হারাতে প্রথম দিনটা চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে গেছে বাংলাদেশ। ভয়ংকর বিপর্যয় কাটিয়ে পরে দিনটা শেষ করেছিল স্বস্তি নিয়ে। দ্বিতীয় দিনটায় অতটা না হলেও অনেকটা ওভাবেই এগিয়েছে জিম্বাবুয়ে। দ্বিতীয় দিনের প্রায় বড় একটা অংশ বাংলাদেশের দাপট দেখা স্বাগতিক দল দ্বিতীয় দিন শেষটা হাসি নিয়েই শেষ করল। ১১৪ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিন শেষ করেছে জিম্বাবুয়ে। বাংলাদেশের চেয়ে এখনো ৩৫৪ রানে পিছিয়ে থাকলেও ৪১ ওভারে মাত্র ১ উইকেট হারানোর স্বস্তি ঠিকই পাচ্ছে দলটি।
আজ দ্বিতীয় দিনটা ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের জন্য ছিল দাপট দেখানোর। মাহমুদউল্লাহ ও তাসকিনের রেকর্ড নবম উইকেট জুটিতে প্রথম ইনিংসে ৪৬৮ রান পর্যন্ত গিয়েছিল বাংলাদেশ। অথচ আগেরদিন ১৩২ রানে ৬ উইকেট হারানো বাংলাদেশ ২৭০ রানে হারিয়েছিল লিটন দাসকে। বোলিংয়ে নেমে অবশ্য সে তৃপ্তি থাকেনি। জিম্বাবুয়ের ওপেনার তাকুজোয়ানশে কাইতানো অপরাজিত আছেন ৩৩ রানে। তাঁর সঙ্গী অধিনায়ক ব্রেন্ডন টেলর ইতিবাচক ঢঙে করেছেন ৪৬ বলে ৩৭ রান।
৮ উইকেটে ২৯৪ রান নিয়ে দিন শুরু করেছিল বাংলাদেশ। এরপরের পুরো গল্পটাই ছিল মাহমুদউল্লাহ ও তাসকিন আহমেদের। দুজন মিলে যোগ করেছেন ১৯১ রান, আগেরদিন ২৪ রানে অবিচ্ছিন্ন থাকা জুটি আজ এনে দিয়েছেন আরও ১৬৭ রান। মাহমুদউল্লাহ করেছেন ক্যারিয়ার সর্বোচ্চ ১৫০ রান, আর ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটিকে ৭৫ পর্যন্ত টেনে নিয়েছেন তাসকিন।
সকালটা শুরু হয়েছিল উত্তাপে। প্রথমে ব্লেসিং মুজারাবানির সঙ্গে ঠোকাঠুকি লেগে গিয়েছিল তাসকিনের। পরে ভিক্টর নিয়াউচির সঙ্গে মাহমুদউল্লাহর। তবে তাতে মনঃসংযোগে চিড় ধরেনি তাসকিন-মাহমুদউল্লাহর, দীর্ঘ সময় হতাশ করে গেছেন তারা জিম্বাবুয়েকে।
আট নম্বরে নেমে করা সেঞ্চুরিতে প্রত্যাবর্তনের দারুণ গল্প লিখেছেন মাহমুদউল্লাহ। টেস্ট দল থেকে বাদ পড়েছিলেন, যে সংস্করণে তাঁর ক্যারিয়ারটাও শেষ বলে হয়তো ধরে নিয়েছিলেন অনেকেই। তবে আগেরদিন ৫৪ রানে অপরাজিত মাহমুদউল্লাহ এ দিনটা নিজের করে নিলেন।
