বাগেরহাটে ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’ এর প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে পাকা ধান, ধান-গমের বীজতলা, রবি শস্য ও শীতকালীন সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মাঠে জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে ধান ঝরে পড়েছে। পানিতে পচেছে বোরো ধানের বীজতলা। হঠাৎ বৃষ্টিতে বিপুল পরিমান শীতকালীন সবজির গোড়া পচে গেছে। রবিবার (০৫ ডিসেম্বর) থেকে সোমবার (৬ ডিসেম্বর) পর্যন্ত একটানা বৃষ্টির ফলে অনাকঙ্খিত ক্ষতিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন স্থানীয় কৃষকরা।
বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, টানা দুই দিনের বৃষ্টিতে বাগেরহাট জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ১৫০ হেক্টর পাকা আমন ধানের ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া ২০৭ হেক্টর বোরোর বীজতলা, গমের বীজতলা ১৭ হেক্টর, ১৩৭ হেক্টর সরিষা ক্ষেত, ১৬১ হেক্টর খেসারি, ৩০ হেক্টর মসুর ডাল, ৩৫ হেক্টর শীতকালীন সবজি ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এতে টাকার অংকে কি পরিমান ক্ষতি হয়েছে, তা জানাতে পারেনি কৃষি বিভাগ।
শরণখোলা উপজেলার আমড়াগাছিয়া গ্রামের বাদশা খলিফা বলেন, আমরা যারা কৃষক, আমাদের সব শেষ। মোটাধান কেটে মাঠে রেখে দিছিলাম। চারদিনের বর্ষায় সব শেষ হয়ে গেল।
একই উপজেলার বাদশা খলিফা, ইয়াকুবসহ আরও অনেকে বলেন, ইয়াসের ধাক্কায় আমনের বীজতলা নষ্ট করে দিল। খুব কষ্টে বীজ যোগার করে, ধান রোপন করেছিলাম। এখন বৃষ্টির কারণে পাকা ধান মাটিতে নুয়ে পড়েছে। আবার কারও কারও কাটা ধানও রয়েছে জমিতে। এদেরতো একেবারে মাথায় হাত।
বাগেরহাট সদর উপজেলার যাত্রাপুর এলাকার মহিবুল্লাহ বলেন, আমাদের বাৎসরিক আয়ের একটা বড় শীতকালীন সবজি। কয়েকদিন পরেই লাল শাক, বেগুন, মূলা, পাতা কফি, ফুল কপি ও ওল কপির বিক্রি করতে পারতাম। কিন্তু টানা বৃষ্টিতে শিকর পচে গেছে। রোদ পেলে বেশিরভাগ সবজি ঢলে পড়বে। খুব বড় ক্ষতি হয়ে গলে আমাদের।
কুচয়া উপজেলার নরেন্দ্রপুর গ্রামের বোরো চাষী হেমায়েত মোল্লা বলেন, বীজতলায় কেবলমাত্র ধানের চারা এসেছিল। টানা বৃষ্টিতে আমাদের বোরো ধানের চারাগুলো পচে গেছে। এখন আবার ধান কিনতে হবে, প্রক্রিয়াজাত করে আবার বুনতে হবে। অনেকদিন পিছিয়ে গেলাম আমরা। শুধু হেমায়েত নয়, বাগেরহাট সদর, কচুয়া, চিতলমারী, মোল্লাহাট, মোরেলগঞ্জ, ফকিরহাট উপজেলার বেশকিছু বোরো ধানের বীজতলা নষ্ট হয়েছে এবারের বৃষ্টিতে।
বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ আজিজুর রহমান বলেন, টান বর্ষণে পাকা ধান, ধানের বীজতলা, গমের বীজতলা, শীতকালীণ সবজি ও বেশকিছু রবি শস্যের ক্ষেত আক্রন্ত হয়েছে। মূলত টাকার অংকে কি পরিমান ক্ষতি হয়েছে, কত কৃষকের ক্ষতি হয়েছে সে বিষয়টি এখনই বলা যাচ্ছে না।আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি সুনির্দিষ্টভাবে বলা যাবে।