খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ৪ দিনের সরকারি সফরে ঢাকায় পৌঁছেছেন বাইডেনের বিশেষ প্রতিনিধি দল
  পাকিস্তানে যাত্রীবাহী গাড়িতে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ৪৫

বরিশালে এরশাদ বিরোধী আন্দোলন ও রাজনৈতিক ধরপাকড়ের কিছু স্মৃতি

এ এম কামরুল ইসলাম

বরিশাল শহর এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে ভীষণ গরম হয়ে উঠলো। এরশাদ সরকারের চারজন প্রভাবশালী মন্ত্রী দিনরাত বরিশালে অবস্থান করে আন্দোলনকারীদের আটক করার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিতে লাগলেন। পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন রীতিমতো হিমশিম খেতে লাগলো। প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন মন্ত্রী বরিশাল সার্কিট হাউজে উপস্থিত থাকতেন। তাঁদের উপস্থিতিতে চারদিকে দফায় দফায় ককটেল ফুটতো এবং শত পুলিশি ব্যবস্থা নেওয়ার পরও চোরাগোপ্তা হামলা ও ফাঁকে ফাঁকে মিছিল বের হতো। তখন মোবাইল ফোনের যুগ না হলেও পুলিশ খবর পাওয়ার আগেই মন্ত্রীর কাছে ফোন আসতো। তখন পুলিশের উপর অধিক মাত্রায় চাপ শুরু হতো। আমরা পাগলের মতো দিনরাত পরিশ্রম করেও ককটেল ফুটানো বন্ধ করতে পারতাম না।

 

উর্ধতন কর্মকর্তাগণ মন্ত্রীর আদেশ পালন করতে গিয়ে আমাদের উপর সকল ধরনের চাপ সৃষ্টি করতেন।

তখন রাজনৈতিক নেতারা গ্রেপ্তার হলেই কমপক্ষে এক মাসের ডিটেনশন দেওয়া হতো। তাই সকল নেতাই পালিয়ে থেকে আন্দোলন করতেন। পুলিশ শত চেষ্টা করেও নেতাদের ধরতে পারতো না। এক পর্যায়ে উর্ধতন অফিসাররা ইশারা ঈঙ্গিতে বিরোধী দলের নেতাদের সাথে সমঝোতা করে ককটেল ফুটানো বন্ধ করতে পরামর্শ দিতেন। আমরা মাঠ পর্যায়ের অফিসাররা চাকরি বাঁচিয়ে উভয় কূল রক্ষার চেষ্টা করতাম।

এমন পরিস্থিতিতে মাঝে মাঝে খুব বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হতো।

একদিন রাস্তা দিয়ে টহল গাড়ি নিয়ে যাওয়ার সময় একজন আওয়ামী লীগের নেতা সামনে পড়ে গেল। তাকে আমি ভাল করে চিনতাম। তাঁকে গ্রেপ্তার করার জন্য কড়া হুকুম ছিল। তিনি আমাকে দেখে পালিয়ে যাবার চেষ্টা করলেন না। কারণ তাঁকে অনুরোধ করে আমি কয়েক দফা ককটেল ফুটানো বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছিলাম। কিন্তু তিনি আমাকে দেখে পালিয়ে না গিয়ে আমাকে ভীষণ বিপদে ফেললেন। কারণ আমার সাথে থাকা কয়েকজন পুলিশ সদস্য তাঁকে চিনতো। ঐ নেতাকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ ছিল তাও অনেকে জানতো। সুতরাং কেউ যদি উর্ধতন অফিসার ও জাতীয় পার্টির নেতাদের কাছে এই খবর জানিয়ে দেয় তাহলে আমার ক্ষতি হবে তা আমি জানতাম। তাই চাকরি বাঁচানোর জন্য অনিচ্ছা সত্বেও ঐ নেতাকে তাড়া করলাম কিন্তু ধরলাম না। তিনিও বিষয়টি অনুধাবন করে দৌড়ে পালিয়ে গেলেন।

