জরুরি ভিত্তিতে দেশের বিদ্যুৎ ঘাটতি মেটাতে প্রায় দেড় দশক আগে বেসরকারি খাতে বেশ কিছু রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের অনুমতি দেয় সরকার। এসব তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ব্যয়ও বেশি। এর পরও এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ কয়েক দফা বাড়ানো হয়েছে। সম্প্রতি তেলভিত্তিক ছয়টি রেন্টাল (ভাড়া) বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ শেষ হয়েছে। বর্তমানে বিদ্যুতের চাহিদার চেয়ে দ্বিগুণ সক্ষমতা থাকার পরও এসব ভাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত মাসে বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে ছয়টি রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাবের একটি সারসংক্ষেপ অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হয়। প্রস্তাবটি এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে অনুমোদিত হয়ে এখন ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের অপেক্ষায়।
বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মকর্তারা বলছেন, রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মেয়াদ বাড়ানো হলেও এগুলো ‘নো ইলেকট্রিসিটি নো পেমেন্ট’ নীতিতে চলবে।
ফলে এসব কেন্দ্রকে আগের চুক্তির মতো বিদ্যুৎ না দিলে কোনো ক্যাপাসিটি পেমেন্ট দিতে হবে না। যখন তাদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ নেওয়া হবে, তখন শুধু বিদ্যুতের পেমেন্ট দিতে হবে। বাড়তি কোনো চার্জ দেওয়ার প্রয়োজন হবে না।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) সদস্য (উৎপাদন) খন্দকার মোকাম্মেল হোসেন বলেন, ‘গ্রিডের ফ্রিকোয়েন্সি কন্ট্রোল করার জন্য এবং ১৩২ কেভির ট্রান্সমিশনের জন্য লোকাল জেনারেশনের প্রয়োজন হয়।
রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে আমরা লোকাল জেনারেশন বলি। মূলত গ্রিডের ফ্রিকোয়েন্সি ঠিক রাখতে এবং ১৩২ কেভির ট্রান্সমিশনের জন্য এসব রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। এখন কেন্দ্রগুলো নো ইলেকট্রিসিটি নো পেমেন্ট নীতিতে চলার কারণে যতটুকু বিদ্যুৎ নেওয়া হবে, ততটুকুই পেমেন্ট দেওয়া হবে। সাধারণত এসব কেন্দ্র সার্বক্ষণিক চালানো হয় না, খুবই জরুরি প্রয়োজনে চালানো হয়ে থাকে।’
ছয়টি রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে রয়েছে ওরিয়ন পাওয়ার মেঘনাঘাট লিমিটেডের মেঘনাঘাট ১০০ মেগাওয়াট, সামিট নারায়ণগঞ্জ পাওয়ার লিমিটেডের মদনগঞ্জ ১০২ মেগাওয়াট, ডাচ-বাংলা পাওয়ার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেডের সিদ্ধিরগঞ্জ ১০০ মেগাওয়াট, খুলনা পাওয়ার কম্পানি লিমিটেডের নোয়াপাড়া ৪০ মেগাওয়াট, খুলনা ১১৫ মেগাওয়াট ও একর্ন ইনফ্রাস্ট্রাকচারাল সার্ভিসেস লিমিটেডের জুলদা চট্টগ্রাম ১০০ মেগাওয়াট।
এর মধ্যে মেঘনাঘাট, সিদ্ধিরগঞ্জ, নোয়াপাড়া ও খুলনা কেন্দ্রের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ২৩ মার্চ।
মদনগঞ্জ কেন্দ্রের মেয়াদ গত ২২ মার্চ এবং জুলদা কেন্দ্রের মেয়াদ গত ১৬ এপ্রিল শেষ হয়েছে।
এ বিষয়ে বেসরকারি সংস্থা কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, ‘এসব তেলভিত্তিক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই, কারণ এসব কেন্দ্রে জ্বালানি খরচ স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী বেশি হয়। রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ খাত উন্নয়নে একটি কলঙ্কজনিত অধ্যায়, জনগণ এতে জ্বালানির অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। নো ইলেকট্রিসিটি নো পেমেন্ট নীতির বিষয়টিও কারিগরিভাবে গ্রহণযোগ্য কথা নয়।’
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বিদুৎ বিভাগ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে—বিদ্যুৎ উৎপাদনের মহাপরিকল্পনার আওতায় ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বর্তমানে ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৩০ হাজার ২২৭ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে।
বৃহৎ আকারের বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পর দেশের বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় কুইক রেন্টাল ও রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে ক্রমান্বয়ে অবসর দেওয়া হচ্ছে। ডিজেলভিত্তিক মোট এক হাজার ৪০৫ মেগাওয়াট সক্ষমতার ১২টি, ফার্নেস অয়েলভিত্তিক মোট ৩৮০ মেগাওয়াট সক্ষমতার চারটি, গ্যাসভিত্তিক মোট ৬১৩.৫০ মেগাওয়াট সক্ষমতার আটটিসহ সর্বমোট দুই হাজার ৩৯৮.৫০ মেগাওয়াট সক্ষমতার ২৪টি আইপিপি রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রকে অবসর দেওয়া হয়েছে। সিস্টেম ফ্রিকোয়েন্সি রক্ষা, রিলায়াবিলিটি বৃদ্ধি এবং ট্যারিফ তুলনামূলক কম হওয়ায় কিছু রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ ‘নো ইলেকট্রিসিটি নো পেমেন্ট’ ভিত্তিতে বাড়ানো হচ্ছে। এরই মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ ফার্নেস অয়েলভিত্তিক ৭৫৭ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৯টি এবং গ্যাসভিত্তিক ৫৫৮ মেগাওয়াট ক্ষমতার পাঁচটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
খুলনা গেজেট/এইচ