বহুকাল পর গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সোমবার গিয়েছিলাম খুলনা সরকারী বিভাগীয় গ্রন্থাগার প্রাঙ্গণে চলমান একুশের বইমেলায়। ভর দুপুরবেলা। তা প্রায় দেড়টার দিকে হবে। সঙ্গে ছিল রূপসা নন্দিনীর বর্তমান কোষাধ্যক্ষ জেসমিন আরা, জেসমিনের মেয়ে অধুনা আর সৈয়দ আলী হাকিম ভাই। যাওয়ার পথে শিল্পকলা একাডেমী হয়ে গিয়েছি। বহুকাল ওখানেও যাওয়া হয় না। অথচ একসময় সেই সত্তর দশকে হোয়াইট হাউজ, বাংলাদেশ পরিষদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, উমেশচন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরী, লেখিকা সংঘ, কবিতালাপ, সাহিত্য মজলিস, সাহিত্য পরিষদসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক বলয়ে চষে বেড়াতাম। সেসব এখন স্মৃতির ঝরা পাতা।
বয়রাস্থ বইমেলাটি মধ্যাহ্নের অলস দুপুরে মূূহ্যমান। আমিও চেয়েছিলাম একটু নিরিবিলিতে ঘুরে আসবো। যদি আমাদের সময়ের কোন বুক স্টল পাই, তবে আমার সদ্য প্রকাশিত “অন্য সুর অন্য ভুবন” কাব্যগ্রন্থটি একটু রেখে আসবো। খুব যে বিক্রির প্রত্যাশায় তা নয়। একুশের বইমেলায় বুক স্টলে আমার বই রয়েছে, সেই অনুভবে অনুরণিত হতে। আমাদের নন্দিনীর ঢাকাস্থ বইমেলার বুক স্টলেও সেই মর্মেই বই দিয়েছি।
যাই হোক, বইমেলায় নতুন প্রজন্মের আনাগোনা, নতুন উচ্ছ্বাস, প্রাণবন্ত সেলফি তোলা, বই নেড়েচেড়ে দেখা, ভালো লাগলো। তখনো মেলায় দোকানগুলো খোলেনি। শুনলাম, তিনটার পর খুলবে। তখন বোধহয় আড়াইটার মত হবে বইমেলার এক কোণায় খুঁজে পেলাম মনোজ দাদার স্টল। আলফা বুক স্টল। খুলনা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত জাতিসংঘ পার্কে যখন ২০০৮, ২০১০ ও ২০১১তে নন্দিনীদের উদ্যোগে বেশ কিছু সাহিত্য সংগঠকদের সম্মিলিত সহযোগিতায় ১৫ দিন ব্যাপী ৪৫টি স্টল নিয়ে অত্যন্ত আড়ম্বরপূর্ণ ও স্মরণযোগ্য বইমেলা হয়েছিল। সেইখানে মনোজ দাদার সঙ্গে জয় প্রকাশনীর স্টলে আলাপ হয়েছিল। অত্যন্ত সংস্কৃতিমনা ও আবেগপ্রবণ মানুষ। ওখানেই ক্লান্ত হয়ে কিছুক্ষণ বসে ছিলাম। হারানো বহু স্মৃতির আলাপনে আমরা অন্য এক জগতে হারিয়ে গিয়েছিলাম। দাদা চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। সেই সময়কার বইমেলা বাণিজ্য মেলার মতো ছিল না। একটি মূল্যবোধ ও রুচির প্রাবল্যে আমাদের সেই প্রাণোচ্ছল বইমেলাগুলো আজও অম্লান হয়ে আছে।
মাজেদা আলী, মাজেদা হক, মুর্শিদা আক্তার রনি, অধ্যাপক আমিন মোঃ মনজুর মোরশেদ, অধ্যাঃ শেখ দিদারুল আলম, অধ্যাঃ সেলিনা বুলবুল, সিষ্টার মেরি, স ম বাবর আলী, ইঞ্জিনিয়ার রফিকুল আলম, স,ম হাফিজুল ইসলাম, রুহুল আমিন ভাই, জামাল উদ্দিন ভাই, সিরাজুল ইসলাম, নজরুল দুলাভাইসহ বহু মানুষের কথা সিনেমার মতো যেন চোখের সামনে ভেসে উঠলো। অনেক দিন থেকে আমার কাছে প্রস্তাব আসে, “আপা, খুলনায় আপনারা আর বইমেলা করবেন না? উত্তর দিতে ভরসা পাই না।
সেই উদ্দীপনা, শারীরিক সক্ষমতা, শৃঙ্খলা, দেশের স্থিতিশীলতা, সর্বোপরি সাংস্কৃতিক মনস্কতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ এখন এতটাই দৈন্যতায় আচ্ছন্ন যে বড় ভয় পাই। কার হাত ধরি, কোথায় গিয়ে কি ভুল করি। এখন কি মানুষ মানুষকে ক্ষমা করে? মনে তো হয় না। তারপরেও আশা রাখি সময়ের উপর। ভরসা করি মহান আল্লাহ পাকের কাছে। সুদিন আসুক। আবারো সুন্দরের পথে আমরা হাঁটি।
খুলনা গেজেট/এনএম