মাঝে মাঝে এমন চোর পুলিশ খেলা চলতো; আবার কখনও নেতাদের ধরে ডিটেনশনে রাখা হতো। তবুও আন্দোলন, হরতাল, অবরোধ লেগেই থাকতো। অনেক সময় টানা হরতালের কবলে পড়ে নেতারা দিনরাত পালিয়ে আন্দোলন পরিচালনা করতেন। এমনই এক রাতে আমি বরিশাল কলেজের সামনে দিয়ে মটর সাইকেলে একা একা যাচ্ছিলাম। চারদিক জনমানবশূন্য। গা ঝিমঝিম করছিলো। হঠাৎ করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কয়েকজন নেতা আমার গতিরোধ করলেন। মটর সাইকেল থেকে নামিয়ে আমার পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে সব টাকা বের করে মানিব্যাগ ফেরত দিয়ে বললেন, ‘কামরুল ভাই, আপনাকে অনেক ভালবাসি। আপনাদের ভয়ে পালিয়ে থাকতে গিয়ে আমাদের পকেট একেবারে শুন্য হয়ে গেছে। রাতে খাবার টাকা নেই। কয়েকজন কর্মী নিয়ে রাতে কিছু খাবো। তাই আপনার পকেটে হানা দিতে বাধ্য হলাম। সুদিন এলে আপনার ঋণ শোধ করে দেবো।’

আমি হাসতে হাসতে তাদের সকল আবদার মেনে নিলাম। প্রসঙ্গত বলে রাখি, তাঁরা সকলেই বর্তমানে উভয় দলের বড় বড় নেতা হয়েছেন। এখানে তাঁদের নাম উল্লেখ করে হেয় করতে চাই না।

আমি বরিশাল থেকে বদলি হয়ে বিদায় নেবার সময় তাঁরা আমাকে সংবর্ধনা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে তা সম্ভব ছিল না। আমাকে বিদায় সংবর্ধনা দিতে না পারায় সকল দলের নেতারা মনক্ষুণ্ণ হয়ে পড়েন। তারা আমার সাথে দেখা করার সুযোগ খুঁজতে থাকেন।

হঠাৎ এক রাতে আমার বাসার পিছনের জানালায় ঠক ঠক আওয়াজ শুনে জানালার কাছে গেলাম। বাইরে থেকে আওয়াজ এলো, ‘জানালা খোলেন ভাই। আমরা অমুক অমুক আপনার সাথে দেখা করতে এসেছি। নতুন ভাবিকে দেখার সৌভাগ্য হলো না, তাই ভাবির জন্য সামান্য উপহার এনেছি’।

একথা বলে একটি সোনার আংটি জানালা দিয়ে জোর করে আমার হাতে দিয়ে সাথে সাথে সবাই চলে গেলেন। আমি তাঁদেরকে ধন্যবাদ দেবারও সুযোগ পেলাম না।

রাজনৈতিক ধরপাকড় নিয়ে আরো একটা কাহিনী না বললেই নয়। বরিশাল আওয়ামী লীগের তৎকালীন নেতা জনাব আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ পুলিশের খাতায় ছিলেন মোটামুটি শান্ত হিসেবে পরিচিত। তবুও হঠাৎ এক রাতে তাঁকেসহ আরো অনেক নেতাকে গ্রেপ্তার করার হুকুম হলো। থানা ও পুলিশ লাইন থেকে অতিরিক্ত পুলিশ এনে কয়েকটি দলে বিভক্ত করে অতি গোপনে নেতৃবৃন্দের নামের তালিকা করে দেওয়া হলো৷ আমার ভাগে পড়লো জনাব আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ সাহেবকে গ্রেপ্তার করার দায়িত্ব। গভীর রাতে কেউ কিছু বুঝার আগেই অতি গোপনে ফোর্সসহ তাঁর বাড়িতে রেইড দিলাম। বাড়ির চারপাশে করডন করে এমনভাবে রাখা হলো যেন বাড়ি থেকে কেউ বের হতে না পারে। তারপর আমি নিজে ভদ্রভাবে দরজায় কড়া নাড়তে থাকলাম। অনেক চেষ্টার পর একজন বয়স্ক ভদ্র মহিলা এক প্রকার বাধ্য হয়ে দরজা খুলে দিলেন। আমি একা ঘরে প্রবেশ করা মাত্রই তিনি আবার দরজা বন্ধ করে দিলেন। আমি বেশ ভয় পেয়ে গেলাম। কিন্তু ভদ্র মহিলা কোন প্রকার ভণিতা না করে কাঁদো কাঁদো গলায় বললেন, ‘দেখো বাবা, আমার ছেলে বাড়ি আছে। সে অনেক ভীতু মানুষ। তাকে তুমি ধরে নিয়ে গেলে আমি মারা যাবো। এই ছেলে ছাড়া আমার তিন কুলে আর কেউ নেই। সবাইকে হারিয়ে আমি এই ছেলের মুখের দিকে চেয়ে বেঁচে আছি’।

