শীতকালীন রসনা বিলাসের অন্যতম সুস্বাদু খাদ্য কুমড়ার বড়ি। খুলনার ফুলতলার কুমড়ার বড়ি এখন শুধু গ্রাম অঞ্চলেই নয়, বিক্রি হচ্ছে সারাদেশেই। বড়ির চাহিদা থাকায় উপজেলার জেলার বিভিন্ন স্থানে বাণিজ্যিকভাবে বড়ি তৈরি হচ্ছে। প্রায় ২ যুগ ধরে এ বড়ি তৈরি করে ফুলতলা ৩ শতাধিক পরিবার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সরকারিভাবে সহযোগিতা পেলে এ বড়ি দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও পাঠানো যাবে বলে মন্তব্য করেন বড়ি ব্যবসায়ীরা।
কুমড়া ও লাউ দিয়ে তৈরি করা হয় বড়ি। শীত মৌসুমে চাহিদা বেশি থাকায় কুমড়া বড়ি তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে ফুলতলার ধোপাখোলা , বেজেরডাঙ্গার ‘কুমড়া বড়ি পল্লীর সকলে। সেখানে শুরু হয়েছে শীতকালীন রসনা বিলাসের জন্য অন্যতম সুস্বাদু খাদ্য ‘কুমড়া বড়ি’ বানানোর ধুম। শীতকালীন সব ধরনের তরকারিতে বাড়তি স্বাদ আনয়নের জন্য কুমড়া বড়ির কদর এখন গ্রাম ছাড়িয়ে শহরেও সমাদৃত হয় সমভাবে। ধনী-গরিব নির্বিশেষে সব শ্রেণীর মানুষেরই নিত্যদিনের খাবারে অতি প্রিয় অনুষঙ্গ এ কুমড়া বড়ি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার নারীরা এই বড়ি তৈরি করার জন্য বেশ কয়েক মাস আগে থেকে চাহিদামতো পাকা চালকুমড়োর ব্যবস্থা করেন। কুমড়ো বড়ি তৈরিতে মূলত চালকুমড়া এবং মাষকলাইয়ের ডাল প্রয়োজন হয়। মাষকলাইয়ের ডাল ছাড়া অন্য ডালেও তৈরি করা যায় এই বড়ি। মচমচে করে রোদে শুকাতে পারলে এই বড়ির ভালো স্বাদ পাওয়া যায়।
বড়ি তৈরি করা বিষয়ে জামিরা গ্রামের আলপনা আক্তার জানান, বড়ি তৈরির আগের দিন ডাল ভিজিয়ে রাখতে হয়। চালকুমড়া ছিলে ভেতরের নরম অংশ ফেলে মিহিভাবে কুচি করে রাখতে হয়। এরপর কুমড়ো খুব ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার পাতলা কাপড়ে বেঁধে সারা রাত ঝুলিয়ে রাখতে হয়। অন্যদিকে ডালের পানি ছেঁকে শিলপাটায় বেটে নিতে হয়। এরপর বাটা ডালের সঙ্গে কুমড়ো মেশাতে হয়। যতক্ষণ না ডাল-কুমড়োর মিশ্রণ হালকা হয়, ততক্ষণ খুব ভালো করে হাত দিয়ে এ মিশ্রণ মিশাতে হয়। এরপর কড়া রোদে চাটি বা কাপড় বিছিয়ে বড়ির ছোট ছোট আকার দিয়ে একটু ফাঁকা ফাঁকা করে বসিয়ে শুকাতে হয়। এভাবে বড়ি তিন থেকে চার দিন রোদে শুকিয়ে অনেক দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। আবার বড়ি তৈরির পর যদি তীব্র রোদ কিংবা তাপ না থাকে তাহলে হাড়ভাঙা খাটুনি আর দীর্ঘ সময়ের পরিশ্রম সবই বৃথা যায়। কেননা বড়ি বানানোর পর যত দ্রæত তা রোদের তাপে শুকানো যায় ততই সুস্বাদু হয় এই কুমড়া বড়ি। একজন প্রতিদিন ৩০/৪০ কেজি বড়িও তৈরি করতে পারে। বড়ি তৈরিতে ভালো পরিশ্রম কিন্তু সে তুলনায় তেমন দাম পায়না বড়ি ব্যবসায়ীরা। এ ব্যবসায় সারাবছর চললেও ৬ মাস ভালো চলে।
শাহাপুর গ্রামের ফাতেমা বেগম বলেন, ‘শীতের সময় মূলত বড়ি তৈরি করা হয়। এ বড়ি নিজেদের খাওয়াসহ আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতেও পাঠানো হয়।
ফুলতলা বাজারের বড়ি বিক্রেতা সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘শীতকালে বাজারে কুমড়ো বড়ির যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। এ সময় কুমড়োর বড়ি তৈরি করে আমাদের মোটামুটি ভালো আয় হয়।’