা সৃষ্টি করছে।” ‘রাজনীতি পরিশুদ্ধ না করলে’ এই ভাস্কর্য ভাঙা বা ফতোয়াবাজদের দৌরাত্ম্য চলতে থাকবে বলে তিনি মনে করেন। এসব ঘটনার নিখুঁত তদন্ত ও রহস্য উদ্ঘাদন করে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করতে না পারলে এই পরিস্থিতির উত্তরণ সম্ভব নয় বলেও তিনি মনে করছেন। চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সংগঠক শফিউর রহমান শফি বলেন, “স্বাধীনতাত্তোরকালে বিভিন্ন সরকার সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী শক্তিকে পৃষ্ঠপোষকতা করে, অর্থ দিয়ে, পাঠ্য বইয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী বিষয় সংযোজনের মাধ্যমে শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে। তারই খেসারত দিতে হচ্ছে আজ গোটা জাতির।” এর থেকে পরিত্রাণের জন্য তিনি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে সর্বস্তরের মানুষকে সচেতন ও সোচ্চার করে তোলার আহ্বান জানান।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাঘা যতীন ডিগ্রি কলেজের এক শিক্ষক বলেন, “এখানে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে গ্রুপিং কোন্দলের জের ধরে এক পক্ষ অন্য পক্ষকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার জন্য ভাস্কর্য ভেঙেছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা দরকার।” ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের বিপ্লবী সংগঠন ‘যুগান্তর দলে’র নেতা যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের জন্ম ১৮৭৯ সালে কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালীতে। খালি হাতে বাঘ মারার কারণে তিনি ‘বাঘা যতীন’ নাম পান। ১৯১৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলিতে নিহত হন যতীন। সে সময় তার বয়স ছিল মাত্র ৩৬ বছর। মুজিববর্ষে ঢাকার ধোলাইড়পাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হলে তার বিরোধিতা শুরু করেন কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক বিভিন্ন সংগঠনের জোট হেফাজতে ইসলামের নেতারা।

হেফাজতের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মামুনুল হক ভাস্কর্য তৈরি করা হলে তা ‘বুড়িগঙ্গায় ফেলার’ হুমকি দেন। এরপর চট্টগ্রামে এক ধর্মীয় সভায় হেফাজত আমির জুনাইদ বাবুনগরী যে কারও ভাস্কর্য তৈরি করা হলে ‘টেনেহিঁচড়ে’ ভেঙে ফেলার হুমকি দেন। এ নিয়ে প্রতিবাদের মধ্যেই ৪ ডিসেম্বর রাতে কুষ্টিয়ায় জাতির পিতার একটি নির্মাণাধীন ভাস্কর্যে ভাঙচুর চালানো হয়। ওই ঘটনায় স্থানীয় এক মাদ্রাসার দুই ছাত্র এবং দুই শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যারা ইতোমধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।

 

খুলনা গেজেট / এমএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!