আমি পাথরের মতো দাঁড়িয়ে তাঁর সব কথা শুনছিলাম। বাইরে অপেক্ষমান আমার সঙ্গীয় ফোর্স কি ভাবছে তাও আমাকে চিন্তা করতে হচ্ছিল। টার্গেট হাতে পেয়েও ছেড়ে দিয়ে চলে গেলে পরিণতি কি হতে পারে তাও আমার জানা ছিল। আবার স্বজনহারা এই মায়ের আকুতি অগ্রাহ্য করার মতো মনোবল ঐ মূহুর্তে আমার ছিল না।

আমার চোখের সামনে ভেসে উঠলো ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্টের সেই নৃশংস হত্যাকান্ডের কথা। জাতির জনকসহ তাঁর পরিবারের সাথে নিহত হয়েছিলেন জনাব হাসনাত আবদুল্লাহর সাহেবের পিতা। মনে পড়ে গেল ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার যুদ্ধে আমার পিতার হত্যাকান্ডের করুণ স্মৃতি। আমি তখন আর পুলিশ রইলাম না। কঠিন দায়িত্ববোধ আমাকে হতবিহ্বল করে দিলো। বিবেকের কাছে বার বার হেরে গেলাম। আমার চোখ থেকে খাকি পোষাকের উপর কয়েক ফোঁটা অশ্রু ঝরে পড়লো।

পুলিশের চাকরিতে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করাকে বিশেষ যোগ্যতা বলে ধরা হয়। ঐ মূহুর্তে আমাকে সেই বিশেষ যোগ্যতা কাজে লাগাতে হয়েছিল। তাই দরজা খুলে বাইরে এলাম। সেখানে অপেক্ষমান ফোর্সদের কিছু বুঝতে না দিয়ে কৃত্রিম হাসি দিয়ে বললাম, ‘সবাই ক্লোজ হন। আজ পাওয়া গেল না। পালিয়ে কতদিন থাকবে। আজ, না হয় কাল তাঁকে ধরা পড়তেই হবে। তারপর রওয়ানা হলাম অন্য টার্গেটের খোঁজে’।

পরদিন বিকালে একজন লোক এসে আমাকে বললো, ‘হাসনাত ভাই চর কাউয়া এলাকায় এক বাড়িতে আছেন। গতরাতে আপনি তাঁকে রেখে আসার পরই বাড়ি থেকে বের হয়ে কীর্তনখোলা নদী পার হয়ে চর কাউয়া এলাকায় চলে গিয়েছিলেন। তিনি আপনাকে ছালাম দিতে আমাকে পাঠিয়েছেন’।

আমি লোকটিকে ধন্যবাদ দিয়ে বিদায় দিলাম এবং গত রাতের ঘটনা জানাজানির ভয়ে শঙ্কিত হয়ে সাবধানতার পথ খুঁজতে লাগলাম।

