খুলনা, বাংলাদেশ | ১৫ কার্তিক, ১৪৩১ | ৩১ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  দেশে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৪ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১১৫৪
  দ্রুতই সিটি করপোরেশন, জেলা-উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভায় স্থায়ীভাবে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হবে : স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা

বর্জন, হুমকিতে কাজ হচ্ছে না, আ’লীগ প্রার্থীদের পক্ষে মাঠে বিএনপি নেতারা

নিজস্ব প্রতিবেদক

খুলনা সিটি নির্বাচনে দলের কেউ নির্বাচনে অংশ নিলে, এমনকি ভোট দিতে গেলেও বহিষ্কারের হুমকি দিয়ে রেখেছেন খুলনা মহানগর বিএনপি নেতারা। কয়েকজনকে শোকজও করা হয়েছে। কিন্তু নেতাদের গর্জন পাত্তা পাচ্ছে না ভোটের মাঠে। মেয়র প্রার্থীদের পাশে দেখা না গেলেও অধিকাংশ ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থীদের পক্ষে স্থানীয় বিএনপি নেতারা অনেকটা প্রকাশ্যেই কাজ করছেন। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বিব্রত খুলনার বিএনপি নেতারা।

জানা গেছে, নগরীর খালিশপুর ও দৌলতপুর থানা এলাকার ওয়ার্ডগুলোতে বিএনপি নেতাদের তৎপরতা সবচেয়ে বেশি। ৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক লিয়াকত হোসেন লাভলু, ১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম মামুন, যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ আরমান, মহানগর বিএনপির সদস্য রুবায়েত হোসেন বাবু অনেকটা প্রকাশ্যেই ওই এলাকার কাউন্সিলর প্রার্থী স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা গোলাম রব্বানী টিপুর পক্ষে কাজ করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে লিয়াকত হোসেন লাভলুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, টিপু আমার বাড়ির পাশের ছেলে। আমাদের হাতে মানুষ হয়েছে। এ জন্য আমার কাছে আসে। তবে আমরা নির্বাচনে নেই, ভোট দিতেও যাব না।

বহিষ্কৃত হয়েও ৫ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচন করছেন মহানগর বিএনপির সদস্য সাজ্জাদ আহসান তোতন। তিনি অভিযোগ করেন, তাঁকে হারাতে বিএনপি নেতারা আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। আবার তোতনের পক্ষে থানা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক জাহিদ হাসান খসরু ঠিকই কাজ করছেন বলে অভিযোগ আছে। স্থানীয় অনেকে জানিয়েছেন, ওই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ মোহাম্মদ আলীর পক্ষে থানা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আল আমিন লিটন, নগর যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক এস এম জসিম, ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শামীম আহমেদ মিলু ও খবির উদ্দিন কাজ করছেন। তবে আল আমিন লিটন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমাদের দল ভোট বর্জন করেছে। নির্বাচনে কারও পক্ষে কাজ করার প্রশ্নই আসে না। অভিযুক্ত অন্যরাও একই কথা বলেন।

একই ওয়ার্ডে আরেক কাউন্সিলর প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা ফিরোজ আলমের পক্ষে প্রকাশ্যে নির্বাচনী তৎপরতা চালাচ্ছেন মহানগর জাসাসের আহ্বায়ক নুরুল ইসলাম বাচ্চু। বাচ্চু বলেন, ফিরোজ আমার ছোটবেলার বন্ধু। বাড়িতে এলে সৌজন্যের জন্য কথা বলি, এর বেশি কিছু না। আমরা ভোটকেন্দ্রে যাব না।

