বগুড়ার চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্যকে প্রথমে ধর্ষণ ও পরে শ্বাসরোধে হত্যার ঘটনায় জড়িত খুনিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
র্যাব বলছে, ওই ঘটনায় জড়িত হত্যাকারীর নাম আবদুল লতিফ শেখ। তাকে গতরাতে মুন্সীগঞ্জ সদর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। হত্যার ঘটনার পর থেকে গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি শ্রমিক হিসেবে বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে ছিলেন।
শুক্রবার (২৫ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, গত বছর ১৮ সেপ্টেম্বর বগুড়ার একটি ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য নিখোঁজ হন। পরবর্তীতে ২২ সেপ্টেম্বর উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের কুড়িগাঁতী গ্রামের একটি ইটভাটার পাশে গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় তার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়।
ওই ঘটনায় ভিকটিমের ভাই বাদী হয়ে গত ২৩ সেপ্টেম্বর বগুড়ার ধুনট থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি মামলা করেন। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত ২৪ মার্চ র্যাব-১২ এর অভিযানে মুন্সীগঞ্জ থেকে মো. আব্দুল লতিফ শেখকে (৬০) গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে লতিফ হত্যাকাণ্ডে তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন।
গ্রেপ্তার লতিফ শেখ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানান, হত্যাকাণ্ডের প্রায় ৭ মাস আগে ইউনিয়ন পরিষদে কম্বল বিতরণের একটি অনুষ্ঠানে নিহত ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্যের সঙ্গে পরিচয় হয়। পরবর্তীতে লতিফ ঘনিষ্ঠতার চেষ্টা করেন। এ সময় তারা ইউনিয়ন পরিষদ ও আশেপাশের এলাকায় বিভিন্ন সময় দেখা করেন।
২০২১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার লতিফ কৌশলে ইউপি সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্যের ধুনটের মথুরাপুর এলাকার একটি ইট ভাটার পাশে নির্জন স্থানে নিয়ে যান। সেখানে কৌশলে ভিকটিমকে পানীয়ের সাথে মিশিয়ে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। এ সময় ভিকটিম তাকে বাধা দেন।
একপর্যায়ে লতিফ তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন। পরবর্তীতে ধর্ষণের বিষয়টি পরিবার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানিয়ে দিলে লতিফকে কারাভোগ করতে হতে পারে এমন শঙ্কায় গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ওই নারীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। পরে মৃতদেহ ইটভাটার পাশে রেখে পালিয়ে যান।
নিজেকে সন্দেহের ঊর্ধ্বে রাখতে তিনি কৌশলে মৃতদেহ উদ্ধারকাজে স্থানীয়দের সহায়তা করেন। দাফনকার্যে অংশগ্রহণ করেন এবং ভিকটিমের পরিবারের সাথে সু-সম্পর্ক বজায় রাখেন। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তারের আশঙ্কা থেকে এলাকা ত্যাগ করেন। প্রথমে ছদ্মবেশী শ্রমিক হিসেবে নোয়াখালীতে কিছুদিন কাজ করে পরবর্তীতে মুন্সীগঞ্জে আত্মগোপন করেন।
গ্রেপ্তার লতিফের সম্পর্কে র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন বলেন, ছোটবেলা থেকে ফার্নিচার তৈরির কাজ করতেন আব্দুল লতিফ। পরবর্তীতে তিনি তার নিজের বাড়িতেই কর্মচারী রেখে ফার্নিচার তৈরি করে তা বিক্রি করা শুরু করেন। তার বিরুদ্ধে ২০০৯ সালে বগুড়াতে একটি ধর্ষণ মামলা রয়েছে। ওই মামলায় তিনি ৭ মাস কারাভোগও করেন। বর্তমানে ধর্ষণ মামলা চলমান। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
খুলনা গেজেট/ এস আই