বরিশাল থেকে বদলি হয়ে আমি দেশের বিভিন্ন জায়গায় চাকরি করাকালীন হঠাৎ একদিন জনাব আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ সাহেবের সাথে দেখা হলো ঢাকা থেকে যশোর যাবার পথে বাংলাদেশ বিমানের মধ্যে। তিনি আমাকে দেখেই বুকে জড়িয়ে ধরে তাঁর সফর সঙ্গীদের সামনে আমাকে অনেক বড় করে তুলে ধরলেন। অবশ্য তখন তিনি ছিলেন জাতীয় সংসদের মাননীয় হুইপ। কিন্তু তাঁর মধ্যে বিন্দু পরিমাণ অহংকার আমার চোখে পড়েনি। বরং তাঁর অতি মার্জিত আচরণে আমি রীতিমতো লজ্জা পাচ্ছিলাম।

রাজনৈতিক ধরপাকড়ের কথা বলতে গিয়ে আরো একটি কথা না বললেই নয়। অধ্যক্ষ জনাব ইউনুস তালুকদার তখন ছিলেন বিএনপি নেতা। তাঁর আর্থিক অবস্থা ছিল অত্যন্ত করুণ। হঠাৎ একদিন তাঁর বিরুদ্ধে সরাসরি ডিটেনশন আদেশ এলো। অতি গোপনীয়তা সত্ত্বেও তাঁর কাছে খবর পৌঁছে গেল। গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি গা-ঢাকা দিলেন। তিনি পলাতক হওয়ায় জাতীয় পার্টির নেতৃবৃন্দ ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়ে পুলিশকে দোষারোপ করতে লাগলেন। পুলিশের উর্ধতন অফিসারগণ মারাত্মক বেকায়দায় পড়লেন। কয়েকদিন রীতিমতো সাড়াশি অভিযান চালিয়েও অধ্যক্ষ ইউনুস সাহেবের কোন হদিস পাওয়া গেল না। ওদিকে পুলিশের উপর চাপ বেড়েই চললো। এমন সময় এসপি সাহেব আমাকে ডেকে তাঁর অসহায় অবস্থার কথা জানালেন এবং যেকোন উপায়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করার জন্য অনুরোধ করলেন।

আমি নিরুপায় হয়ে একাকী মোটরসাইকেল নিয়ে রাতের অন্ধকারে বেরিয়ে পড়লাম। সম্ভাব্য নেতৃবৃন্দের সাথে গোপনে দেখা করলাম। এক পর্যায়ে একজন নেতা বললেন, ‘ইউনুস স্যার আপনার সাথে দেখা করবেন। তবে আপনি একা আমার একজন লোকের সাথে যাবেন’।

আমি তাঁর কথায় রাজি হলাম। রাতের আঁধারে একজন কর্মী আমাকে অধ্যক্ষ সাহেবের গোপন আস্তানায় নিয়ে গেলেন। তিনি অত্যন্ত গুণী মানুষ ছিলেন। তাঁকে গ্রেপ্তার করতে না পেরে পুলিশ বেকায়দায় আছে তাও তিনি জানতেন। পুলিশকে বাঁচাতে তিনি গ্রেপ্তার হতে রাজি হলেন। তবে কিছু শর্ত জুড়ে দিলেন।

প্রথমেই বললেন, তাঁকে গ্রেপ্তার করতে হলে কামরুল সাহেবকে একা আসতে হবে এবং সকালে থানায় নিয়ে তখনই জেলখানায় পাঠাতে হবে।

তিনি আরও জানালেন, আগামীকাল সকালে তিনি একটি নির্দিষ্ট সেলুনে থাকবেন। সেখানে চুল কাটিয়ে চুলে রং করার পর তাকে নিতে হবে। সেলুনের খরচ কামরুল সাহেবকেই বহন করতে হবে।

তাঁর পরিবারের দৈনন্দিন খরচ চালানোর মতো টাকা তাঁর কাছে ছিল না। তাই তাদের দিকে খেয়াল রাখার অনুরোধ করলেন।