৬ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মির্জা তরফদারের পক্ষে সক্রিয় রয়েছেন ওয়ার্ড বিএনপির দুই যুগ্ম আহ্বায়ক। ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য জাকির হোসেন, সাবেক সমবায়বিষয়ক সম্পাদক শহীদ শেখ বাবু, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজু কাজ করছেন সদ্য যুবলীগে যোগ দেওয়া কাউন্সিলর প্রার্থী সুলতান মাহমুদ পিন্টুর পক্ষে। ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাউন্সিলর প্রার্থী ফয়েজুল ইসলাম টিটোর নির্বাচনী সভায় দেখা গেছে ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নাসির উদ্দিনকে। এ বিষয়ে নাসির দাবি করেন, সৌজন্যের খাতিরে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নির্বাচনী কেন্দ্রে গিয়ে বসেছিলেন। কারও পক্ষে ভোট চাননি।

থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের বিএনপি নেতারা বলছেন, মোটা দাগে তিন কারণে বিএনপি নেতারা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থীদের পক্ষে মাঠে নেমেছেন। প্রধানত, নির্বাচনের আগে বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচি এলেই প্রতিটি থানা এলাকায় পুলিশের ধরপাকড় শুরু হয়। গ্রেপ্তার ও হয়রানি থেকে বাঁচতে কিছু নেতা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রশ্রয়ে থাকতেন। সেই কৃতজ্ঞতা এবং ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে তাঁরা আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন।

দ্বিতীয়ত, কিছু ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ নেতাদের দ্বারা নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। নির্বাচনে ওই আওয়ামী লীগ নেতা প্রার্থী হয়েছেন। তিনি জিতে গেলে নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়বে– এমন আশঙ্কা থেকে তাঁর প্রতিপক্ষ আরেক আওয়ামী লীগ নেতার হয়ে অনেকে কাজ করছেন। তৃতীয়ত, স্থানীয় রাজনীতির কারণে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা বিএনপি নেতাদের আত্মীয়। এলাকার বাসিন্দা, প্রতিবেশীসহ নানা কারণে অনেকে আওয়ামী লীগ নেতাদের হয়ে কাজ করছেন।

৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির এক নেতা  বলেন, এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর একসময় বিএনপি করতেন। নির্বাচনে জিততে পরে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন। এর পর নানাভাবে বিএনপি নেতাকর্মীকে হয়রানি করেছেন। গত বছর ২২ অক্টোবর নিজে দাঁড়িয়ে থেকে বিএনপির সমাবেশে হামলা করেছেন। সে জন্য তাঁকে এবারের নির্বাচনে হারাতে বিএনপির অনেকে প্রকাশ্যে বা গোপনে তাঁর প্রতিপক্ষের হয়ে সক্রিয় রয়েছে। এতে আমাদের মৌন সমর্থন রয়েছে।

১৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মহানগর বিএনপির আরেক নেতা বলেন, এ ওয়ার্ডে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সম্পাদক কাউন্সিলর পদে দাঁড়িয়েছেন। তিনি জিতে গেলে আমরা কেউ এলাকায় থাকতে পারব না। এ জন্য আমি নিজেও আরেক প্রার্থীর পক্ষে ফোনে ভোট চাইছি। সবাই কমবেশি তাঁর জন্য কাজ করছে। তবে আমি বা দলের পদধারী নেতাদের কেউ ভোটকেন্দ্রে যাব না।

নগরীর ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও দৌলতপুর থানা বিএনপির সদস্য সচিব ইমাম হোসেন বলেন, ভোটের তপশিল ঘোষণার পর প্রথম দিকে বিএনপির অনেকে ভোটের জন্য কাজ করছিল। কিন্তু কেন্দ্র থেকে সতর্ক করার পর এ প্রবণতা কিছুটা কমেছে।

খুলনা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন বলেন, দলের নিষেধ অমান্য করে নির্বাচনে ভূমিকা রাখায় এরই মধ্যে ১১ জনকে শোকজ করা হয়েছে। আমরা প্রতিটি ওয়ার্ডে কথা বলছি। গত কয়েক দিনে এটা অনেক কমে এসেছে।

খুলনা গেজেট/এসজেড




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!