চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে দেড় বছর বয়সী শিশু সন্তানকে নিয়ে তাহমিনা আকতার রিমা (২৪) নামের এক নারী ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
বুধবার (২৪ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে চাঁদপুর থেকে চট্রগ্রামগামী সাগরিকা এক্সপ্রেসের নিচে ঝাঁপ দিয়ে তিনি আত্মহত্যা করেন।
আত্মহত্যাকারী তাহমিনা আকতার রিমা ২ সন্তানের জননী। তিনি হাজীগঞ্জের হাটিলা পশ্চিম ইউনিয়নের ধড্ডা গ্রামের দেওয়ানজী বাড়ির রফিকুল ইসলামের মেয়ে। তার সাড়ে ৪ বছর বয়সী আরও একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।
জানা গেছে, ২০১৯ সালে একই উপজেলার ২ নম্বর বাকিলা ইউনিয়নের স্বর্ণা গ্রামের নুরুল ইসলাম হাওলাদারের ছেলে মো. মাসুদুজ্জামান হাওলাদারের সঙ্গে তাহমিনার সামাজিকভাবে বিয়ে হয়। সম্প্রতি পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়।
পারিবারিক কলহের জের ধরে গত ২৮ মার্চ রিমা তার সাবেক স্বামী মাসুদুজ্জামান হাওলাদার (৪০), তার ভাসুর মামুন হাওলাদার (৫৫) ও মাহবুব হাওলাদারের (৫০) বিরুদ্ধে হাজীগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, রিমার বাবা তার স্বামী মাসুদুজ্জামানকে ৫ লাখ টাকা দিয়ে কুয়েতে পাঠান। বিদেশ যাওয়ার পর থেকে মাসুদ রিমাকে ভরণপোষণ না দিয়ে মোবাইল ফোনে অশ্লীল ভাষায় গালমন্দ হুমকি-ধামকি দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে রিমা বাধ্য হয়ে মাসুদকে তালাক দেন। তালাকের পর স্বামী মাসুদ ‘ইমো’তে অশ্লীল ভাষায় গালমন্দ ও প্রাণনাশের হুমকি দিতে থাকেন। এছাড়াও স্বামী-স্ত্রীর বিভিন্ন ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যাম (ফেসবুকে) ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। এ ঘটনায় ভাসুরদের জানালেও তারা কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো রিমাকে হুমকি দেন।
বিষয়টি নিয়ে থানায় অভিযোগ দিলেও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে রিমার পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করে।
এক পর্যায়ে কোনোভাবেই অপমান-অপদস্ত ও হুমকি-ধামকি সহ্য করতে না পেরে তার দেড় বছর বয়সী শিশু সন্তান আবদুর রহমানকে নিয়ে তাহমিনা আকতার রিমা আত্মহত্যার পথ বেঁচে নেন। তবে রিমা আত্মহত্যার পূর্বে তার নিজস্ব (সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম) ফেসবুক আইডিতে ‘এ আত্মহত্যার জন্য কেউ দায়ী নয়, তার মেয়েকে সবাই যেনো দেখে রাখে’- লিখে একটি পোস্ট দেন। এরপর তিনি ট্রেনের নিচে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
এ বিষয়ে অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা ও হাজীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবদুর রহমান বলেন, ‘ অভিযোগের পর আমি বিবাদীদের বাড়ি গিয়েছি। তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। বিষয়টির তদন্ত চলছে।’
হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ আবদুর রশিদ বলেন, আত্মহত্যার ঘটনাটি যেহেতু ট্রেন লাইনে ঘটেছে। জিআরপি পুলিশ এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, আসামিদের বাড়িতে পুলিশ পাঠানো হয়েছিলো।
ট্রেনের নিচে পড়ে মা ও শিশু সন্তান আত্মহত্যা করার ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন জিআরপি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাসুদ আলম। তিনি বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। পরে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ দুটি উদ্ধার করে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
খুলনা গেজেট/এইচ