পরদিন সকালে আমি একা একটি মোটর সাইকেল নিয়ে সেলুনে বসে রইলাম। তিনিও একা সেখানে এলেন। চুল কাটিয়ে, দাড়ি সেভ করিয়ে, চুলে রং করালেন। তারপর আমি তাঁকে মটর সাইকেলযোগে থানায় নিয়ে গেলাম। থানার সকল অফিসারের চক্ষু কপালে উঠলো। কয়েকদিন যাবৎ যাকে গ্রেপ্তার করার জন্য সকল অফিসারের নাওয়া খাওয়া বন্ধ হয়ে ছিলো, তাঁকে কিভাবে আমি হাজির করলাম তাই নিয়ে কানাঘুষা শুরু হয়ে গেল। অনেকে এসপি সাহেবের কান ভারী করার চেষ্টা করলো। এক পর্যায়ে এসপি সাহেব আমাকে ডেকে পাঠালেন। আমি তাঁর কাছে সব খুলে বললাম। তিনি আমার কথায় খুশি হয়ে আমাকে ধন্যবাদ দিয়ে বললেন, ‘সম্মানি কাউকে গ্রেপ্তার করতে হলে এভাবেই করতে হয়। তুমি যা করেছো তাতে আমি খুশি হয়েছি’।

সাথে সাথে তিনি ডিসি সাহেবকে ফোন করে কথা বললেন। ডিসি সাহেব নিজেও এ ব্যাপারে চাপের মুখে ছিলেন।

প্রসংগত বলে রাখি, এর আগে একজন বড় নেতাকে গ্রেপ্তার করার সময় পুলিশ কিছুটা অসৌজন্যমূলক আচরণ করায় ডিসি ও এসপি সাহেবের মধ্যে সম্পর্কের কিছুটা অবনতি হয়েছিল। অধ্যক্ষ ইউনুস সাহেবের গ্রেপ্তার প্রক্রিয়ায় সেই শীতল সম্পর্কের কিছুটা উন্নতি হলো। ডিসি সাহেব চাইতেন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে গ্রেপ্তার করার প্রয়োজন হলে সম্মানের সাথে করতে হবে। প্রয়োজনে তাদেরকে ডেকে এনে বুঝিয়ে বলে তারপর চালান করতে হবে। তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকেও ক্ষেত্র বিশেষে তেমনই নাকি নির্দেশ ছিল।

যাহোক, পূর্বের প্রতিশ্রুতি মোতাবেক অধ্যক্ষ ইউনুস সাহেবকে এক মাসের ডিটেনশন দিয়ে জেলে পাঠানো হলো। কিন্তু তাঁর বাসার জন্য দৈনন্দিন খরচের কি হবে?

আবার শুরু করলাম চাঁদাবাজি। কারো কাছ থেকে এক বস্তা চাল, কারো কাছ থেকে বাজার খরচের টাকা যোগাড় করে রাতের আঁধারে তাঁর বাসায় পাঠিয়ে দিতাম। কিন্তু তাঁর বাসায় আমি কখনও যাইনি। তিনি জেলখানায় আটক থাকা অবধি এই কার্যক্রম অব্যাহত ছিল।

এখানে একটু জোর দিয়ে বলে রাখা ভাল, সেই সময়ের এরশাদ বিরোধী আন্দোলন দমনে বিভিন্ন দলের নেতা নেতৃদের গ্রেপ্তারে আমার ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। তবে আমার মার্জিত ব্যবহার ও পুলিশের তথাকথিত গ্রেপ্তার বাণিজ্য আমার মধ্যে বিন্দুমাত্র না থাকায় সকলের কাছে আমি ছিলাম গ্রহনযোগ্য পুলিশ।

আনন্দ

আইন ও সরকারি দায়িত্ব কখনও কখনও বিবেকের সাথে সাংঘর্ষিক হয় । পুলিশের চাকরি করতে গিয়ে তা প্রথম উপলব্ধি করলাম।

রাজনৈতিক দমন পীড়নের মধ্যে কিছুটা হলেও মানসিক শান্তি পেয়েছিলাম।

বেদনা

এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সূত্র ধরে এক পর্যায়ে আমাকে বরিশাল থেকে বদলি হতে হয়েছিল। চলবে …

লেখক : প্রতিষ্ঠাতা, সোনামুখ পরিবার। (অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, অব.)

খুলনা গে‌জেট/ টি আই




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!