সাতক্ষীরা শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত প্রাণসায়ের খালের সৌন্দর্য বর্ধনকরন প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে খালটি দখলমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন করার লক্ষ্যে খালের দুইপাড়ে গড়ে উঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। শুক্রবার (১ নভেম্বর) এই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানে নেতৃত্ব দেন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ।
প্রাণসায়ের পাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে সরকারি কর্মকর্তা, সেচ্ছাসেবী সংগঠন বিডি ক্লিন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা এবং বিভিন্ন সামাজিক ও পরিবেশবাদী সংগঠনের সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন। এসময় খালের দুই পাশের অবৈধ স্থাপনা অপসারণসহ খাল থেকে ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করা হয়।
সাতক্ষীরা জেলার পৌর এলাকার প্রাণ কেন্দ্রে ১৮৬৫ সালে তৎকালিন জমিদার প্রাণনাথ রায় চৌধুরী শহরের পানি নিষ্কাশন এবং নৌ-চলাচলের জন্য এল্লারচর নামক স্থান হতে একটি খাল খনন শুরু করেন। যা সাতক্ষীরা শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মরিচ্চাপ নদী এবং নৌখালি খালকে সংযুক্ত করেছে। খালটির আনুমানিক দৈর্ঘ্য প্রায় ১৩ কিলোমিটার ও প্রস্থ প্রায় ২০০ মিটার। পরবর্তীতে জমিদার প্রাণনাথ রায় চৌধুরী নামেই খালটির নাম হয় প্রাণসায়ের খাল। খালটি শহরের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ও পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু বহু বছর ধরে খালটি দখল ও দূষণের শিকার।
সম্প্রতি সাতক্ষীরার প্রাণসায়ের খালের দুই পাড়ের সৌন্দর্য বর্ধন করার জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসাবে খালটি দখলমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন করার জন্য এক অনন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ। ১ নভেম্বর বিশ্ব যুব দিবস উপলক্ষ্যে জেলা প্রশাসক নিজেই খালের দখলমুক্ত ও পরিষ্কার অভিযানে নেতৃত্ব দেন।
জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ বলেন, শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত খালকে বিউটিফিকেশন করার প্রকল্পের আওতায় খুলনা বিভাগের মধ্যে একমাত্র খাল হিসেবে সাতক্ষীরার প্রাণসায়ের খালকে বেছে নেওয়া হয়েছে। এখালের দু’মুখ মরিচ্চাপ ও বেতনা নদীতে মিশিয়ে দিয়ে খালের প্রবাহ সচল করা হবে। পাশাপাশি অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে দৃষ্টিনন্দন করা হবে প্রাণসায়ের খালকে।
তিনি আরো বলেন, প্রাণসায়ের খাল আমাদের শহরের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমরা সবাই মিলে এই খালটি দখলমুক্ত ও পরিষ্কার করতে পারলে এটি আমাদের শহরের সৌন্দর্য বাড়াবে এবং পরিবেশের জন্যও উপকারী হবে।
জেলা প্রশাসক বলেন, সরকারি বরাদ্দ ছাড়াই যে সৃজনশীল কাজ করা যায়, সেটি প্রমাণের সময় এসেছে। বুলডোজার দিয়েছে সওজ কতৃপক্ষ। আর জনবল দিয়েছে পৌর কতৃপক্ষসহ বিভিন্ন বে-সরকারি সংস্থা। সাধারণ মানুষকে সাথে নিয়ে আপাতত খাল পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। তবে আগামীতে দৃষ্টিনন্দনের জন্য বড় বরাদ্দের প্রয়োজন হলে উর্দ্ধতন মহলের সহায়তা চাওয়া হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে একাজে সংযুক্ত করা হয়েছে বলে জানান তিনি। এই অভিযান শুধু আজকের জন্য নয়, আমরা নিয়মিতভাবে খালটি পরিষ্কার রাখার উদ্যোগ গ্রহণ করবো। যারা অবৈধভাবে পুনরায় স্থাপনা নির্মাণ করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সকল নাগরিকদের এই বিষয়ে সচেতন ও সহযোগী হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
সাতক্ষীরার প্রাণসায়ের খাল দখলমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন রাখার এই মহতী উদ্যোগে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা আগামীতে শহরের পরিবেশ ও সৌন্দর্য উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে বলে আশাবাদী সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দরা।
খুলনা গেজেট/ টিএ