পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে ১০ রানে হারিয়ে সিরিজ জিতে নিলো বাংলাদেশ। চারটি টি-টোয়েন্টিতে হেরে যাওয়া বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়া বিপক্ষে পরপর তিন ম্যাচ জিতে ঐতিহাসিক সিরিজ নিশ্চিত করেছে।
সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি জিতেই এই ফরমেটে প্রথমবার অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর স্বাদ পেয়েছিল টাইগাররা। সেই ইতিহাসের পাতায় নতুন রেকর্ড যোগ হয় টানা দ্বিতীয় জয়ে। সামনে ছিল প্রথমবারের মত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যে কোনো ফরমেটে সিরিজ জয়ের হাতছানি। সেই ইতিহাসও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল গড়ে ফেলল দুই ম্যাচ হাতে রেখেই।
শুরুতে চাপে পড়লেও বাংলাদেশের জয়ের বাধা হয়ে দাড়িয়েছিলেন মিচেল মার্শ। নেমেছিলেন ৮ রানে প্রথম উইকেট যাওয়ার পর। ৪৫ বলে ফিফটিও করেন। বেন ম্যাকডারমটের সঙ্গে জুটিতে অস্ট্রেলিয়াকে উদ্ধারের চেষ্টা করেছেন। এ উইকেটটাই খুঁজছিল বাংলাদেশ।
রান-বলের ব্যবধান বাড়ার চাপ কমাতে শট খেলতে হল মিচেল মার্শকে, ক্রিজ ছেড়ে বেড়িয়ে এসে তুলে মেরেছিলেন। লং-অফ থেকে ছুটে এসে ভালো ক্যাচ নিয়েছেন মোহাম্মদ নাঈম। ৫১ রানে ফিরলেন মার্শ। নিশ্চিতভাবেই ম্যাচে এখন এগিয়ে বাংলাদেশ। তিনি প্রথম দুই দিনেও বাংলাদেশকে ভুগিয়েছিলেন।
এই ম্যাচে বেন ম্যাকডার্মটকে সঙ্গে নিয়ে খেলতে থাকেন সাবলীল খেলা। সাকিব এবং শরীফুল পর পর দুই উইকেট নিয়ে চাপে ফেলে দেয় অস্ট্রেলিয়াকে। ম্যাকডারমটকে সাজঘরে পাঠিয়ে বাংলাদেশকে লড়াইয়ে ফেরালেন সাকিব। একইসঙ্গে শরীফুলকেও যেন মুক্তি দিলেন সাকিব। নিজের শেষ ওভার করতে এসে ব্রেক থ্রু দিলেন তিনি বেন ম্যাকডারমটকে ফিরিয়ে। ফুললেংথের বলে স্লগ করতে গিয়েছিলেন, তবে আন্ডার-এজড হয়ে বোল্ড হয়েছেন। ৩২ রানে জীবন পাওয়া ম্যাকডারমট ফিরলেন ৩৫ রান করে, মিচেল মার্শের সঙ্গে তাঁর ৬৩ রানের জুটিও ভাঙে। পরের ওভারে ময়জেস হেনরিকেসকে ফেরান শরীফুল।
ব্যাটিং অর্ডার ওপরে উঠে এসেও কিছু করতে পারেননি ম্যাথু ওয়েড। শুরুতেই ফেরেন নাসুমের ঘূর্ণিতে। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের তৃতীয় বলে অজি অধিনায়ক ম্যাথু ওয়েডকে সাজঘরে পাঠান তিনি। ওয়েড নাসুমের মিডল ও লেগ স্ট্যাম্পের মাঝে ফেলা বল ফাইন লেগে খেলেছিলেন; ব্যাটে-বলে ঠিক মতো হয়নি; বৃত্তের মধ্যেই ধরা পড়েন শরিফুলের হাতে। ৫ বলে মাত্র ১ রান আসে ওয়েডের ব্যাট থেকে।
টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতে দুই ওপেনারকে হারাতে হয় বাংলাদেশকে। কিছুটা চাপে পড়ে বাংলাদেশ। সেখান থেকে সাকিব ও মাহমুদুল্লাহ এগিয়ে নিয়ে যায়। মাহমুদুল্লাহ থাকলেও পরপর উইকেটের পতন ঘটে। হাল ধরেন অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ। কঠিন সময়ে অর্ধশতক করেন তিনি। অর্ধশতকের পর ফিরতে হয়েছে তাকে। বাংলাদেশ নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে সংগ্রহ করে ১২৭ রান। অস্ট্রেলিয়াকে ১২৮ রানের লক্ষ্য দিল বাংলাদেশ।
