বাংলাদেশের আমন্ত্রণে ব্যাটিংয়ে নেমে পাকিস্তান ৫ উইকেটে ১৬৭ রান সংগ্রহ করেছে। ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম ম্যাচ জিততে বাংলাদেশকে ১৬৮ রান করতে হবে।
বাবর আজম আর মোহাম্মদ রিজওয়ানের জুটি দাঁড়াতে না পারলেও রিজওয়ান একাই যথেষ্ট হয়ে গেলেন পাকিস্তানের জন্য। তার ব্যাটে চড়েই বাংলাদেশের সামনে ১৬৭ রান সংগ্রহ করে পাকিস্তান।
ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালে টস জিতে পাকিস্তানকে ব্যাট করতে পাঠান বাংলাদেশ দলের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান। ব্যাট করতে নেমে শুরুতে দেখে শুনেই ব্যাট করতে থাকেন বাবর আজম এবং মোহাম্মদ রিজওয়ান। উদ্বোধনী জুটিতে ৫২ রান তোলার পর মিরাজের বলে বিচ্ছিন্ন হয় এই জুটি।
এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পড়লেও শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে যান মোহাম্মদ রিজওয়ান। ৫০ বল মোকাবেলা করে ৭৮ রান করেছেন পাকিস্তানের উইকেটরক্ষক ব্যাটার। ৭টি বাউন্ডারির সঙ্গে ২টি ছক্কার মার মারেন তিনি। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৬৭ রান সংগ্রহ করে পাকিস্তান।
টস জিতে ফিল্ডিং করতে নামার পর প্রথম ওভারে তাসকিন আহমেদ দিয়েছিলেন কেবল ১ রান। তখন সবাই মনে করছিল, বুঝি পাকিস্তানকে চেপে ধরা যাবে।
কিন্তু সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে হাত খুলতে থাকে বাবর-রিজওয়ানের। পরের ওভারেই মোস্তাফিজের কাছ থেকে নিলেন দুটি বাউন্ডারিসহ ১০ রান। পরের ওভারেও হাসান মাহমুদের বলে দুটি বাউন্ডারি মারলেন বাবর আজম।
নাসুম আহমেদকে বোলিংয়ে আনার পর প্রথম ছক্কা হাঁকিয়ে বসেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। এভাবেই ধীরে ধীরে রানের চাকার গতি বাড়তে থাকে পাকিস্তানের। শেষ পর্যন্ত। ৮ম ওভারের প্রথম বলে এসে সাফল্যের দেখা পান অধিনায়ক সোহান। ২৫ বলে ২২ রান করা বাবর আজসমকে ফেরালেন মিরাজ।
প্রতিপক্ষকে চেপে ধরতে হলে শুরুতেই একটি ব্রেক থ্রু দরকার। আর প্রতিপক্ষের ওপেনিং জুটিটা যদি হয় খুবই ভয়ঙ্কর, তখন তো সেটা ভাঙা অনেকটা ফরজ হয়ে দাঁড়ায়। বাবর আজম আর মোহাম্মদ রিজওয়ানের জুটি ধীরে ধীরে কিংবদন্তি পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। এই জুটি দাঁড়িয়ে যাওয়া মানে প্রতিপক্ষের নিশ্চিত পরাজয়।
কিন্তু ক্রাইস্টচার্চে ত্রিদেশীয় সিরিজের উদ্বোধনী ম্যাচে সেই কাঙ্খিত জুটি ভাঙার কাজটিই করতে পারছিল না বাংলাদেশের বোলাররা। বারবার বোলার পরিবর্তন করেও সাফল্যের দেখা পাচ্ছিলেন না অধিনায়ক নুরুর হাসান সোহান। তাসকিন, মোস্তাফিজ, হাসান মাহমুদ কিংবা নাসুম আহমেদ- দুই প্রান্ত থেকে চারজনকে দিয়ে বোলিং করিয়েও বাবর-রিজওয়ান জুটিতে ছিড় ধরাতে পারছিল না টাইগাররা।
অবশেষে অষ্টম ওভারে মেহেদী হাসান মিরাজকে বোলিংয়ে এনে সাফল্যের দেখা পেলো টাইগাররা। নিজের প্রথম বলেই পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজমকে ফিরিয়ে দিলেন মিরাজ। তার বলকে সুইপ করতে গিয়েছিলেন বাবর। কিন্তু বল ব্যাটের উপরের কানায় লেগে উপরে উঠে যায়। শর্ট ফাইন লেগে তার ক্যাচটি ধরেন মোস্তাফিজুর রহমান।
মোহাম্মদ রিজওয়ানকে নিয়ে ৪২ রানের জুটি গড়ে ফেলেন শান মাসুদ। ব্যাট হাতে ধীরে ধীরে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছিলেন তিনি। কিন্তু নাসুম আহমেদের বলে ক্যাচ তুলে দেন মাসুদ। খেলতে চেয়েছিলেন লং অনে। কিন্তু বল ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় অফ সাইডে। পয়েন্টে দাঁড়ানো হাসান মাহমুদের নাগালের কাছাকাছি। যদিও বলটি ধরা ছিল তার জন্য কিছুটা দুরহ।
কিন্তু বাম পাশে ঝাঁপিয়ে পড়ে বলটা তালুবন্দী করার চেষ্টা করেন হাসান মাহমুদ। প্রথমে হাত ফসকে যায় বল। কিন্তু মাটিতে পড়ার আগে আরও একবার সেটাকে তালুবন্দী করে নিলেন বাংলাদেশ দলের এই ফিল্ডার। যার ফলে ৯৪ রানের মাথায় পাকিস্তানের দ্বিতীয় উইকেটের পতন ঘটানো সম্ভব হলো।
বাবর আজম আউট হওয়ার পর মোহাম্মদ রিজওয়ানের সঙ্গে জুটি বেধে ধীরে ধীরে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছিলেন শান মাসুদ। ২২ বলে ৩১ রান করে ফেলেন তিনি। ৪টি বাউন্ডারি এবং ১টি ছক্কার মার মারেন মাসুদ। তাকে এ সময় ফেরানোটা ছিল জরুরি। নাসুম আহমেদের বলে হাসান মাহমুদের দুর্দান্ত ক্যাচে পরিণত হয়ে সাজঘরে ফিরে যান শান মাসুদ।
হায়দার আলি ব্যাট করতে নেমে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ৬ বলে ৬ রান করেন মাত্র। তাসকিনের বলে ইয়াসির রাব্বির হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান তিনি। ইফতিখার আহমেদ এসে জুটি বাধেন রিজওয়ানের সঙ্গে। ১৮তম ওভারের দ্বিতীয় বলে হাসান মাহমুদের বলে আফিফ হোসেন ধ্রুবর হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান ইফতিখার। ৮ বলে তিনি করেন ১৩ রান।
মারকুটে ব্যাটার আসিফ আলিকে বেশি সুযোগ দেননি তাসকিন। নিজের বলেই নিজে ক্যাচ ধরলেন তিনি। আসিফ আউট হলেন মাত্র ৪ রান করে। মোহাম্মদ নওয়াজ অপরাজিত থাকলেন ৮ রান করে।
বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে কেবল তাসকিনই পেলেন ২ উইকেট। মিরাজ, হাসান মাহমুদ এবং নাসুম আজমেদ পেলেন ১টি করে উইকেট। সবচেয়ে খরুচে বোলার ছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। ৪ ওভারে ৪৮ রান দিয়ে একটি উইকেটও পেলেন না তিনি।