দীর্ঘদিন ধরে বাগেরহাটে প্রবাহমান হোজির নদী দখল করে মাছ চাষ করছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। সদর উপজেলার ডেমা ইউনিয়নে সাড়ে ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের নদীটির ৬ কিলোমিটারে মাছ চাষ করা হচ্ছে। সরকার দলীয় স্থানীয় বিভিন্ন পর্যায়ের ২০ থেকে ২৫ জন নেতাকর্মী সমন্বিতভাবে ২০০৯ সাল থেকে এখানে মাছ চাষ করছেন।
দখলকারীরা বলছেন যে, সরকারী কোন সংস্থা আমাদের মাছ চাষ করতে নিশেধ করেন নাই, তাই আমরা মাছ চাষ করছি।
বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে নদী দখলমুক্ত করা হবে।
সরোজমিনে দেখা যায়, বাগেরহাট-রামপাল সড়কের ডেমা ইউনিয়নের হোজির ব্রিজের দক্ষিণ দিকে খেগরাঘাট পর্যন্ত তিন কিলোমিটার এবং ব্রিজ থেকে উত্তর দিকে বৈটেঘাটা পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার নদীতে বাধ দিয়ে মাছ চাষ হচ্ছে।
নদীর উপর নির্মিত ব্রীজ এর নিচে দেওয়া হয়েছে বাঁধ। বাঁধের উপর অস্থায়ী ঘর নির্মান করে মাছ চাষের খাবারসহ বিভিন্ন মালামাল রাখা রয়েছে। এছাড়া বেশকিছু জায়গায় নেট, পাটা দেওয়া রয়েছে।
মৎস চাষের ঘের রক্ষনাবেক্ষনের কাজে নিয়োজিতরা, নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ব্রীজটির নিচের বাঁধ দিয়ে নদীটিকে দুইভাগে ভাগ করা হয়েছে। ব্রীজের দুই পাশের লোকেরা দুই পাশে মাছ চাষ করেন।
তারা আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এখানে মাছ চাষ করা হয়। যে সরকার যখন ক্ষমতায় থাকে তখন তাদের লোকজন মাছ চাষ করে। এখানে সাধারণ মানুষের বলার কিছু নেই।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে আরও জানা যায়, ডেমা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি রবিউল ইসলাম, ৫নং ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য ও ডেমা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ফরিদ মোল্লা, ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক নকিব হাই, ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ফরহাদ শেখ, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য সাইফুল ফকিরের নেতৃত্বে এই খালে মাছ চাষ করা হয়। এর সাথে সব মিলিয়ে ২০ থেকে ২৫ জন রয়েছেন মাছ চাষের সাথে।
নদী দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে ডেমা ইউনিয়েনের ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি রবিউল ইসলাম বলেন শুধু আমি একা এই খালে মাছ চাষ করি না। দীর্ঘ দিন ধরে এই খালে মাছ চাষ করা হয়। যে সরকার যে সময়, আসে সেই সরকারের লোকজন এখানে মাছ চাষ করে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে, আমরা ঘের করা শুরু করি। আমার সাথে প্রায় ২০ থেকে ২৫ জন রয়েছেন। এ মৌসুমে আমরা প্রায় ৭ লাখ টাকার গলদা, বাগদা, রুই ও কাতলাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ছেড়েছি।
সরকারি নদী দখল করে ঘের করা অপরাধ, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মাইকিংও করা হয়েছে তারপরও কেন করেন এমন প্রশ্নে রবিউল ইসলাম বলেন, কেউ কখনও আমাদের খাল দখল করে ঘের করতে নিষেধ করেন নি। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মাইকিং করার বিষয়টি আমি জানি না।
নদী দখলের বিষয়ে কি পদক্ষেপ নিয়েছেন জানতে চাইলে ডেমা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনি মল্লিক বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সরকারী নদী, খাল মুক্ত করার জন্য আমরা মাইকিং করেছিলাম। কিছু কাজও হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) বাগেরহাটের আহ্বায়ক মো. নূর আলম শেখ বলেন, নদ-নদী রক্ষার বিষয়ে উচ্চ আদালতের সুস্পষ্ট রায় রয়েছে। প্রতিটি জেলায় দখলদারদের তালিকা করার নির্দেশনাও রয়েছে ওই রায়ে। এর পরেও কেউ কেউ প্রবাহমান নদী-খাল দখল করে মাছ চাষ করছেন। পাশাপাশি খাল ভরাট করে স্থাপনা নির্মানেরও ঘটনা রয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে নদী দখলকারীদের তালিকা প্রস্তুত করে দখলমুক্ত করার দাবি জানান তিনি।
বাগেরহাট সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুছাব্বেরুল ইসলাম বলেন, সরকারি খাল ও নদী দখল করে মাছ চাষ বা অন্যকিছু করার সুযোগ নেই। যদি কেউ করে তার বিরুদ্ধে আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করব। হোজির নদীতে দেওয়া সকল বাঁধ জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে অপসারণ করার আশ্বাস দেন তিনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড, বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মাসুম বিল্লাহ বলেন, দেশের ৬৪টি জেলায় অভ্যন্তরীণ ছোট নদী, খাল ও জলাশয় খনন প্রকল্পের আওতায় ডেমা ইউনিয়নের হোজির নদীটি খনন করা হয়েছিল। এই নদী খননের জন্য কত টাকা ব্যয় হয়েছিল সে সব বিষয়ে এই মুহুর্তে বলা যাচ্ছে না। নদী ও খাল খননের সময় আমাদের তদারকি থাকে, আমরা দেখভাল করি। খনন শেষে এই খাল ও নদীর দায়-দায়িত্ব জেলা প্রশাসনের বলে দাবি করেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই কর্মকর্তা।
খুলনা গেজেট / আ হ আ