খুলনা, বাংলাদেশ | ২০ কার্তিক, ১৪৩১ | ৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  গত ২৪ ঘন্টায় ডেঙ্গুতে ৬ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ১৩৭০
  এলপি গ্যাসের দাম কমলো ১ টাকা
  ড. ইউনূসকে প্রধান করে ১০ সদস্যের পরিকল্পনা কমিশন গঠন; প্রজ্ঞাপন জারি

বাগেরহাটে মূল হত্যাকারীদের বাদ দিয়ে মামলা, প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগেরহাট

বাগেরহাটের কচুয়ায় পলাশ শেখের মূল হত্যাকারীদের আসামী না করে নিরপরাধ মানুষদের আসামী করে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গোপনে হত্যাকারীদের সাথে আততাদের মাধ্যমে এই ষড়যন্ত্রমূলক মামলা করেছেন হত্যার শিকার পলাশের বোন সালমা বেগম। ষড়যন্তমূলক মামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবার (০৫ নভেম্বর) বেলা ১১টায় উপজেলার ফতেপুর বাজার সংলগ্ন মহাসড়কে মানববন্ধন করেন স্থানীয় বাসিন্দা ও নিরপরাধ আসামীদের স্বজনরা। মানববন্ধন শেষে বাগেরহাট-পিরোজপুর মহাসড়ক বন্ধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেন ক্ষুব্ধ জনতা।

এসময় বক্তব্য দেন বাগেরহাট জেলা মহিলা দলের সভাপতি শাহিদা আক্তার, রাড়িপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সরদার রেজাউল হোসেন চল, সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান, বিএনপি নেতা সরদার শাহনেওয়াজ, মাসুদ প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, বিএনপি আব্দুর রব ও হুমায়ুন কবিরের নির্দেশে এবং নেতৃত্বে তাদের ভাগ্নে পলাশকে হত্যা করা হয়েছে। পলাশদের সাথে তাদের জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে এই হত্যার ঘটনা ঘটেছে এটা দিনের আলোর মত সত্যি। পলাশের মা ও বোন স্পষ্টভাবে এই বক্তব্য দিয়েছেন। কিন্তু মামলায় তাদেরকে আসামী না দিয়ে সব নিরপরাধ মানুষকে আসামী দেওয়া হয়েছে। আমরা এই মিথ্যা মামলার প্রতিবাদ জানাই, প্রকৃত আসামীদের খুজে বের করে শাস্তি দাবি করেন মানববন্ধনকারীরা।

উল্লেখ্য, ২৯ অক্টোবর রাতে ফতেপুর বাজার এলাকায় পলাশ শেখ (৩৬) নামের এক যুবককে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পরের দিন বুধবার (৩০ অক্টোর) সকালে থানার সামনে বসে পলাশের মা, বাবা, বোন ও স্ত্রী বলেছিলেন জমি সংক্রান্ত বিরোধের কারণে পলাশের মামা বিএনপি নেতা আব্দুর রব ও হুমায়ুন কবিরের নির্দেশ এবং নেতৃত্বে এই হত্যাকান্ড ঘটেছে। কিন্তু গেল ৩ নভেম্বর পলাশের বোন সালমা বেগম বাদী হয়ে ৫৩ জনকে আসামী করে বাগেরহাট আদালতে একটি মামলা করেন। যে মামলার বেশির ভাগ আসামী ঘটনাস্থলে ছিলেন না এবং বিএনপির নেতা। বুধবার সালমা বেগমও বলেছিলেন, তাদের মামা আব্দুর রব ও হুমায়ুন কবিরের নেতৃত্বে ও নির্দেশে এই হত্যার ঘটনা ঘটেছে।

নিহতের মা হেলেনা বেগম বলেছিলেন, বাবার বাড়িতে পাওয়া প্রায় দেড় বিঘা জমি জাল দলিল করে আমার ভাই বিএনপি নেতা আব্দুর রব ও কবির জাল দলিল করে নিয়েছেন। এই জমি ফেরত চাওয়াকে কেন্দ্র করে ভাইদের সাথে আমাদের পরিবারের বিরোধ ছিল। কিন্তু সরকার পরিবর্তন হওয়ার পরে রব আমার ছেলেকে ডেকে তার সাথে নিয়ে বিভিন্ন অপরাধ করিয়েছে। কয়েককদিন আগে জমি ফেরত চাইলে রব ও কবির আমার ছেলে পলাশকে বাড়ি থেকে বের হতে নিষেধ করে। গতকালও আমার ছেলে বাড়িতে ছিল। স্থানীয় শিমুল কয়েকবার ফোন করে, কুমারগাড়িয়া ঘেরের (সরকারি জমিতে দখল করা ঘের) ভাগের টাকা দেওয়ার কথা বলে ডেকে নেয়। বাইরে থেকে আনা ৫জন লোক এবং স্থানীয় অনেক লোককে দিয়ে রব ও কবির আমার ছেলেকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে মেরে ফেলেছে। পরে পুলিশ খবর পেয়ে আমার ছেলেকে নিয়ে আসছে। আমি রব-কবির এবং যারা আমার ছেলেকে মেরেছে তাদের ফাসি চাই।আমার ছেলেকে কেউ একটু পানিও দেয়নি বলে বিলাপ করতে থাকেন সন্তান হারা মা।

মামলার নথিতে দেখা যায়, উপজেলা যুবদল নেতা শেখ মহিউদ্দিন, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা শামীম হাসান রাবু, কচুয়া প্রেসক্লাবের সদস্য দৈনিক জবাবদিহি পত্রিকার বাগেরহাট প্রতিনিধি শামীম হাসানকেও আসামী করা হয়েছে। অন্যদিকে আব্দুর রব ও তার ভাই হুমায়ুন কবিরসহ হত্যার সাথে জড়িতদের এই মামলায় স্বাক্ষী রাখা হয়েছে।

বাগেরহাট জেলা মহিলা দলের সভাপতি শাহিদা আক্তার বলেন, এই মামলায় অনেক নিরপরাধ বিএনপির নেতাকর্মীদের আসামী করা হয়েছে। নিরপরাধ মানুষদের নামের মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। সেই সাথে দ্রুত সময়ের মধ্যে মূল হত্যাকারীদের শনাক্ত এবং গ্রেপ্তারের দাবি জানান এই নেত্রী।

এ বিষয়ে কচুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ রাশেদুল আলম বলেন, আদালতের আদাশে আমরা মামলা নথিভুক্ত করেছি। তদন্ত পূর্বক আসামীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যদি কোন নিরাপরাধ ব্যক্তিকে আসামী করা হয়, তাকে অব্যাহতি দেওয়া হবে। কোন অপরাধি যদি আসামী না হয়, তাকেও আসামী করে গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

তবে এ বিষয়ে কথা বলার জন্য পলাশের স্বজনদের সাথে যোগাযোগ করা হলেও, তাদের কাউকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি এবং ফোন রিসিভ করেননি।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!