প্রায় অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় পর ফের চালু হচ্ছে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জের বসন্তপুর নৌ বন্দর। বাণিজ্যিক গুরুত্ব বিবেচনায় এই বন্দর চালুর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে গেজেট। নতুন অর্থনৈতিক কেন্দ্র গড়ে উঠার পাশাপাশি প্রসার ঘটবে নৌ-পথে আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যের। সেই সাথে অল্প সময়ের মধ্যে ভারতে যেতে পারবে দেশের দক্ষিণ পশ্চিাঞ্চলের মানুষ। ফলে বসন্তপুর নৌ বন্দর খুলে দিতে পারে সাতক্ষীরার অর্থনৈতিক সম্ভাবনার নতুন দুয়ার।
রাজা প্রতাপাদিত্যের ইতিহাস সমৃদ্ধ বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তবর্তী জেলা সাতক্ষীরা। জেলার কাকশিয়ালি-ইছামতি ও সীমান্তের কালিন্দী নদীর মহেনা ঘিরে জেলার কালিগঞ্জের বসন্তপুরে গড়ে উঠেছে নৌ বন্দর। ব্রিটিশ শাসনামলে এখানে নোঙ্গর করে ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানীর নৌবহরও। দেশ ভাগের পর এখানে আর্ন্তজাতিক নৌ বন্দরও চালু করা হয়। সেময় এখানে নিয়মিত চলতো আমদানি রপ্তানি। ছিল ইমিগ্রেশন কার্যক্রমও। প্রাচীনকালে এটিই ছিল দেশের একমাত্র আর্ন্তজাতিক নৌ-বন্দর। কোলকাতা ও হলদিয়া বন্দরের খুব নিকটে সাতক্ষীরার বসন্তপুর নৌ বন্দর অবস্থিত। তবে ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের পর নৌ-বন্দরটি বন্ধ হয়ে যায়। তবে এখানে স্মৃতি চিহৃ হিসাবে এখনো রয়েছে বন্দরের কাস্টমস অফিস, জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে আছে তৎকালিন ইমিগ্রেশন অফিস, স্টাফ কোর্য়টারসহ রযেছে বিভিন্ন জরাজীর্ণ ভবন।
সম্প্রতি ভারত ও বাংলাদেশের সাথে বানিজ্যিক গুরুত্ব বিবেচনায় নৌবন্দরটি আবারো চালু করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে বিআইডব্লিউটি ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে প্রকাশ করা হয়েছে গেজেট। বন্দরের জমি উদ্ধার করে দেয়া হয়েছে কাটাতারের বেড়া। খুব শীঘ্রেই শুরু হবে অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ।
নৌবন্দরটি চালু হলে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বাড়বে আমদানি রপ্তানি কার্যক্রম। কমবে পরিবহন ব্যয়। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে এই এলাকার হাজারো মানুষের। এছাড়া ভারত থেকে আসা পণ্যবাহী জাহাজকে আর ব্যবহার করতে হবে না সুন্দরবনের নদী।
সার্বিক বিবেচনায় বসন্তপুর নদীবন্দর দ্রুত চালুর প্রত্যাশায় একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির আন্তরিক প্রচেষ্টায় বসন্তপুর নদীবন্দর চালুর বিষয়টি অনেক অগ্রগতি হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালের ১৩ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি বসন্তপুর নদীবন্দরের কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
বসন্তপুর নৌ বন্দর চালু করা সম্পর্কে কালিগঞ্জের মথুরেশপুর ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাকিম জানান, স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়ে ১৯৬০ এর দশকেও বসন্তপুর নৌবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি রপ্তানি হতো। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে যুদ্ধের কারণে বন্দরটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রারম্ভে ওই এলাকা দিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর পুত্র শেখ কামাল হোসেন ও শেখ জামাল হোসেন ভারতে গিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর পরিবারের স্মৃতি বিজড়িত এ স্থানে আবারও নৌবন্দরটি চালু হলে আমদানি রপ্তানিতে অনেক সুবিধা হবে। মানুষের কর্ম সংস্থান সৃষ্টি হবে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ সবদিক দিয়ে সুফল বয়ে আনবে। নদীপথে পণ্য আনা নেয়ার খরচ তুলনামূলক কম হয় উল্লেখ করে।
জেলা প্রশাসাক মোহম্মাদ হুমায়ুন কবির বলেন, বসন্তপুর নৌ-বন্দর পুনরায় চারু করার লক্ষ্যে বিআইডব্লিউ ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে ইতিমধ্যে গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। এখন অবকাঠামোগত কিচু সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে বন্দরটি চারু করা যাবে। এবিষয়ে সরকারিভাবে কাজ চলছে। আমরা প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখছি। আশা করছি খুব শিঘ্রই বন্দরটি চালু করা যাবে।
সাতক্ষীরা জেলার সাথে ভারতের স্থল ও নৌপথে ২৭১ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। এর মধ্যে ভোমরা বন্দর দিয়ে ভারতের সাথে আমদারি রপ্তানি কার্যক্রম চালু আছে। একই সাথে বসন্তপুর নৌ-বন্দর সংযুক্ত হলে দেশের দক্ষিণ পশ্চিাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা ও ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সূচনা হবে এক নতুন অধ্যায়ের।
এদিকে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী আজ বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) বিকালে বসন্তপুর নদীবন্দর পরিদর্শনে যাবেন। প্রতিমন্ত্রীর আগমন বসন্তপুর নদীবন্দর দ্রুত চালুর ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদী সাতক্ষীরাবাসি।
খুলনা গেজেট/এনএম