খুলনা, বাংলাদেশ | ২৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ডেঙ্গুতে আরও ৪ মৃত্যু, একদিনে হাসপাতালে ভর্তি ৪৪৪ জন

বন্যায় ভাইরাল শিশুর ছবিটি বাস্তব নয়, এআই দিয়ে তৈরি

গেজেট ডেস্ক

বন্যার পানিতে নিমজ্জিত দেশের ৮ জেলা। এসব এলাকায় মানবেতর জীবনযাপন করছে মানুষ। তাদের দুঃখ দুর্দশার বিভিন্ন চিত্র ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এরমধ্যে বিশেষ একটি ছবি সবার নজর কেড়েছে। ছবিতে একটি শিশুকে বন্যার পানির মধ্যে অর্ধ নিমজ্জিত অবস্থায় দেখা গেছে। সাদাকালো এই ছবিটি কোনো আলোকচিত্রীর ধারণ করা নয়।

ছবিটি আসলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) দিয়ে তৈরি। বিভিন্ন এআই ইমেজ ডিটেক্টর যেমন- ইসইটএআই ডটকম এবং হাইভ মডারেশন ডটকম টুলসে ইমেজটি চেক করে দেখা গেছে ছবিটি এআই দিয়েই তৈরি।

তবে এরইমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে ছবিটি। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ছবিটি শেয়ার করেছেন। অনেকে শিশুটির সন্ধান চেয়েছেন। অনেকে স্থান জানতে চেয়েছেন। কেউবা ছবিটি নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। এর প্রেক্ষিতে সমকাল ছবিটি চেক করে এবং এআই দিয়ে তৈরি বলে নিশ্চিত হয়েছে।

ছবিটি নিয়ে এএফপির ফ্যাক্ট-চেকার কদরুদ্দিন শিশির ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “কোনো ইমেজ এআই জেনারেটেড কিনা তা এখনও কোন টুল ব্যবহার করে শতভাগ নিশ্চয়তার সাথে বলার সুযোগ নেই। টুলগুলোর দেয়া ফলাফল করোবোরেটিং এভিডেন্স হিসেবে রাখা যায় শুধু। আমি তিনটি এআই ডিটেক্টর টুলে ছবিটি ট্রাই করে তিন ধরনের ফলাফল পেয়েছি। একটিতে দেখিয়েছে ছবিটি ৯১ শতাংশ এআই জেনারেটেড। অন্যটিতে ৪০ শতাংশ এবং একটিতে দেখাচ্ছে ‘লাইকলি হিউম্যান মেইড’।

তিনি লেখেন, ছবিটির অরিজিনাল ভার্সন পেলে হয়তো এই ভিন্নতর ফলাফল হতো না। কোনো এআই জেনেরেটেড ছবির অরিজিনাল ভার্সন ডিটেক্টর টুলে চেক করলে মোটামুটি সব ক্ষেত্রেই কনক্লুসিভ ফলাফল পাওয়া যায়। কোনো ছবি একাধিক টুলের প্রতিটিতে ৭০ শতাংশের বেশি এআই জেনারেটেড দেখালে আমরা সেটাকে কনক্লুসিভ ফলাফল হিসেবে গ্রহণ করে থাকি। কিন্তু এই ছবির ক্ষেত্রে, বোঝাই যাচ্ছে শুধু টুল দিয়ে এআই জেনারেটেড কিনা তা নির্ধারণ করা সম্ভব হচ্ছে না।

কদরুদ্দিন শিশির বলেন, ভিন্ন কিছু এঙ্গেল থেকে এটি বিশ্লেষণ করা যেতে পারে। ছবিটি গতকাল (বুধবার) থেকে অনলাইনে ছড়িয়েছে। নানানভাবে সার্চ করেও গতকালের আগে এবং সামাজিক মাধ্যমগুলোর বাইরে কোথাও এটি খুঁজে পাওয়া যায় না। এবং দেখেই বুঝা যাচ্ছে, এটি পেশাদার কোন ফটোগ্রাফারের ক্যামেরার ছবি।

যদি ধরে নেয়া হয় যে, এটি ফেনী নোয়াখালী অঞ্চলের চলমান বন্যার ছবি, তাহলে এটি অনেক মূল্যবান একটি ছবি হওয়ার কথা। কোন পেশাদার ফটোগ্রাফার এই ছবি তুললে অবশ্যই ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় এটি তিনি যে প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করছেন সেটিতে প্রকাশ করবেন। তিনি ফ্রিলান্সার হলে অনেক দামে ছবিটি কোন সংবাদমাধ্যমের কাছে বিক্রি করবেন। অর্থাৎ ছবিটি যেভাবে শুধু ফেসবুকে পাওয়া যাচ্ছে তেমনটি হওয়া কথা না। প্রথমে এটি কোনো সংবাদমাধ্যম বা এরকম প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে ক্রেডিট ও ক্যাপশনসহ প্রকাশিত হয়ে পরে ফেসবুকে আসার কথা। কিন্তু এই ছবির ক্ষেত্রে তা হয়নি।

যদি কোনো পেশাদার ফটোগ্রাফার এটি তার সোশাল মিডিয়ায় প্রকাশ করে থাকতেন তাহলে এমন একটি আবেদনময়ী ছবিতে অবশ্যই তার নাম বা প্রতিষ্ঠানের নাম ওয়াটারমার্ক করে দেয়াটাই স্বাভাবিক ছিল। ছবিটির কোন ভার্সনে এমন কিছু দেখা যায় না।

শিশুটি ক্যামেরার দিকে যেভাবে তাকাচ্ছে তাতে বুঝা যাচ্ছে ফটোগ্রাফার খুবই কাছে ছিলেন এবং তিনি এই অবস্থায় একাধিক ছবি/ভিডিও তোলার সুযোগ পাওয়ার কথা। কিন্তু অনলাইনে এই একটি সূত্রহীন ছবি ছাড়া এই ঘটনার আর কোনো এঙ্গেলের ছবি বা ভিডিও নেই।

ছবিতে যেভাবে একটি উন্মুক্ত পানি-ভর্তি এলাকায় ২/৩ বছরের বাচ্চাকে অভিভাবক ছাড়া দেখা যাচ্ছে সেটি অসম্ভব না হলেও খুব স্বাভাবিক নয়।
বাচ্চাটির ঠোঁটের গঠনও কিছুটা অস্বাভাবিক। একই সাথে তার চেহারায় আতঙ্কের কারণে চোখ ও কপালের একপাশে যে ভাঁজ (প্রকৃত ভাঁজ পড়বে কপালের ঠিক মাঝখান বরাবর) পড়েছে সেটিও স্বাভাবিক এক্সপ্রেশন মনে হচ্ছে না। সবমিলিয়ে বলা যায়, ছবিটি সত্য ঘটনার না হয়ে তৈরি করা হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।”

সারাদেশে বন্যায় ৮ জেলার ৩৫৭ ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৪ লাখ ৪০ হাজার ৮৪০ পরিবার। মোট ক্ষতিগ্রস্ত লোকের সংখ্যা ২৯ লাখ ৪ হাজার ৯৬৪। এখন পর্যন্ত মারা গেছেন দুজন। একজন ফেনীতে, আরেকজন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!