বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচিতে দুই দফায় বেধড়ক লাঠিপেটা করেছে পুলিশ। পুলিশের হামলায় চার সাংবাদিকসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। এ সময়ে বাম সংগঠনের নেতাসহ অন্তত ২০ জনকে আটক করেছে পুলিশ। আহত সাংবাদিকরা শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
বুধবার (৩১ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে প্রথমে নগরীর রোডের অশ্বিনীকুমার হলের সামনে ও পরে সাড়ে দুপুর ১২টার দিকে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সামনে ফজলুল হক এভিনিউতে লাঠিচার্জ করে পুলিশ।
আহত শিক্ষার্থী সেতু জানান, আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ হত্যার প্রতিবাদে আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে কয়েকশ পুলিশ, বিজিবি একসঙ্গে লাঠিপেটা শুরু করে। আমরা বলেছি আমরা সড়কের পাশে কর্মসূচি পালন করব। আমাদের কর্মসূচিতে কোনো সহিংসতা নেই। কিন্তু পুলিশ আমাদের ওপর সহিংসভাবে লাঠিপেটা শুরু করে। কমপক্ষে ২৫ জনকে মারধর করেছে পুলিশ।
আটক শিক্ষার্থী সাইমুন পুলিশ ভ্যানে থাকা অবস্থায় বলেন, রাষ্ট্র আমাদের সাথে অন্যায় করছে। আমরা কোনো দোষ করিনি। আমরা অধিকারের কথা বলতে এসেছি। আমরা হত্যার বিচার চাইতে এসেছি। পুলিশ বাদবিচার ছাড়া স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের মারধর করেছে। আমাকে আটক করে নিয়ে যাচ্ছে।
গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের বিএম কলেজ শাখার সমন্বয়ক হুজাইফা রহমান বলেন, একেবারে বিনা কারণে পুলিশ আমাদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে। সরকার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে। মানুষের কথা বলার অধিকার কেড়ে নিয়েছে। আমরা আজকে মার্চ ফর জাস্টিস কর্মসূচিতে বিচার দাবি করতে এসেছি। আমাকেসহ আরও অনেককে বেধড়ক পিটিয়ে আটক করে নিয়ে যাচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা ১১টার পর কাঠপট্টি সড়কের মুখে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একটি অংশ মিছিল করার চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সেসময় বেশ কয়েকজন অভিভাবকও ছিলেন। পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের বাদানুবাদের একপর্যায়ে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে পুলিশ টানাহেঁচড়া করে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি শুরু হয়। একপর্যায়ে পুলিশ সিটি কলেজের গলির মুখে শিক্ষার্থীদের আটকে রাখে। পরে কয়েকশ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী এক জোট হয়ে সদর রোডে অবস্থান করলে পুলিশ শুরুতে তাদের ধাওয়া দেয় পরে আচমকা লাঠিচার্জ শুরু করে। এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকদের ওপরেও লাঠিচার্জ করে পুলিশ।
লাঠিচার্জে দৈনিক যুগান্তরের ফটো সংবাদিক শামীম আহমেদ, যমুনা টেলিভিশনের ক্যামেরাপার্সন হৃদয় চন্দ্র শীল, এনটিভির ক্যামেরাপার্সন গোবিন্দ সাহা ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল বার্তা টোয়েন্টিফোরের তুহিন খান আহত হন। লাঠিচার্জের প্রতিবাদে সাংবাদিকরাও সদর রোডে কিছু সময় অবস্থান করেন। পরে আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এরপর দুপুর ১২টার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বরিশাল আদালতের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় পুলিশ দ্বিতীয় দফায় লাঠিচার্জ করে।
আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল জেলা শাখার সমন্বয়ক ডা. মনীষা চক্রবর্তী বলেন, শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করছিল। হঠাৎ পুলিশ এসে শিক্ষার্থীদের বেধড়ক লাঠিচার্জ করেছে। নারী, স্কুল কলেজের ছাত্রীদেরও বেধড়ক পিটিয়েছে পুলিশ। পুলিশ ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে। গণআন্দোলন দমাতে মানুষের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে।
কোতয়ালি মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিচুল হক বলেন, আটক-টাটক কোনো ব্যাপার না। কিছু লোক জড়ো হয়েছিল। আমরা কয়েকজনকে সেখান থেকে নিয়ে এসেছি। পরবর্তীতে বিস্তারিত জানানো হবে।
আহত সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনার তানভীর আরাফাত নিজে লাঠিচার্জে ছিলেন। শুধু সাংবাদিক না যাকে যেখানে পেয়েছে পুলিশ পিটিয়েছে।
এ বিষয়ে উপ-কমিশনার তানভীর আরাফাত বলেন, সাংবাদিকদের চিনে পুলিশ লাঠিচার্জ করেনি। ভুলবশত লাঠিচার্জ পড়েছে। এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করা ছাড়া করার কিছু নেই।
খুলনা গেজেট/এএজে