শেষ ওভারে হ্যাটট্রিক করেন অস্ট্রেলিয়ার অভিষিক্ত বোলার নাথান এলিস। ফিফটির এলিসের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন মাহমুদউল্লাহ। পরের বলে মোস্তাফিজকে ফেরান তিনি। শেষ বলে মেহেদীকে ফিরিয়ে ক্যারিয়ারের প্রথম ম্যাচেই হ্যাটট্রিক গড়েন এই পেসার।
মিরপুর শেরে বাংলায় সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই অসি বোলারদের তোপের মুখে টাইগাররা। প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে দলীয় মাত্র ৩ রানে সাজঘরে ফিরেছেন ওপেনার নাঈম। ওভার দ্য উইকেট থেকে করা জশ হ্যাজলউডের ব্যাক অফ আ লেংথ ডেলিভারিতে ডিফেন্ড করতে গিয়ে কট-বিহাইন্ড হয়েছেন মোহাম্মদ নাঈম। প্রায় স্কয়ারড-আপ হয়ে পড়েছিলেন এ ডানহাতি। দ্বিতীয় ওভারে প্রথম উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ, স্কোরবোর্ডে ৩ রান।
তৃতীয় ওভারে অ্যাডাম জাম্পাকে এনেছেন ওয়েড, প্রথম বলেই সফল হলেন তিনি। ফুললেংথের বলটা সুইপ করতে গিয়ে মিস করে গেছেন সৌম্য সরকার, আম্পায়ার শরফউদ্দৌলা বেশ কিছুক্ষণ সময় নিয়ে দিয়েছেন এলবিডব্লু। সৌম্য অবশ্য রিভিউ করেছিলেন, তবে উইকেটে ছিল আম্পায়ারস কল। ৪৭ রানে তৃতীয় উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। জাম্পাকে তুলে মারতে গিয়ে লং অফে ধরা পড়েছেন সাকিব আল হাসান। ১৭ বলে ২৬ রান করে। এরপর ফেরেন আফিফ।
আগের ম্যাচে যেখানে শেষ করেছিলেন, আফিফ এদিন শুরু করলেন সেখান থেকেই। তবে দারুণ ফিল্ডিংয়ে ফিরতে হলো তাঁকে। মিড-অফে ঠেলে সিঙ্গেল নিতে গিয়েছিলেন আফিফ। ডাইভ দিয়ে ধরে ওঠার আগেই ছুঁড়ে মেরেছেন অ্যালেক্স ক্যারি, যে থ্রো-তে সরাসরি ভেঙেছে স্টাম্প। ১২তম ওভারের শেষ বলে ৪র্থ উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। ঠিক আগের বলেই মাহমুদউল্লাহর বিপক্ষে একটি রিভিউ নিলেও সফল হয়নি অস্ট্রেলিয়া। ক্রিস্টিয়ানের লেগ কাটার মিস করেছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। আম্পায়ার গাজী সোহেল দিয়েছিলেন নট-আউটের সিদ্ধান্ত। বল-ট্র্যাকিং দেখিয়েছে, ইমপ্যাক্ট ও উইকেটে ছিল আম্পায়ারস কল।
চাপ বাড়ছিল শামীমের ওপর। হ্যাজলউডের শর্ট বলে তুলে মারতে গিয়ে টাইমিং-ও করতে পারলেন না। মিডউইকেটে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন তিনি, ৮ বলে ৩ রান করে। মিডউইকেটে পেছন দিকে ছুটে বেশ ভালো ক্যাচ নিয়েছেন বেন ম্যাকডারমট।
রান আউট হয়ে ড্রেসিংরুমে ফিরেছেন সোহান। কাভারে ঠেলে সিঙ্গলে কল করেছিলেন মাহমুদউল্লাহ, তবে শুরুতে সে ডাকে সাড়া দেবেন কিনা- তা নিয়ে যেন নিশ্চিত ছিলেন না নুরুল। এরপর দৌড় শুরু করেছেন, তবে এর আগেই ময়েজেস হেনরিকেসের থ্রো সরাসরি ভেঙেছে স্ট্রাইক-প্রান্তের স্টাম্প।
এর আগে অ্যাডাম জাম্পাকে দারুণ এক শটে ছয় মেরেছিলেন নুরুল, তবে অসময়ে ফিরতে হল তাঁকেও। ৫ বলে ১১ রান করেছেন তিনি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর-
বাংলাদেশ- ১২৭/১০ (২০ ওভার) (সাকিব ২৬, মাহমুদউল্লাহ ৫২, আফিফ ১৯, শামীম ৩, সোহান ১১, মেহেদী ৬; এলিস ৩/৩৪, জাম্পা ২/২৪, হ্যাজেলউড ২/১৬)
অস্ট্রেলিয়া- ১১৭/৪ (২০ ওভার) (ম্যাকডারমট ৩৫, মার্শ ৫১, শরিফুল ২/২৯, সাকিব ১/২২)