তাসকিনকে সঙ্গে নিয়ে প্রথম সেশনে অপরাজিত ছিলেন। লাঞ্চের আগেই পেয়ে গেছেন সেঞ্চুরি। রয় কাইয়ার বলে কাট করে তিন অঙ্কে গেছেন ১৯৫তম বলে। অথচ আগেরদিন ফিফটি করতেই ১৩৩ বলে লেগেছিল তাঁর। টেস্ট ক্যারিয়ারে এটি পঞ্চম সেঞ্চুরি তাঁর, যদিও ২০১৯ সালের হ্যামিল্টন টেস্টের পর এটাই প্রথম। পুরো ইনিংসে দারুণ সব ড্রাইভ করেছেন তিনি, সঙ্গে আড়াআড়ি শটও খেলেছেন বেশ দাপটের সঙ্গে। ২৭৮ বলের ইনিংসে ১৭টি চারের সঙ্গে মেরেছেন একটি ছয়। আট নম্বরে নেমে এটি দ্বিতীয় সেঞ্চুরি তাঁর। টেস্ট ইতিহাসেই আটে নেমে এর চেয়ে বেশি রান আছে আর চার ইনিংসে।
মাহমুদউল্লাহর জন্য ব্যাপারটা যখন প্রত্যাবর্তনের, তাসকিনের জন্য সেটি নতুনভাবে পরিচিত হওয়ার। টেস্ট ক্রিকেট বা প্রথম শ্রেণি কেন, স্বীকৃত পর্যায়ের ক্রিকেটেও এর আগে তাঁর সর্বোচ্চ স্কোর ছিল ৩৮। অথচ সেই তাসকিনই খেললেন দারুণ সব শট। ৬৯ বলে ফিফটি পাওয়া তাসকিন এরপর একটু রক্ষণাত্মক হয়েছেন। শেষ পর্যন্ত মিল্টন শুম্বাকে স্লগ সুইপের চেষ্টায় বোল্ড হয়েছেন। ৭৫ রানের ইনিংসে ছিল ১১টি চার।
এর আগে ৩২ ও ৬৬ রানে দুইবার জীবন পেয়েছিলেন তাসকিন—প্রথমবার স্লিপে ক্যাচ পড়েছিল, পরেরবার বেঁচেছিলেন রান আউট থেকে। তবে যখন আউট হলেন, নবম উইকেট জুটির বিশ্ব রেকর্ড থেকে ছিলেন ৪ রানের দূরত্বে। সেটি না হলেও বাংলাদেশের ৯ম উইকেট জুটির রেকর্ড ঠিকই ভেঙেছেন তাসকিন ও মাহমুদউল্লাহ।
তাসকিনের পর ইবাদত হোসেন বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ৮ বল খেলে মুজারাবানির বলে এলবিডব্লু হয়েছেন তিনি। মুজারাবানি শেষ পর্যন্ত ৪ উইকেট নিয়েছেন ৯৪ রানে। দুটি করে উইকেট নিয়েছেন ডোনাল্ড তিরিপানো ও নিয়াউচি।
বড় স্কোরের চাপ নিয়েও দুই জিম্বাবুইয়ান ওপেনার শুরুটা ভালোই করেছিলেন। অভিষিক্ত তাকুজোয়ানশে কাইতানো ও শুম্বার জুটি ভাঙতে ২৮তম ওভার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে বাংলাদেশকে। আগেরদিন জিম্বাবুইয়ান পেসাররা যেমন মুভমেন্ট পেয়েছিলেন সকালে, তাসকিন-ইবাদত তেমন পাননি। ৯ম ওভারেই বোলিংয়ে এসেছিলেন সাকিব।
শিগগিরই ব্রেকথ্রু দিতে পারেননি তিনিও। অবশেষে ২৮তম ওভারে গিয়ে তাঁর ফুল লেংথের বল সুইপ করতে গিয়ে মিস করেছেন শুম্বা। দিনের শেষবেলাটা কাইতানোর সঙ্গে নিরাপদে কাটিয়েছেন অধিনায়ক ব্রেন্ডন টেলর। দুজনের অবিচ্ছিন্ন জুটি এনে দিয়েছে ৫৩ রান।
খুলনা গেজেট/এমএইচবি