যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেনের জয় নিশ্চিত হওয়ার খবর মানতে পারছেন না বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আজ শনিবার স্থানীয় সময় সকালে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জো বাইডেনের নির্বাচনে জয়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন। একই সঙ্গে এই ডেমোক্র্যাটরা নির্বাচনে জয়ের ভুয়া দাবি করছেন বলে অভিযোগ করেছেন। বাইডেনের জয়ের খবর দেওয়া মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলোর সমালোচনা করতেও তিনি ছাড়েননি।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর বিবৃতিতে ডেমোক্র্যাটরা নির্বাচনে জয়ের ভুয়া দাবি করছে বলে উল্লেখ করেন। একই সঙ্গে এসব ভোট গণনার আগেই জয়ের পূর্বাভাস দেওয়ায় সমালোচনা করেন মার্কিন সংবাদমাধ্যমের।
ট্রাম্প তাঁর প্রচার শিবিরের মাধ্যমে স্থানীয় সময় শনিবার সকাল ১১টা ৪৫ মিনিটে পাঠানো এই বিবৃতিতে বলেন, ‘সত্য হচ্ছে নির্বাচন শেষ হতে এখনো অনেক বাকি।’
এতে বলা হয়, অথচ ভোট গণনা শেষ হওয়ার আগেই নিউইয়র্ক টাইমস, অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসসহ প্রতিটি বড় টিভি চ্যানেলের খবরে বলা হয়েছে, প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বাইডেন বিজয়ী হয়েছেন। তারা বলছে, বাইডেন পেনসিলভানিয়ার ২০টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পাচ্ছেন। এর মাধ্যমে তাঁকে প্রেসিডেন্সির জন্য প্রয়োজনীয় ২৭০ ইলেকটোরাল ভোটের বেশি পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে।
ট্রাম্প তাঁর বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা জানি, বিজয়ী হওয়ার ভুয়া দাবি এত তাড়াহুড়া করে কেন তুলছেন বাইডেন এবং তাঁর মিত্র সংবাদমাধ্যমগুলো কেন তাঁকে সহায়তা করছে। তারা চায় না সত্য সামনে আসুক।’
ওই বিবৃতিতে ট্রাম্প বলেন, নির্বাচনের আইন পুরোপুরি মানা হয়েছে এবং ন্যায্য বিজয়ীই ক্ষমতায় বসছেন—এ বিষয়টি নিশ্চিতের জন্য তাঁর প্রচার শিবির আগামী সোমবার নাগাদ আদালতের দ্বারস্থ হবে।
পুনঃগণনা অবশ্যম্ভাবী এমন প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ অঙ্গরাজ্যগুলোর কথা দূরে থাক, জো বাইডেন কোনো অঙ্গরাজ্যে বিজয়ী হয়েছেন বলে সনদ দেওয়া হয়নি। যেসব অঙ্গরাজ্যে আমাদের প্রচার শিবির থেকে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সেগুলোর নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত চূড়ান্ত বিজয়ী পাওয়া যাবে না এ সম্পর্কিত প্রতিবেদনে নিউইয়র্ক পোস্ট বলেছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনের ফল অস্বীকার করেছেন।
প্রেসিডেন্টের স্বাক্ষরিত ওই বিবৃতিতে বলা হয়, পুনঃগণনা অবশ্যম্ভাবী এমন প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ অঙ্গরাজ্যগুলোর কথা দূরে থাক, জো বাইডেন কোনো অঙ্গরাজ্যে বিজয়ী হয়েছেন বলে সনদ দেওয়া হয়নি। যেসব অঙ্গরাজ্যে আমাদের প্রচার শিবির থেকে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সেগুলোর নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত চূড়ান্ত বিজয়ী পাওয়া যাবে না।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ অঙ্গরাজ্য ও ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়ার কোনোটিতেই নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করা হয়নি। কোনোটিতেই ট্রাম্প বা বাইডেনের কাউকেই বিজয়ী হিসেবে সরকারি ঘোষণা আসেনি।
