খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি) ক্যাম্পাস যেনো একটুকরো ফুলের রাজ্য। যেদিকেই তাকাবেন হরেক রকমের ফুল। ফুলের গন্ধে মাতোয়ারা পুরো ক্যাম্পাস। কোনটা লাল, কোনটা নীল, কোনটা হলুদ ফুলে ভরে উঠেছে পুরো ক্যাম্পাস। এ যেনো ফাগুনের বাহারি ফুলের মেলা। প্রতিবছর জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাস আসলেই খুবি ফুলের রাজ্য পরিণত হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই হাতের ডান পাশে তাকালেই ‘কালজয়ী মুজিব’ ম্যুরালের সম্মুখে দেখা যাবে রঙবেরঙের নানা ফুল। একটু সামনে এগিয়ে যেতেই হাতের বাম পাশে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ প্রশাসনিক ভবনকে ঘিরে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন সব ফুলের বাগান। উপাচার্যের বাসভবন ও মাইকেল মধুসূদন দত্ত অতিথি ভবনের সম্মুখে সৌরভ ছড়াচ্ছে নানা রঙের গাঁদা ফুল।
ক্যাম্পাস ঘুরে আরও দেখা যায়, বিভিন্ন স্থানে রোপণ করা হয়েছে হরেক রকমের ফুলগাছ। গড়ে তোলা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন বাগান। শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম ভবন, উপাচার্যের বাসভবন, অগ্রণী ব্যাংক, ওয়াকওয়ে, পোস্টঅফিস প্রাঙ্গণ, অপরাজিতা হল, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, খান বাহাদুর আহছানউল্লা হল, খান জাহান আলী হলসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি একাডেমিক ভবন ও আবাসিক হলের ভিতরের প্রতিটি স্থানে রোপণ করা হয়েছে হরেক রকমের ফুলগাছ। এসব বাগানে ফুটেছে রঙবেরঙের নানা প্রকৃতির ফুল।
নানা প্রকারের গাঁদা, আকাশি সাদা স্নোবল, সালভিয়া, দোপাটি, ক্যালেন্ডোলা, দায়েনথাঁচ, ফ্লোগর্স, ইন্টালিয়াম, স্নাকড্রাগন, পেনজি, কারিয়াফছি, ভারবিনা, পিটুনিয়া, স্টার গোল্ড, মৌচন্ডা, পানচাটিয়া, অ্যালমন্ডা, গ্লাডিয়া, তালপাম্প, চন্দ্রমল্লিকা, ইনকা গাঁদা, ছোট চায়না গাঁদা, মোরগঝুঁঁটি, কসমস, জুঁই, চামেলি। এছাড়া আছে টগর, ভারভিনা, জেনিয়া, পিটোনিয়া, সালভিয়া, বেলি, গোলাপ, জারবেরা, সাইকাস, ক্রিসমাস, জবা, রঙ্গন, রজনীগন্ধা, পিয়াজ ফুল এমনকি কয়েকটি গাছে পলাশ ফুলও শোভা পাচ্ছে। পলাশের ডাল ভরে গেছে ফুলে।
সব মিলিয়ে এবার প্রায় ৪১ ধরনের ফুল ফুটেছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। গাছে গাছে ফুটেছে আমের মুকুল যা যোগ করেছে অন্যরকম এক সৌন্দর্য। বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে মৌ মৌ গন্ধ। মৌমাছিরাও ব্যস্ত মধু আহরণে।
ক্যাম্পাসের এ বাহারি রকমের ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা। এমনকি দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন ফুলপ্রেমীরা। এসব জায়গায় বসে কেউ মনের সুখে ছবি, সেলফি তুলে সময় পার করছেন।
খান জাহান আলী হলের বাগান পরিচর্যার দায়িত্বে থাকা মালি মোস্তফা বলেন, ‘খান জাহান আলী হল প্রাঙ্গনে এবার ৮ প্রজাতির ফুল গাছ লাগানো হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ডালিয়া, কসমস, ইনকা গাঁদা, পিটোনিয়া, ভারভিনা, সালভিয়া, জেনিয়া। তিনি বলেন, ‘অনেক গাছে ফুল ফুটেছে আবার কোনটাতে এখনো ফুটেনি। সাধারণত অক্টোবর-নভেম্বর মাসে এসব গাছ লাগানো হয়। ডিসেম্বরের শেষের দিকে ফুল ফুটতে শুরু করে। মার্চের শেষের দিকে ঝরে পরে এসব ফুল।’
ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসা বাংলা ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী মীম বলেন, ফুল মানুষের মনে প্রশান্তি এনে দেয়’আমি ফুল দেখতে ভালোবাসি।সাজানো গুছানো ক্যাম্পাস হিসেবে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়কে আমার কাছে এক টুকরো বাগান মনে হয়।এ জন্যই পুরো ক্যাম্পাস ঘুরে দেখছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট শাখার সহকারী রেজিস্টার এস এম মোহাম্মদ আলী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এস্টেট শাখা প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন জায়গায় ফুলের চারা রোপণ করে থাকে। এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন, পোস্ট অফিস প্রাঙ্গণ, অতিথি ভবন, অগ্রণী ব্যাংক, উপাচার্যের বাসভবন ও ‘কালজয়ী মুজিব’ প্রাঙ্গণে এবার বিভিন্ন প্রজাতির ফুল গাছ লাগানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘বাগান পরিচর্যা করার জন্য আমাদের মালির সংখ্যা অনেক কম। একারণে এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ফাঁকা জায়গাগুলোতে আমরা ফুলগাছ লাগাতে পারিনি। মালির সংখ্যা বৃদ্ধির ব্যাপারে আমরা ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানিয়েছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক খান গোলাম কুদ্দুস বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়কে কিভাবে সৌন্দর্যন্ডিত করা যায় এ প্রয়াস আমাদের সবসময় আছে থাকবে। বর্তমান উপাচার্যের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী আমরা এগিয়ে চলেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার জন্য ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় এবার প্রায় ৪০-৪৫ প্রজাতির ফুল গাছ লাগানো হয়েছে। ইতিমধ্যে ফুল ফোটা শুরু হয়েছে এবং পুরো ফুল ফুটে গেলে মনে হবে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস যেন ফুলের উপর ভাসছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা ছাড়াও ফুলের এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে দর্শনার্থীরাও ছুটে আসছেন।’ মালির বিষয় বলা হলে তিনি উপচার্যকে বলে দ্রুত মালি বৃদ্ধির আশ্বাস দেন।