পাকিস্তান সৃষ্টির এক বছর পর সরকার বিরোধী প্রথম ছাত্র সংগঠন হিসেবে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের আত্মপ্রকাশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ও ফজলুল হক হলে কয়েকটি ছাত্রসভার পর ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ যাত্রা শুরু করে। ছাত্রলীগের ১৬ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটির একজন খুলনার শেখ আব্দুল আজিজ। তিনি ১৯৫১-১৯৭৩ পর্যন্ত খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম তথ্য, পরে কৃষি মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য হিসেবে তার সাংগঠনিক দায়িত্ব ছিল বৃহত্তর খুলনা জেলায়।
ছাত্রলীগের পক্ষে জনমত গঠন এবং ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ সরকারের বিরুদ্ধে বাগেরহাট মহাকুমায় ১৯৪৮ সালের আগস্ট মাসে কয়েকটি জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। ছাত্রলীগ আয়োজিত জনসভায় কেন্দ্রীয় সদস্য শেখ আব্দুল আজিজ বক্তৃতা করেন। এ সময় ছাত্রলীগের স্থানীয় সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মীর মোশারেফ আলী ও ডা: আব্দুল লতিফ।
পূর্ব পাকিস্তান সৃষ্টির প্রথম দিকে স্থানীয় এম এল এ’র পৃষ্ঠপোষকতায় ধান- চালসহ বিভিন্ন পণ্য পাচার হত। বাগেরহাট মহাকুমা প্রশাসক আকরাম উদ্দিনের সহায়তায় মুসলিম লীগের চোরাকারবারীদের সিন্ডিকেট গড়ে ওঠে। সরকারী দলের সমর্থকদের গণবিরোধী কার্যকলাপ এবং মহাকুমা প্রশাসক আকরাম উদ্দিনকে চোরামদ্দী আখ্যা দিয়ে ছাত্রলীগ কয়েকটি সভা সমাবেশ করে। অন্যান্যের মধ্যে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য শেখ আব্দুল আজিজ সভা সমাবেশে বক্তৃতা করেন। এ বক্তব্যের ফলে নির্যাতনমূলক আইনে মহাকুমা প্রশাসক তখন শেখ আব্দুল আজিজের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি করে। তিনি ছয় মাস আত্মগোপনে থাকেন।
ছাত্রলীগের অপর কেন্দ্রীয় নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে এ ঘটনা জানানোর পর তিনি বাগেরহাটে ছাত্রসভার আয়োজন করার পরামর্শ দেন। ১৯৪৮ সালের ডিসেম্বরের প্রথম দিকে ছাত্রলীগ নেতা আব্দুস সাত্তার খানের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় পি সি কলেজ সংলগ্ন রাম নারায়ণ পার্কে ছাত্রসভার আয়োজন করা হয়। প্রধান অতিথি ছিলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য শেখ মুজিবুর রহমান। ছাত্রসভা শেষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে একটি জঙ্গি মিছিল মহাকুমা হাকিমের কোর্ট ঘেরাও করে। মিছিল দেখে মহাকুমা হাকিম পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যান। মহাকুমা প্রশাসকের নির্দেশে বাগেরহাট মহাকুমা মুসলিম লীগের সম্পাদক মাওলানা ইসমাইল হোসেন এর এক বিবৃতি কলকাতার দৈনিক ইত্তেহাদ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় শেখ আব্দুল আজিজের বিরুদ্ধে কোন গ্রেপ্তারী পরোয়ানা নেই। জঙ্গি মিছিলে বঙ্গবন্ধুর পাশে ছিলেন ডা: আব্দুল লতিফ ও আব্দুস সাত্তার খান।
সূত্র :
১. প্রাক্তন মন্ত্রী শেখ আব্দুল আজিজ রচিত রাজনীতির একাল সেকাল।
২. জেলা গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন (সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইনটেলিজেন্স ব্রাঞ্চ ফাদার অব নেশান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ভলিউম-১)