কিন্তু ট্রাম্প সেদিকে না হেঁটেই তাঁর বিবৃতিতে বিশেষত পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের কথা উল্লেখ করেছেন। এই অঙ্গরাজ্যের ২০টি ইলেকটোরাল ভোট পাওয়া নিশ্চিত হওয়ার কারণেই বাইডেনের ইলেকটোরাল ভোটের সংখ্যা ২৭০ ছাড়িয়ে যায় এবং পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো জো বাইডেনের নাম প্রচার করে। এই প্রসঙ্গ তুলে বিবৃতিতে ট্রাম্প বলেন, ‘বৈধ ভোটই বলবে কে প্রেসিডেন্ট, কোনো সংবাদমাধ্যম নয়।’
উল্লেখ্য, ভোট গণনা চলার সময়েই ব্যাটলগ্রাউন্ড অঙ্গরাজ্যগুলোর বেশ কয়েকটিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচার শিবির থেকে মামলা করা হয়েছিল। কিন্তু এই মামলাগুলো আদালতে টেকেনি।
শুরু থেকেই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার নানা চেষ্টা করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর ঘনিষ্ঠরা। যেসব অঙ্গরাজ্যে তিনি এগিয়ে ছিলেন, সেসবে তিনি গণনা বন্ধ এবং যেসব অঙ্গরাজ্যে তিনি পিছিয়ে ছিলেন, সেসবে তিনি জালিয়াতির অভিযোগ তোলেন। কিন্তু এসব দাবির কোনোটির ক্ষেত্রেই তিনি কোনো প্রমাণ হাজির করতে পারেননি।
যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়াতে এক সংবাদ সম্মেলনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আইনজীবী রুডি জুলিয়ানি বলেছেন, নির্বাচনের ফলের বিরুদ্ধে তারা সোমবার থেকে আইনী লড়াই শুরু করবেন। ভোটে অনিয়মের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ফিলাডেলফিয়াতে অনেক মৃত বাসিন্দা এবার ভোট দিয়েছেন। এর মধ্যে অভিনেতা উইল স্মিথের মৃত পিতার নামেও ভোট দেয়া হয়েছে।
জুলিয়ানির কথায়, আমরা যে পরিমাণ ভোটে এগিয়েছিলাম তা দুর্নীতি ছাড়া অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে না। তবে একথার পক্ষে কোন প্রমাণ আছে বলে মনে হচ্ছে না।
জুলিয়ানি বলেন, তার পাশে যারা দাঁড়ানো তাদের মধ্যে ৫০ থেকে ৬০জন নির্বাচন পর্যবেক্ষক আছেন এবং তাদের “নিয়মিতভাবে ডাক যোগে পাঠানো ভোটের কোন অংশ পর্যবেক্ষণ করার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।”
তবে ফেডারেল বিচারক ইতোমধ্যেই বলেছেন ট্রাম্প প্রচার টিমের সদস্যরা ফিলাডেলফিয়াতে এই মুহূর্তে ভোট গণনার কাজ পর্যবেক্ষণ করছেন।
নির্বাচনের রাত থেকেই ডোনাল্ড ট্রাম্প ভোট গণনার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেছেন এবং বলেছেন তিনিই নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন। নির্বাচনী কর্মকর্তারা বারবার বলছেন, কোনরকম ভোট জালিয়াতির কোন তথ্যপ্রমাণ নেই।
ভোটের দৌড়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পেছনে পেছনে রেখে ২৯০ ইলেক্টোরাল ভোটে হোয়াইট হাউস নিজের করে নেন দুইবারের ভাইস প্রেসিডেন্ট এ প্রবীণ রাজনীতিবিদ। ট্রাম্প পেয়েছেন ২১৪টি ইলেক্টোরাল ভোট।
বাইডেনের এ জয় যুক্তরাষ্ট্রে ইতিহাস গড়েছে। সবচেয়ে বেশি বয়সে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার ইতিহাস তার দখলেই।
এছাড়া এর আগেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পপুলার ভোট অর্জন করার ইতিহাসও সৃষ্টি করেছেন ৭৭ বছর বয়সী এই প্রবীণ ডেমোক্র্যাট।
১৯৯২ সালে জর্জ এইচডব্লিউ বুশের পর কোনো প্রেসিডেন্ট দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসতে না পারার রেকর্ড এখন ট্রাম্পের। সূত্র: বিবিসি বাংলা।